Saturday, July 25, 2020

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-৪

।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।

সত্যের সন্ধানে

পর্ব-৪

সত্যের সন্ধানে পর্ব-৩ পড়তে ক্লীক করুন এখানে

 পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর

একনজরেঃ আদম (আ.) থেকে শুরু করে নবী মুহাম্মদ (সা.) বংশধারা তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়।

প্রথম অংশঃ মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মোত্তালেব (শায়বা) ইবনে হাশেম (আমর) ইবনে আব্দ মানাফ (মুগীরা) ইবনে কুসাই (যায়েদ) ইবনে কেলাব ইবনে মাররা, ইবনে কাব ইবনে লোখাই ইবনে গালের ইবনে ফাহার। (এর উপাধী কুরাইশ বংশে পরিচিতি) ইবেন মালেক ইবনে নযর কয়েস ইবনে কেনানা ইবনে খোযায়মা ইবনে মাদরেকা (আমের) ইবনে ইনিয়াস ইবনে মোদার ইবনে মায়াদ ইবনে আদনান।

(ইবনে হিসাম  প্রথম খন্ড পৃ- ১২) তালকীহে মুফমে আহলোল আছর পৃ- ৫, ৬ রাহমাতুলি­ল আলামীন ২য় খন্ড পৃ- ১১, ১৪, ৫২) ।

দ্বিতীয় অংশঃ আদনান থেকে ওপরের দিকে, আদনান ইবনে আওফ, ইবনে হামিছা ইবনে ছালামান ইবনে আওছ ইবনে পোজ, ইবনে কামোয়াল ইবনে উবাহ ইবনে আওয়াম ইবনে নাশেদ ইবনে হাজা ইবনে বালদাস ইবনে ইয়াদলাফ ইবনে তারেখ ইবনে জাহেম ইবনে নাহেশ, ইবনে মাখি, ইবনে আযেয়, ইবনে আবকার, ইবনে ওবায়েদ, ইবনে আদদায়া, ইবনে হামদাদ, ইবনে সনবর, ইবনে ইয়াসরেবী, ইবনে ইয়াহাজান। ইবনে ইখালহান ইবনে আরউই ইবনে যাযশান ইবনে আইশার ইবনে আফনাদ ইবনে আইহাম ইবনে মাকছার ইবনে নাহেছ ইবনে জারাহ ইবনে সুমাই ইবনে মাখি ইবনে আওযা ইবনে আরাম ইবনে কায়দার ইবনে ইসমাইল ইবনে ইবরাহীম।

(আল্লামা মনুসপুরী দীর্ঘ গবেষণার পর এ অংশ ঐতিহাসিক কালাবী এবং সাপ এর বর্ণনা থেকে সংযোজিত করেছেন।)

তৃতীয় অংশঃ হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে ওপরের দিকে। ইবরাহীম ইবনে তারাহ (আযর) ইবনে নাহুব ইবনে ছারদা (মারুগ) ইবনে রাউ ইবনে ফালেজ ইবনে আবের ইবনে শালেখ ইবনে আরফাশাদ ইবনে সাম ইবনে নুহ (আ.) ইবনে লামেক ইবনে মাতুলাখ ইবনে আখনুখ (মতান্তরে হযরত ইদরীস (আ.) ইবনে ইয়াদ ইবনে মাহলায়েল ইবনে কায়নান ইবনে আনুশা ইবনে শীস ইবনে আদম (আ.)।

(ইবনে হিশাম ১ম খন্ড. পৃ- ২,, তালাকিহুল ফুহুম পৃ- ৬, রাহমাতুল্লিল আলামিন, ২য় খন্ড- ১৮)

পিতাঃ আব্দুল্লাহ

মাতাঃ আমিনা

জন্মঃ  ৫৭১ খৃঃ ২০ বা ২২শে এপ্রিল নবী (সা.) জন্ম। ৯ই রবিউল আউয়াল বার ছিল সোমবার তারিখে (খাযরায ১ম খন্ড পৃ- ৬২ রাহমাতুল্লিল আলামিন ১ম খন্ড) হযরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি প্রমাণ আছে তিনি বলেন, প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেয়া হয়েছে। (মুসলীম শরীফ ১ম খন্ড পৃ- ৩৬৮), (মুসনাদে আহমদ ৫ম খন্ড পৃ- ২৯৭, ২৯৯), বায়হাকী শরীফ ৪র্থ খন্ড পৃ- ২৮৬, ৩০০)।

