ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার
করলে দেখা যাবে একজন মুমিন আল্লাহ তা’আলার উপর ঈমান আনবে। কারোর মনে কষ্ট দিবে না। অন্যকে সহযোগিতা
করবে। বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। কঠিন মুসিবতে সবর করা। আল্লাহ তা’আল্লাহর উপর ভরসা করা। অন্য কর্মহীন মানুষকে কর্ম দিবে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যে বান্দাই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসবের কোনো
একটার উপর আমল করবে, কিয়ামতের দিন উক্ত আমল তাকে
হাত ধরে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবে। ( -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৭৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:" من أراد أن يتمثل له الناس
قياما فليتبوأ مقعده من النار
যে ব্যক্তি মানুষকে পুনরুত্থিত
করতে চায়, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে
তৈরি করে নেয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
,وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ
জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে
খোদাভীরুদের অদূরে।
هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ
তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও
স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
ভূমিকা (Introduction )
ঈমান আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সর্বোচ্চ নিআমত। তিনি
যাকে ইচ্ছা তাকে এই নিআমত দান করেন। যখনই কোন বান্দা আল্লাহ তা’আলার এই নিআমতের অধিকারী হন তখনই আল্লাহ তা’আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। প্রত্যেক মুমিনের অনেক
গুণাবলী অর্জন করা উচিত। অন্যদিকে তার অনেক অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
,فَلاَ تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ
وَلاَ أَوْلاَدُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ
অর্থ : সুতরাং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি
যেন আপনাকে বিস্মিত না করে। আল্লাহর ইচ্ছা হল এগুলো দ্বারা দুনিয়ার জীবনে তাদের আযাবে
নিপতিত রাখা এবং প্রাণবিয়োগ হওয়া কুফরী অবস্থায়। [ সুরা তাওবা ৯:৫৫ ]
আলোচ্য প্রবন্ধে একজন মুমিনের যে সকল প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ
গুণাবলী অর্জন করতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মু'মিন এর পরিচয়
(Introduction to the Believer)
মু'মিন আরবি শব্দ।
এটা আরবি ঈমান (الإيمان ) শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ বিশ্বাস আর
মুমিন অর্থ-বিশ্বাসী। সাধারণভাবে মুমিন দ্বারা অনুগত মুসলিমকে বুঝানো হয়। যে মুসলিম
অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ইসলামকে নিজের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ সব কর্মকাণ্ডে ধারণ করে। আল্লাহ
তা’আলার নিকট
নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে। আল্লাহ তা’আলা এবং তার
রাসুলের প্রতি প্রকট আনুগত্য প্রকাশ করে। আল্লাহ তা’আলা, তাঁর রাসুলের ও ফেরেস্তাদের উপর, কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আখিরাতের উপর ও তাকদীরের উপর
পূর্ণ বিশ্বাস করা।
من آمن بالله تعالى، وملائكته، وكتبه، وبرسله، وباليوم الآخر،
وبالقدر خيره وشرّه، وبكلّ ما ورد بشكل صحيحٍ في الشريعة الإسلامية،
والمؤمن لغةً هو اسم فاعل
للموصوف بالإيمان، وتجدر الإشارة إلى أنّ المؤمن يرجع في اللغة إلى ثلاثة أصول،
الأصل الأول
الأمن، وهو ما يقابل الخوف،
ووردت كلمة الأمن في القرآن الكريم بقول الله
تعالى: (الَّذينَ آمَنوا وَلَم يَلبِسوا إيمانَهُم بِظُلمٍ أُولـئِكَ لَهُمُ
الأَمنُ وَهُم مُهتَدونَ
والأصل الثاني
التصديق الذي يقابل التكذيب، ومثاله من القرآن قول اللهالمؤمن يُطلق المؤمن على
تعالى: (وَما أَنتَ بِمُؤمِنٍ لَنا وَلَو كُنّا صادِقينَ
الأصل الثالث
والعمل والاستعداد للحياة الآخرة، والحرص على حفظ الجوارح والحواس
والألسنة من الفواحش والمنكرات، ومن المعينات على ما سبق تذكّر الهدف الذي من أجله خُلق الإنسان،
والنهاية التي سيؤول إليها، وتذكّر تسجيل الملائكة لجميع الأعمال التي تصدر عن
العباد. تزكية وطهارة النفس والمال، فالنفس الإنسانية مليئة بالنقائص والعيوب التي
تكدّر صفوها
ইংরেজি
ভাষায় এর সংজ্ঞা এভাবে এসেছে
Mumin or Momin (Arabic: مؤمن, romanized: muʾmin;
feminine مؤمنة muʾmina) is
an Arabic Islamic term, frequently referenced in the Quran, meaning
"believer". It denotes a person who has complete submission to the
Will of Allah and has faith firmly established in his heart, i.e. a
"faithful Muslim". Also, it is used as a name and one of the names of
God in Islam.
মুমিনের জীবনে
অবশ্যই পালনীয়
(It
must be observed in the life of a believer)
ক) মুমিন সবার
প্রিয় হয়
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ইরশাদ করেন,
الْمُؤْمِنُ مَأْلَفٌ، وَلَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يَأْلَفُ وَلَا
يُؤْلَفُ.
অর্থ :মুমিন সবার আপন হয়, (সে অন্তরঙ্গ হয় এবং তার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া যায়।) যে অন্তরঙ্গ
হয় না এবং যার সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া যায় না, তার মাঝে কোনো
কল্যাণ নেই। -(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস- ৯১৯৮)
খ) ভালো আচরণ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقاً،
رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ.
কোনো মুমিন (স্বামী তার) মুমিন (স্ত্রী) কে যেন ঘৃণা না করে।
(তার) কোনো আচরণ খারাপ লাগলে অন্য আচরণ ভালো লাগবে। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস عَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ
فَاِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسٰۤی اَنْ تَكْرَهُوْا شَیْـًٔا وَّ یَجْعَلَ
اللهُ فِیْهِ خَیْرًا كَثِیْرًا.
অর্থ :আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন
করো। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এর যথেষ্ট
সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা কোনো জিনিসকে অপছন্দ
করছ অথচ আল্লাহ তাতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। -সূরা নিসা (৪) : ১৯
গ) সুস্থতার
জন্য সচেষ্ট থাকা
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيّ خَيْرٌ وَأَحَبّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ
الضّعِيفِ، وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ. اِحْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ
بِاللهِ وَلَا تَعْجِزْ. وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ، فَلَا تَقُلْ لَوْ أَنِّي
فَعَلْتُ، كَانَ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ: قَدّرَ اللهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ،
فَإِنّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشّيْطَان.
শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন অপেক্ষা
প্রিয় ও উত্তম, তবে উভয়ের মাঝে কল্যাণ রয়েছে, তোমাকে যা উপকৃত করবে সে বিষয়ে তুমি অনুরাগী হও। আর আল্লাহর
কাছে সাহায্য চাও। অক্ষম হয়ে যেয়ো না। কোনো কিছু যদি তোমাকে আক্রান্ত করে তুমি বলো
না যে, যদি আমি এটা করতাম তাহলে তো
এটা হতো (বা হতো না)। বরং বলো, আল্লাহ তকদীরে রেখেছেন। আল্লাহ
যা চান তাই করেন। কেননা ‘যদি’ শব্দটা শয়তানের কাজের সুযোগ খুলে দেয়। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৬৪)
ঘ) সবর করা
عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنّ أَمْرَهُ كُلّهُ لَهُ خَيْرٌ،
وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرّاءُ شَكَرَ،
فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرّاءُ صَبَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.
মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য
কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য
নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন
হয়, তখন সে ছবর করে, আর ছবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯
চ) কোমল হৃদয়
থাকা
مَثَلُ المُؤْمِنِ كَمَثَلِ خَامَةِ الزّرْعِ، يَفِيءُ وَرَقُهُ مِنْ
حَيْثُ أَتَتْهَا الرِّيحُ تُكَفِّئُهَا، فَإِذَا سَكَنَتِ اعْتَدَلَتْ،
وَكَذَلِكَ المُؤْمِنُ يُكَفّأُ بِالْبَلاَءِ، وَمَثَلُ الكَافِرِ كَمَثَلِ
الأَرْزَةِ صَمّاءَ مُعْتَدِلَةً حَتّى يَقْصِمَهَا الله إِذَا شَاءَ.