৫৭১  - ৫৭৫ ঈসায়ী: বনি সাগোত্রের দুধ ‘‘মা’’ হালিমা (রা.) এর নিকট লালন পালন।

৪ বৎসর ৫৭৪ ঈসায়ী- সিনা চাক

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে হযরত জিব্রাইলে আমিন আগমন করলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য শিশুদের সাথে খেলা করছিলেন। জিবরাইল (আ.) তাঁকে শুইয়ে বুক চিরে দিল বের করলেন। তাঁরপর দিল থেকে একটি অংশ বের করে বললেন, এটা তোমার মধ্যে শয়তানের অংশ। এরপর দিল একটি তশতরীতে রেখে যম যম কুপের পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেন। তারপর যথাযথ স্থানে তা স্থাপন করলেন। অন্য শিশুরা ছুটে গিয়ে বিবি হালিমার নিকট বললো, মোহাম্মদ (সা.) কে মেরে ফেলা হয়েছে। পরিবারের লোকেরা ছুটে এলো। এসে দেখলো তিনি বিবর্ণমুখে বসে আছেন। (মুসলিম শরীফ, আল আসারা অধ্যায়, ১ম খন্ড পৃ- ৯২)

৫ বৎসর ৫৭৫ ঈসায়ীঃ

মোহাম্মদ (সা.) এর বয়স যখন পাঁচ (৫) বৎসর বয়সে বিবি হালিমা (রা.) মা আমিনার নিকট সপর্দ করেন।

৬ বৎসর ৫৭৬ ঈসায়ীঃ

মোহাম্মদ (সা.) এর মামার বাড়ী মদিনার উদ্দেশ্যে মা আমিনা নবী (সা.) কে রওনা হলেন এবং সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এবং মা আমিনা পথি মধ্যে রাস্তার মধ্যে ইন্তেকাল করেন।

৭ বৎসর ৫৭৭ ঈসায়ীঃ

মা আমিনা ইন্তেকালের সাথে সাথে এতিম মোহাম্মদ (সা.) লালন পালনের দায়িত্ব দাদা আব্দুল মুত্তালিব গ্রহণ করেন।

৮ বৎসর ৫৭৮ ইসায়ীঃ

দাদা আব্দুল মুত্তালিব ইন্তেকাল করেন।

৯ বৎসর ৫৭৯ ইসায়ীঃ

দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তেকালের সাথে সাথে চাচা আবু তালিব অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১২ বৎসর ৫৮২ ইসায়ীঃ

চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়ায় ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রথম ভ্রমন।

১২-১৩-১৪-১৫ বৎসরঃ

বিশ্বনবী (সা.) নির্দিষ্ট কোন কাজ ছিলো না, তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায় তিনি বকরি চরাতেন। (ইবনে হিসাম ১ম খন্ড পৃ- ৬২-১৬৬)  কয়েক কিরাত পারিশ্রামিকের বিনিময়ে মক্কায় বিভিন্ন লোকের বকরি ও তিনি চরাতেন। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, পৃ- ৩০১)

১৫ বৎসর ৫৮৫ ইসায়ীঃ নবী (সা.) ফুজ্জারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ।

১৬ বৎসর ৫৮৬ ইসায়ীঃ  সদস্য হিলফুল ফুজুলের।

১৭ বৎসর ৫৮৭ ইসায়ীঃ

হযরত খাদিজা (রা.) এর ব্যবসায়ী তদারকীতে মোহাম্মদ (সা.) নিযুক্তি।

২৪ বৎসর ৫৯৪ ইসায়ীঃ

মোহাম্মদ (সা.) দ্বিতীয় বার ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া ভ্রমণ।

২৫ বৎসর ৫৯৬ ইসায়ীঃ

কাবা সংস্কারে মোহাম্মদ (সা.) এর সাহায্য।

নবী (সা.) তাঁর প্রশংসনীয় কাজ। উম্মত সুন্দর চরিত্র এবং মাধুর্য মন্ডিত স্বভাবের কারণে স্বতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন সকলের চেয়ে অধিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। উন্নত চরিত্রের অধিকারী, সম্মানিত প্রতিবেশী, সর্বাধিক দুরদর্শিতাসম্পন্ন, সকলের চেয়ে অধিক সত্যবাদী। সকলের চেয়ে অগ্রসর এবং প্রশংসিত। অংগীকার পালনে ছিলেন সকলের অগ্রণী। আমানতদারীর ক্ষেত্রে ছিলেন অতুলনীয়। স্বজাতীর লোকেরা তার নাম রেখেছিল- আল আমিন। তার মধ্যে ছিলো প্রশংসনীয় গুণ, বৈশিষ্টের সমন্বয়। হযরত খাদিজা (রা.) সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি বিপদগ্রস্থদের বোঝা বহন করতেন। দুঃখী দরিদ্র লোকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতেন। মেহমানদারি করতেন এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে সাহায্য করতেন। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, পৃ- ৩)

৪০ বৎসর ৬১০ ইসায়ীঃ

এক বছর জুন মাসে মোহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার বুকে আনুষ্ঠানিকভাবে নবুয়তী দান করেন। প্রথম  ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত খাদিজা (রা.), দ্বিতীয় ইসলাম গ্রহণ করেন- হযরত আলি (রা.), তৃতীয় ইসলাম গ্রহণ করেন- হযরত আবু বকর (রা.) (রাহমাতুললিল আলামিন ১ম খন্ড পৃ- ৫০)

মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বয়স চল্লিশ বছরের কাছাকাছি হলো। তাঁর পরিচ্ছন্ন অমনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে স্বজাতীয়দের সাথে তার মানসিক ও চিন্তার দুরত্ব অনেক বেড়ে গেলো। এ অবস্থায় রাসুল (সা.) সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলেন, ছাতু এবং পানি নিয়ে মক্কা থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত হেরা পাহাড়ের গুহায় গিয়ে সময় কাঠাতে লাগলেন। এটি একটি ছোট গুহা। এর দৈর্ঘ্য চার গজ এবং প্রস্থ পৌনে দুই গজ। নিচ দিকে গভীর নয়। ছোট একটি পথের পাশে ওপরের প্রান্তরের সহুমন্ডলে এ গুহা অবস্থিত।

রাসুল (সা.) এই গুহায় যাওয়ার পর বিবি খাদিজা (রা.) ও সঙ্গে যেতেন এবং নিকটবর্তী কোন জায়গায় অবস্থান করতেন। রাসুল (সা.) পুরো রমযান মাস এই গুহায় কাঠাতেন। পথচারী মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং বাকী সময় আল্লাহর এবাদতে কাঠাতেন। জগতের দৃশ্যমান এবং পেছনের কার্যকর কুদরতের কারিশমা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। স্বজাতী লোকদের মূর্তি পুজা এবং নোংরা জীবন যাপন দেখে তিনি শান্তি পেতেন না। কিন্তু তাঁর সামনে স্পষ্ট কোন পথ পদ্ধতি অথবা প্রচলিত অবস্থার বিপরীত কোন কর্মসূচীও ছিলনা। যার ওপর জীবন কাটিয়ে তিনি মানসিক স্বস্তি ও শান্তি পেতেন। (ইবনে হিশাম, প্রথম খন্ড, পৃ- ২৩৪, ২৩৬) তাফসীর ফি যিললিল কোরআন- সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ পারা- ২৯, পৃ- ৬৩)

হেরা গুহায় নির্জনাবাসের তৃতীয় বছরে আল্লাহ তায়ালা জগতবাসীকে তাঁর করুণা ধারায় সিক্ত করতে চাইলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল (সা.) কে আনুষ্ঠানিকভাবে নবুয়াত দান করলেন। হযরত জিবরাইল (আ.) কয়েকটি আয়াত নিয়ে হাজির হলেন। (ফাতহুল বারী, ১ম খন্ড)।

৪০ বৎসর ৬১০ ইসায়ীঃ ১ম বৎসর থেকে ৩য় বৎসর-

১ম বৎসর:  নামাযের আদেশ- প্রথমে যা কিছু নাযিল হয়েছিল এর মধ্যে নামাযের আদেশও ছিলো। মোকাতেল ইবনে সোলায়মান বলেন- ইসলামের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা দুরাকাত নামাজ সকালে এবং দু-রাকাত নামায সবার জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘‘সকাল এবং সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর সেজদা করো।’’

৪৩ বৎসর ৬১৩ ইসায়ীঃ ৩য় বৎসর থেকে ৫ম বৎসর-

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বরেন ‘‘নিকট আত্মীয়দের আত্মার আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করো।’’

এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূল (সা.) আওয়াজ দিলেন সাধারণ ও বিশেষভাবে তিনি বললেন- হে কুরায়শ দল তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে বনি কার্য, লিনদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে মোহাম্মদের মেয়ে ফাতেমা নিজকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। আমি তোমাদরেকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষার ব্যাপারে অদিষ্ট হয়েছি। যেহেতু তোমাদের সাথে আমার আত্মীয়তা রয়েছে কাজেই এই সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে যথা সম্ভব সজাগ করবো (বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, পৃ- ৭০৬- ৭৪৩, মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড।

আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘‘তোমাকে যে আদশে দেয়া হয়েছে, সেটা খোলা খুলি তুমি ঘোষণা করো এবং মুশরেকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।’’ (সূরা আল ইস্রাঈল- ৯৪) ১৫, ৯৪

৪৫ বৎসর ৬১৫ ইসায়ীঃ  ৫ম আবিসিনিয়ায় হিজরত -

নবী (সা.) হঠাৎ করে মধুর স্বরে কোরআন তেলাওযাত শুরু করলে পৌত্রলিকরা মোহিত হয়ে পড়ে। তারা কোরআনের লালিত্যে ভাষার মাধুর্যে ছিলো মুগ্ধ ও বিমোহিত। কারো মনে সে সময় অন্য কোন চিন্তাই আসেনি, সবাই এমনই অভিভুত হয়ে পড়েছিল। সুরার শেষ দিক দিকের এই আয়াত তিনি তেলাওয়াত করেন। আল্লাহর জন্য সেজদা করো এবং তাঁর এবাদত করো। এই আয়াত পাঠ করার পরই নবী (সা.) সেজদায় চলে গেলেন। সাথে সাথে পৌত্রলিকরাও সেজদা করলো। সত্যের প্রভাব এবং মাধুর্য অমুসলীমদের অহংকার চূর্ণ করে দিয়েছিলো। তারা কেউই নিজের মধ্যে ছিল না। একারণে নিজের অজ্ঞাতেই সেজদায় নত হয়েছিল। (বুখারী শরীফে আব্বাস (রা.) এই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ)

৪৬ বৎসর ৬১৬ ইসায়ীঃ

৬ষ্ঠ- হযরত হামজা (রা.) ও হযরত ওমর (রা.), হযরত হামযা (রা.) ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল যে, আবু জেহেল একদিন সাফা পাহাড়ের কাছাকাছি জায়গায় রাসূল (সা.) কে গালমন্দ করে এবং তাকে কষ্ট দেয়। রাসূল (সা.) নীরব রইলেন, কোনো কথাই বললেন না। আবু জেহেল এর পর আল্লাহর রাসূলের মাথায় এক টুকরো পাথর নিক্ষেপ করলো। এতে মাথা কেটে রক্ত বের হলো। আবু জেহেল এর পর কাবার সামনে কোরায়েশদের মজলিসে গিয়ে বসলো, আব্দুল্লাহ ইবনে জুনায়েমের একজন দাসী প্রত্যক্ষ করলো, হযরত হামযা (রা.) শিকার করে ফিরছিলেন সেই দাসি হামযাকে সব ঘটনা শোনাল। হযরত হামযা ক্রোধে অধির হয়ে উঠলেন। তিনি ছিলেন কোরায়েশদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যুবক। তিনি দেরী না করে সামনে পা বাড়িয়ে বললেন- আবু জেহেল যেখানে পাব সেখানে রক্তাক্ত করব। এর পর তিনি সোজা কাবাঘরে প্রবেশ করে আবু জেহেলের সামনে গিয়ে বললেন ওরে গুহাদ্বার দিয়ে বায়ুত্যাগকারী তুই আমার ভাতিজাকে গালি দিচ্ছিস। অথচ আমিও প্রচারিত দ্বীনের অনুস্বারী। একথা বলে হাতের ধনুক দিয়ে আবু জেহেলের মাথায় এত জুড়ে আঘাত করলেন। যে মাথার মারাত্মক যখন হয়ে গেলে। (ইবনে হিশাম ১১, ১ম খন্ড পৃ-২৯১, ২৯২)

৬ষ্ট বৎসরঃ হযরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ:

নবী করিম (সা.) দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ ওমর ইবনে খাদবা এবং আবু জেহেলের মধ্যে তোমার কাছে যে ব্যক্তি বেশী পছন্দনীয় তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তার দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করো। আল্লাহ তায়ালা এ দোয়া কবুল করেন এবং হযরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। (তিরমিযি শরীফ, মানকের আবু হাফস ওমর ইবনে খাত্তাব ২য় খন্ড, পৃ- ২০৯)