মুমিনের দৃষ্টান্ত হল নরম কোমল শস্যের মত, বাতাস যেদিকে দোলা দেয়, শস্যের পাতা
সেদিকেই দুলতে থাকে। বাতাস থেমে গেলে স্থির হয়ে যায়। মুমিনও তেমনি বিভিন্ন আপদ-বিপদ
দিয়ে তাকে দোলা দেওয়া হয়। আর কাফিরের দৃষ্টান্ত হল দেবদারু গাছের মত, দৃঢ় স্থির (বাতাস তাকে টলাতে পারে না) অবশেষে আল্লাহ যখন ইচ্ছা
করেন তাকে মূলোৎপাটন করে দেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস- ৭৪৬৬)
ছ) কুরআনের
উপর আমল করা
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
المُؤْمِنُ الّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ
كَالأُتْرُجّةِ، طَعْمُهَا طَيّبٌ، وَرِيحُهَا طَيّبٌ. وَالمُؤْمِنُ الّذِي لاَ
يَقْرَأُ القُرْآنَ وَيَعْمَلُ بِهِ كَالتّمْرَةِ، طَعْمُهَا طَيّبٌ، وَلاَ رِيحَ
لَهَا. وَمَثَلُ المُنَافِقِ الّذِي يَقْرَأُ القُرْآنَ كَالرّيْحَانَةِ، رِيحُهَا
طَيِّبٌ، وَطَعْمُهَا مُرّ. وَمَثَلُ المُنَافِقِ الّذِي لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ
كَالحَنْظَلَةِ، طَعْمُهَا مُرّ أَوْ خَبِيثٌ، وَرِيحُهَا مُرّ.
যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে এবং কুরআন অনুযায়ী
আমল করে সে হল কমলা লেবুর মত। এর স্বাদও উত্তম, ঘ্রাণও উত্তম।
আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, তবে কুরআন অনুযায়ী
আমল করে, সে হল খেজুরের মত। স্বাদ ভালো, তবে এর কোনো ঘ্রাণ নেই। আর মুনাফিক, যে কুরআন পাঠ করে, সে হল রায়হান
ঘাসের মত, এর ঘ্রাণ ভালো, তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে হল মাকাল ফলের মত, স্বাদও তিক্ত, আবার দুর্গন্ধযুক্ত। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৯৭)
জ) ভালো মানুষের
সংস্পর্শে থাকা
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
الْمُؤْمِنُ الّذِي يُخَالِطُ النّاسَ وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ
خَيْرٌ مِنَ الّذِي لَا يُخَالِطُ النّاسَ وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ.
অর্থ :যে মুমিন মানুষের সাথে মেশে এবং তাদের উৎপাত-উপদ্রব
সহ্য করে সে তার চেয়ে উত্তম যে মানুষের সাথে মেশে না এবং তাদের উপদ্রবও সহ্য করে না।
-(আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩৮৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫০৭)
ঝ ) মুমিনের সতর্ক জীবন
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عن أبي هريرة رَضِيَ الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: (لا
يُلْدَغُ المؤمنُ من جُحْرٍ مرتين)؛ رواه الشيخان .لَا يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ
جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرّتَيْنِ
মুমিন একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না। (-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৮)
ট) সরল সহজ
জীবন যাপন
الْمُؤْمِنُ غِرّ كَرِيمٌ، وَالْفَاجِرُ خَبّ لَئِيمٌ.حديث أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي
صلى الله عليه وسلم قال: (المؤمن غر كريم، والفاجر خب لئيم
মুমিন সহজ-সরল, উদার হয়ে থাকে। আর ফাজের (পাপিষ্ঠ) হয়ে থাকে ঠকবাজ, সংকীর্ণমনা। -আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৪১৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৬৪
আল্লাহ তা’আলা মুমিনের
জীবনে সুরা আল মুমিনুন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন।
ঠ) সালামের
প্রসার ঘটানো
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
, الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا
إِنَّنَا آَمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ - الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ
وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنْفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ
"খোদাভীরু লোকেরা বলে হে আমাদের
প্রতিপালক, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি তাই, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে নরকের শাস্তি থেকে রক্ষা
করুন।" (৩:১৬)
"তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, সেবানুগত বা নির্দেশমান্য কারী, দানশীল এবং ভোরবেলায় প্রার্থনাকারী।" (৩:১৭)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لَا تَدْخُلُونَ الْجَنّةَ حَتّى تُؤْمِنُوا، وَلَا تُؤْمِنُوا حَتّى
تَحَابّوا، أَوَلَا أَدُلّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟
أَفْشُوا السّلَامَ بَيْنَكُمْ.
তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের
কথা বলে দেব না, যে কাজ করলে তোমাদের পরস্পরের
মাঝে প্রীতি-ভালোবাসা হবে? তোমাদের পরস্পরের মাঝে সালামের
প্রসার করো।
ড) রাগ নিয়ন্ত্রণ
করা।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ
الْمُحْسِنِينَ
"তারাই সংযমী, যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের
ভালোবাসেন।" (৩:১৩৪)
মুমিনের গুণাবলী
(Attributes of the Believer)
১) বিনয়চিত্তে নামায কায়েম করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
নিশ্চিতভাবে
সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা।
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র; আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِنّ المُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي الصّلاَةِ، فَإِنّمَا يُنَاجِي
رَبّهُ، فَلاَ يَبْزُقَنّ بَيْنَ يَدَيْهِ وَلاَ عَنْ يَمِينِهِ، وَلَكِنْ عَنْ
يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ.
২) অনর্থক কথা পরিত্যাগ করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
অর্থ :যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত,
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
অর্থ :যারা দান কাজে সক্রিয় ;
৪) যারা তাদের লজ্জাস্থান হিফাযত করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
অর্থ :নিজেদের লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে, মুমিন যখন নামাযে থাকে তখন সে আসলে তার রবের সাথে ‘আলাপে’ থাকে। সুতরাং সে যেন তার সামনে ও ডান পাশে থুথু
না ফেলে...। (-সহীহ বুখারী, হাদীস ৪১৩)
إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ
فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদিদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবে না,
৫) সীমা অতিক্রম করতে পারে না।আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاء ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
কিন্তু যারা এই সীমাকে অতিক্রম করতে ইচ্ছা করে, তারা সীমালংঘনকারী ; -
৬)আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
অর্থ :এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার
থাকে।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
এবং নিজেদের নামায গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে,
أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে।
المؤمن مرآة لأخيه المؤمن
৭) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তা’আলা তার অভিভাবক।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ
إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ
يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ
هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থ :যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে
আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের
করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। [ সুরা বাকারা ২:২৫৭ ]
৮) কূতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ اللَّهَ لَا
يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍ كَفُورٍ
অর্থ: আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন এবং কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন।এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
৯) অন্যান্য ব্যক্তি তার থেকে নিরাপদ থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন.
قال النبي صلى الله عليه وآله وسلم: المؤمن من آمنه الناس على دمائهم
وأموالهم
মুমিন হ'ল সেই ব্যক্তি
যা লোকদের কাছ থেকে তাদের রক্ত এবং অর্থের জন্য নিরাপদ
১০) যার গোপন কাজ ভালো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,
قال النبي صلوات الله عليه وآله الكرام : ( من سرته حسنته وساءته
سيئته فهو مؤمن
His secret is good and bad, so he is a believer
১১)
قال صلوات الله عليه وآله الكرام : ( المؤمن مرآة أخيه المؤمن ينصحه
إذا غاب عنه ويميط عنه ما يكره إذا شهد ويوسع له في المجلس
The believer is a mirror of his brother, the believer
advises him if he is absent from him and exposes what he hates if he testifies
and expands him in the assembly
১২) শত্রুর প্রতি জুলুম করে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
*قوله عليه السلام : ( المؤمن
وقور عند الهزاهز ثبوت عند المكاره صبور عند البلاء شكور عند الرخاء قانع بما رزقه
الله لا يظلم الأعداء ولا يتحامل للأصدقاء، الناس منه في راحة، ونفسه في تعب
The believer is dignified when he is rocked. It is proven
when he is patient. He is patient when the calamity is due. Thanks to
prosperity, he is content with what God has provided him. He does not oppress
the enemies and does not tolerate friends
১৩) কারোর প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শন করে না ।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
المؤمن في الدنيا كالغريب لاينافس في عزها ولايجزع من ذلها للناس حال
وله حال الناس منه في راحة ونفسه ...