৭ম বৎসর  ৬১৭ ঈসায়ীঃ

মক্কায় কাফিরদের অত্যাচারে মুসলমানগণ দ্বিতীয় বার হিজরত করতে বাধ্য থাকেন।

৮ম বৎসর থেকে ৯ম বৎসরঃ ৬১৮ ঈসায়ী - ৬১৯ ঈসায়ী

বনু হাশেম ও বনু মুত্তালেবদের সাতে চাচা আবু তালিবের বৈঠক। শাবে আবু তালেবে তিন বছর। দলিল ছিন্ন করার ঘটনা।

১০ম বৎসর ৬২০ ঈসায়ীঃ চাচা আবু তালিবের ইন্তেকাল:

আবু তালেবের অসুখ বেড়ে গেলো এবং এক সময় ইন্তেকাল করেন। আবু তালেব ঘাটিতে অবরোধ থেকে মুক্ত হওয়ার ছয় মাস পর নবুওয়াতের দশম বর্ষে রজম মাসে তার মৃত্যু হয়েছে। (বুখারী শরীফ, আবু তালেব কিস্মা ১ম খন্ড)

১০ম বৎসর ৬২০ ঈসায়ীঃ হযরত খাদিজা (রা.) এর ইন্তেকালঃ

খাজা আবু তালেবের ইন্তেকালের দু মাস অথবা শুধু তিন দিন পর উম্মুল মোমীনিন খাদিজাতুল কোবরা (রা.) ইহলোক ত্যাগ করেন নবুওয়াতের দশম বর্ষের রমজান মাসে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিলো। সেই সময় তার বয়স ছিলো ৬৫ বছর। রাসূল (সা.) বয়স সে সময় পঞ্চাশে বেড়েছিল। (তালিকিহুল ফুহুম)

১০ বৎসর ৬২০ ঈসায়ীঃ হযরত সাওদা (রা.) এর সাথে বিবাহ

সেই বছর অর্থাৎ নবুয়তের দশম বর্ষে শাওয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত সাওদা বিনতে জাময়া (রা.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরত সাওদা (রা.) নবুয়তের প্রথম দিকেই মুসলমান হয়েছিলেন। (রাহমাতুল্লিল আলামিন, ২য় খন্ড পৃ- ১৬৫)

১০ম বৎসর ৬২০ ঈসায়ী: রাসুলুল্লাহ(সা.) মক্কার বাহিরে তায়েফ গমন:

হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আল্লাহর রাসুলকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম ওহুদের দিনের চেয়ে মারাত্মক কোন দিন আপনারজীবনে এসে ছিলো কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার কওম থেকে আমি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিলো তায়েফের দিন। আমি আবদে ইয়ালিল ইবনে আবদে কুলাল সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার দাওয়াত গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ কষ্ট ও মানসিক বিপর্যস্থ অবস্থায় কারোন ছাআলেবে পৌঁছে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলাম। যেখানে মাথা তুলে দেখি মাথার ওপরে এক টুকরো মেঘ। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি সেখানে হযরত জিব্রাইল (আ.) তিনি আমাকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা যা বলেছে আল্লাহ তায়ালা সবই শুনেছেন। আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেস্তাদের পাঠানো হয়েছে। এরপর পাহাড়ের ফেরেস্তারা আমাকে আওয়াজ দিলেন, সালাম জানালেন। এবং হে আল্লাহর রাসূল (সা.) হাঁ একথা সত্যই আপনি যদি চান তবে আমরা ঐ জাতিকে পাহাড়ের মধ্যে পিষে দিবো। (বুখারী শরীফ, কেতাবে বাদায়াল খালক ১ম খন্ড পৃষ্ঠা- ৪৫৮)

১১তম বৎসর ৬২১ ঈসায়ী:

নবী করিম (সা.) নবুওয়াতের একাদশ বর্ষের শাওয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকার বয়স ছিলো তখন মাত্র ছয় বছর। হিজরতের আগের বছর শাওয়াল মাসে হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) স্বামীর গৃহে গমন করেন। সেই সময় হযরত আয়শা (রা.) বয়স ছিল ৯ বছর। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড পৃ- ৫৫৭)