believer in this world is like a stranger who does not
compete in her power and does not panic from her humiliation to people if he
has a state of people in him in comfort
وقال عليه السلام: الْإِيمَانِ أَنْ تُؤثِرَ الصِّدْقَ حَيْثُ
يَضُرُّكَ عَلَى الْكَذِبِ حَيْثُ يَنْفَعُك وَأَلاَّ يَكُونَ فِي حَديِثِكَ
فَضْلٌ عَنْ عِلْمِكَ وَأَنْ تَتَّقِيَ
اللهَ فِي حَدِيثِ غَيْرِكَ
মুমিন ও মুসলিম এর পার্থক্য
(The difference between a believer and a
Muslim)
মুমিন মুসলিম শব্দের মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
মুসলিম শব্দটি এর অর্থ আত্ম সমর্পণ করা। যিনি
ইসলাম ধর্মকে নিজ ধর্ম বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করে এমন ব্যক্তিকে মুসলিম বলে।
অন্যদিকে মুমিন শব্দ ঈমান থেকে এসেছে। ইসলাম ধর্মকে নিজ ধর্ম বলে
বিশ্বাস ও স্বীকার করে। এর পাশাপাশি তা নিজের ভেতরে ও বাইরে ধারণ করে। এ ছাড়া কঠোরভাবে
এর নির্দেশাবলী মেনে চলে এমন ব্যক্তিকে মুমিন বলে। সে হিসেব বলা চলে, সব মুমিন মুসলিম, কিন্তু সব মুসলিম
মুমিন নয়।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - "لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا
تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ،
وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إخْوَانًا، الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا
يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَكْذِبُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى
هَاهُنَا، وَيُشِيرُ إلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنْ
الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ
حَرَامٌ: دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ". رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم: 2564].
মুমিনের পুরস্কার
(Reward of the Believer )
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَمِمَّا
رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং
নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে [ সুরা বাকারা
২:৩ ]
والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن
قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর
যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি
অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। [ সুরা বাকারা ২:৪ ]
أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُونَ
তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। [ সুরা বাকারা ২:৫ ]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
অর্থ :হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা
সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের
সাথে আছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ১৫৩)
সুসংবাদ শুধু মাত্র ধৈর্যশীলদের জন্য। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ
مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
القول
অর্থ : এবং নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরিক্ষা করব; এবং ওইসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান কর। যাদের ওপর কোন বিপদ
নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য
এবং অবশ্যই আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এদের ওপর তাদের রবের পক্ষ হতে শান্তি
ও করুনা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ১৫৫-৫৭)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ
أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
হাঁ, যে ব্যক্তি
নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার
কাছে পুরস্কার বয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। [ সুরা বাকারা ২:১১২
]
ঈমান পরিপন্থী
কিছু কর্মকান্ড
(Some acts contrary to faith)
কাউকে কটাক্ষ
করে না।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ
عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن
يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ
فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর
কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম
হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি
দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ
নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১১
]
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطّعّانِ، وَلَا اللّعّانِ، وَلَا الْفَاحِشِ،
وَلَا الْبَذِيءِ.
মুমিন কটুভাষী হতে পারে না, লা‘নতকারী হতে পারে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলতে
পারে না।
(আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩১২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭৭)
কারোর গিবত
করে না
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ
إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم
بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ﴾
হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা
ও অনুমান গোনাহ৷ দোষ অন্বেষণ করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে
ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷
ব্যভিচার করে
না
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
الزانية و الزاني , فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا مِائَۃَ
جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِہِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اِنۡ
کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡہَدۡ
عَذَابَہُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি
ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে।
আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনا
يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ
قَلْبَهُ! لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلَا تَتّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ؛
فَإِنّهُ مَنْ يَتّبِعْ عَوْرَاتِهِمْ يَتّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتّبِعِ
اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.