১১তম বৎসর ৬২১ ঈসায়ীঃ নবী করিম (সা.) এর মেরাজ।

১১তম বৎসর ৬২১ ঈসায়ীঃ প্রথম বাইয়াতে আকাবা।

১২তম বৎসর ৬২২ ঈসায়ীঃ দ্বিতীয় বাইয়াতে আকাবা।

১৩তম বৎসর ৬২২ ঈসায়ীঃ 

১-১-১ হিজরীঃ মদিনার পথে

হযরত মোহাম্মদ (সা.) এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক ৯ (রা.) মদিনার পথে রওয়ানা হলেন। বিভিন্ন পথ সম্পর্কে অভিজ্ঞ আব্দুল্লাহ ইবনে আরিকত লাইছির সাথে আগেই চুক্তি হয়েছিলো যে, তিনি পারিশ্রামিকের বিনিময়ে এই দুজনকে মদিনায় পৌঁছে দেবেন কোরায়েশদের ধর্ম বিশ্বাসের ওপর থাকলেও ঐ লোকটি ছিল বিশ্বস্থ। এ কারণেতাকে সওয়ারী ও দেয়া হয়েছিলো তাকে বলা হয়েছিলো যে, তিন দিন পর সে দুটি সওয়ারীসহ দুর গুহার সামনে যাবে। সোমবার রাতে ১লা রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৬ই সেপ্টেম্বর ৬২২ ঈসায়ী সালের সোমবার রাতে আব্দুল্লাহ ইবনে আরিকত সওয়ারী নিয়ে এলেন। হযরত আবু বকর (রা.) এ সময় তাঁর দুটি উঠনি দেখিয়ে বললেন হে আল্লাহর রাসুল আপনি এ দুটির মধ্যে একটি গ্রহণ করুন। রাসুল (সা.) বললেন হ্যাঁ তবে মূল্যের বিনিময়ে। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, পৃ- ৫৫৩-৫৫৫)

১ম হিজরীঃ ৫৩ বৎসরঃ

১৩তম বৎসর ৬২২ ঈসায়ী:

সুরা- আল হাজ্ব ৪১ নং আয়াতঃ আমি যদি এদের (আমার) যমিনে (রাজনৈতিক) প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে (অবশ্যই) সব কাজের চূড়ান্ত পরিনাম কিছু আল্লাহ তায়ালাই এখতিয়ারভুক্ত।

নবী (সা.) ৬২২ ঈসায়ী সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর মোতাবেক পহেলা হীজরীর ১২ই রবিউল আওয়াল শুক্রবার বনু নাজ্জার গোত্রের হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) এর বাড়ীর সামনে এসে পৌছলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ইনশাআল্লাহ এটাই হবে আমাদের মনযিল এর পর তিনি হযরত আইয়ুব আনসারী (রা.) গৃহে স্থানান্তরিত হন।

মসজিদে নববী (সা.) : নবী (সা.)  মসজীদের অদুরে কয়েকটি কাঁবা ঘর তৈরি করলেন। এসব ঘরের দেয়াল খেজুর পাতা ও শাখা দিয়ে তৈরী। এসব ঘর ছিলো প্রিয় নবী (সা.) এর সহধর্মীনিদের বাসগৃহ। এগুলো তৈরী হওয়ার পর রাসুল (সা.) হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) এর ঘর থেকে এখানে এসে উঠলেন।  (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড পৃ- ৭১, ৫৫৫-৫৬০)

প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র ঘোষণাঃ রাসুল (সা.) মদিনায় প্রথম একটি নতুন ইসলামী সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে সমাজের বাহ্যিক রূপ আল্লাহর রাসুলকে কেন্দ্র করেই বিকশিত ও পরিস্ফুটিত হয়েছিল। তাঁর মোহনীয় ব্যক্তিত্বই ছিলো সকল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, নৈতিক চরিত্র গঠনের উপাদান, ভালোবাসা ভ্রাতৃত্বের নমুনা, এবাদত বন্দেগী ও আনুগত্য মুসলমানদের নব জীবন লাভের ধন্য করে তুলেছিলো।

দ্বিতীয় হিজরী - ৫৪ বৎসর ৬২৩ ঈসায়ী:

বদরের যুদ্ধ ১৭ রামাদ্বান: ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্তকর সামরীক অভিযান ইসলামী বাহীনির সংখ্যা ছিল ৩১৩জন অথবা ৩১৪।

সাবান মাসে জেহাদ ফরজ করা হয়।

রামাদ্বান মাস শুরু

আযান

যাকাত ফরজ

১ শাওয়ালে ঈদুল ফিতর

মসজিদে আকসার বদলে কাবা শরীফকে ক্বিবলা নির্ধারণ

হযরত ফাতিমা (রা.) বিবাহ আলী (রা.) এর সাথে।

তৃতীয় হিজরী - ৫৫ বৎসর ৬২৪ ঈসায়ীঃ

 (মদ) শরাব নিষিদ্ধ করা হয়

ওহুদের যুদ্ধ ৫ শাওয়াল

হযরত ওমর (রা.) এর বিধবা মেয়ে হযরত হাফসা (রা.) এর রাসূল (সা.) সাথে শাদী।

হযরত খাযনাব বিনতে খুজাইমাহ (রা.) এর রাসুলুল্লাহ (সা.) সাথে শাদী। 

  চতুর্থ হিজরী  ৬২৪ ঈসায়ীঃ

মেয়েদের জন্য পর্দার বিধান

পঞ্চম হিজরী: ৬২৬ ঈসায়ীঃ

যায়নাব বিনতে জাহসে (রা.) এর রাসূল (সা.) সাথে শাদী

জুয়াইাহবিনতে হারীস (রা.) এর রাসুল (সা.) এর সাথে শাদী

খন্দকের যুদ্ধ ও কাফেরদের শোচনীয় পরাজয়।

৬ষ্ঠ হিজরী ৫৭ বৎসর: ৬২৭ ঈসায়ী:

হোদাইবয়ার সন্ধি (চুক্তি)

দাওমাতুল জান্দানের দ্বিতীয় অভিযান।

প্রতিবেশী দেশ সমূহের রাষ্ট্র প্রধানের নিকট ইসলামের দাওয়াত নিয়ে রাসুল (সা.) এর দূত প্রেরণ।

খালিদ বিন ওয়ালীদের ইসলাম গ্রহণ।

সপ্তম হিজরী ৫৮ বৎসর : ৬২৮ ঈসায়ীঃ

মক্কা বিজয়। কাবা থোক মুর্তির অপসারণ গোটা আরবের ইসলাম গ্রহণ।

হোনায়নের যুদ্ধ।

উম্মে হাবীব (রা.) এর সাথে রাসুল (সা.) এর শাদী।

মাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই (রা.) এর সাথে রাসুল (সা.) এর শাদী।

মাইমনাহ বিনতেহারিম (রা.) এর সাথে রাসূল (সা.) এর শাদী।

মারীয়াকীবতিয়া (রা.) এর সাথে রাসুল (সা.) এর শাদী।

৮ম অষ্টম হীজরী - ৫৯ বৎসর ৬২৯৯ ঈসায়ী: 

মুতার যুদ্ধ।    সুদ নিষিদ্ধ।

৯ম হিজরী- ৬০ বৎসর:

৬৩০ ঈসায়ী : তাবুক যুদ্ধ

          মুসলিম অমুসলিমদের উপর কর যারি।

          হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর নেতৃত্বে মক্কার দ্বিতীয় ইসলামী যুদ্ধ।

১০ম হিজরী- ৬১ বৎসরঃ

৬৩১ ঈসায়ী, হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ছেলে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর মৃত্যু।

          বিদায় হজ্ব

১১তম হিজরী, ৬২ বৎসর:

৬৩২ ঈসায়ী: 

আল কুরাআন নাযিল সমাপ্তী।

মোহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।

দয়াময় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নেতা মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি সালাম বর্ষণ করুন। তাঁর সংগী সাথী ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের প্রতি এবং যারা একান্ত নিষ্টা সহকারে তাঁকে অনুসরণ করেছেন এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ও যাহারা এই পথের পথিক তাদের সবার প্রতি আল্লাহ তায়ালা শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন।

চলবে

 

লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা

ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান

সেক্রেটারি:

শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে- 

ইমাম ও খাতিব:

মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে

সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:

নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে

 প্রিন্সিপাল:

আর রাহমান একাডেমি ইউ কে

পরিচালক:

আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে

📞07476136772 📞 07476 961067

nrahmansky@googlemail.com

Arrahmaneducationtust@gmail.com

https://www.facebook.com/Imam.Nurur

https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/

https://www.youtube.com/user/nurur9



শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here