অর্থ :হে ঐ সকল লোক, যারা মুখে ঈমান এনেছে, অথচ ঈমান এখনো
তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো
না, তাদের অপ্রকাশিত দোষ-ত্রুটির
অনুসন্ধান করো না, কেননা যে ব্যক্তি তাদের দোষ
অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করবেন।
আর আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করবেন তাকে তো তিনি তার ঘরে লাঞ্ছিত করবেন। -(মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস ১৯৭৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৮০)
ব্যভিচার করে না
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَزْنِي الزّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ
الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ
مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا
أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ. وفي رواية: وَلَا يَغُلّ
أَحَدُكُمْ حِينَ يَغُلّ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، فَإِيّاكُمْ إِيّاكُمْ.
ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে মুমিন অবস্থায় করে না, মদ্যপ যখন মদপান করে মুমিন অবস্থায় করে না, চোর যখন চুরি করে মুমিন অবস্থায় করে না, ছিনতাইকারী যখন ছিনতাই করে, মানুষ তার দিকে (অসহায় দৃষ্টিতে) তাকিয়ে থাকে, সে মুমিন অবস্থায় করে না । অন্য বর্ণনায় আছে, দুর্নীতিগ্রস্ত যখন দুর্নীতি করে মুমিন অবস্থায় করে না। সুতরাং
তোমরা বেঁচে থাক, অবশ্যই বেঁচে থাক। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭
لا يكون هذا مؤمنا تاما ولا يكون له نور الإيمان.
‘এইসব অপরাধকারী যখন এই অপরাধগুলো করে তখন সে পূর্ণ
মুমিন থাকে না, তার ভেতরে ঈমানের নূর থাকে
না।’
বিষয় হল, হৃদয়ের যে বিশেষ
অবস্থা ও অনুভূতিকে ঈমান বলা হয়, ব্যক্তির মধ্যে তা যদি সপ্রাণ
ও জাগ্রত থাকে, হৃদয় যদি ঈমানের আলোয় আলোকিত
থাকে, তাহলে তার থেকে কোনো অবস্থাতেই
এমন অপরাধ হতে পারে না। এই ধরনের হীন ও নিকৃষ্ট অপরাধের দিকে মানুষ তখনই অগ্রসর হয়
যখন তার অন্তরে ঈমানের নূর থাকে না এবং সেই ঈমানী অনুভূতি বিলুপ্ত বা নিষ্প্রাণ হয়ে
যায়; গুনাহ ও পাপাচারের ক্ষেত্রে
যা মানুষের রক্ষাকবচ। (মাআরিফুল হাদীস, খ. ১, হিস্যা. ১, পৃ. ১০৩)
ইস্তেগফার করে
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ
كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ،
صُقِلَ قَلْبُهُ، وَإِنْ زَادَ زَادَتْ، حَتّى يَعْلُوَ قَلْبَهُ. ذَاكَ الرّانُ
الّذِي ذَكَرَ اللهُ عَزّ وَجَلّ فِي الْقُرْآنِ: كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى
قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ মুমিনের গুনাহ
হয়ে গেলে তাতে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। তখন সে যদি তাওবা করে, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং ইস্তিগফার করে তাহলে তার অন্তর পরিষ্কার
হয়ে যায়। কিন্তু যদি আরো গুনাহ করে, তাহলে কালো
দাগ বাড়তে থাকে, একসময় তার অন্তর কালো দাগে
ছেয়ে যায়। এটাই সেই জং, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ
করেছেন-
উপসংহার
(conclusion )
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে পছন্দ করে যে নিআমত দান করেছেন তা
হলো ঈমান। আর প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব হলো আল্লাহ তা’আলার নিআমতের শুকরিয়া আদায় করা। তিনি যে গুণাবলী অর্জন করার
নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে গুনান্বিত করা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ
لَهُ عَابِدُونَ
"আমরা আল্লাহর রঙ গ্রহণ করেছি।
আল্লাহর রঙ এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই
এবাদত করি।"(২:১৩৮)। আল্লাহ তা’আলা আমাদের
সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।
লেখক:
প্রফেসর ড.
সৈয়দ মাকসুদুর রহমান
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া
বাংলাদেশ।
0 coment rios:
You can comment here