Tuesday, July 7, 2020

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-১

।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।

পর্ব-১

﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ - مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ - إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ - اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ﴾

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। যিনি সমগ্র দুনিয়ার জাহানের মালিক। তিনি অসীম দয়ালু অত্যান্ত মেহেরবান। তিনি বিচার দিনের মালিক (হে আল্লাহ) আমরা তোমারই বন্দেগী করি এবং তোমারই সাহায্য চাই আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাও। তাদের পথে যাদের ওপর তুমি অনুগ্রহ করেছো। তাদের পথে নয়, যাদের ওপর তুমি অভিশাপ দিয়েছো এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। (সূরা আল ফাতিহা)

আমি সম্মানিত পাঠ ভূমিকায় বলে রাখতে চাই এই সংক্ষেপ লেখনিতে যে কথাগুলো আল কুরআন আল হাদীসের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। তা বর্তমান মুসলমানের চিত্রটি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি এবং বাস্তব জিবন অবস্থার কথা মনের শক্তি নিয়ে কলম ধরেছি। আর বাস্তব অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। এতে যে সকল দল বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছি তা কারো ব্যক্তিগত বা দল দোষ ত্রুটির সন্ধান করার জন্য নয়। কার নীতি সঠিক কার নীতি বেঠিক তা শুধু অল্প আকারে বিশ্লেষণ করেছি।  কিন্তু বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেনি, কেবলমাত্র আমাদের মুসলমানের বর্তমান করুন অবস্থা সম্পর্কে বলতে বা লিখতে বাধ্য হয়েছি।

তাই সকল মুসলমানদেরকে সত্য মিথ্যা যাচাই করে ভ্রান্ত মত পথ ছেড়ে। কুরআন হাদীসের আলোকে জীবন সমাজ গড়তে হবে। সত্যের পথে, নবীর পথে চলতে হবে। জীবন ব্যবস্থাকে আলোর পথে রঙ্গীন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ এই লিখনির ধারাগুলো হল-

() আল্লাহ তায়ালা

() মোহাম্মদ (সা.) 

() আল কুরআন

() আল হাদীস

() ইলমও

() ঈমান এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-১. তাওহীদ 

. ফিরিস্তা

. কিতাবী 

. রিসালাত 

. আখিরাত 

. কিয়ামত

. হাশর 

. মিজান - তাকদীর 

. মৃত্যু 

১০. পূণরায় জীবন

১১. জান্নাত

১২. জাহান্নাম

১৩. হুর 

১৪. জাহান্নাম

(ছ) পৃথিবী এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

১. আবহাওয়া 

২. জ্যোতি 

(জ) মানব জীবন এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

১. জ্বিন

২. শয়তান 

(ঝ) ইবাদত এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. সালাত

. যাকাত 

. হজ্জ

. সাওম  

(ঞ) মুমিন

(ট) কাফের

(ঠ) মুনাফেক এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ

(ঢ) শিরক

(ন) শিরক

(ণ) বিদআত  এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. এক দল

. মনগড়া পথ

. অন্ধ পথ

. তন্ত্র মন্ত্রের পথ

(ত) চক্রান্তের জালে মুসলমান- এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. কুরআন বাস্তবায়নকারী মুসলিম

. নাম মাত্র মুসলমান

. লেবাসদারী মুসলমান

. শুনে শুনে মুসলমান

(থ) আল্লাহর আইন এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. রাজনীতি

. আল্লাহর নীতি

. নবীগণের রাজনীতি

. ইসলামী রাষ্টনীতি

. ইসলামী রাজনীতি

. শাসকদের রাজনীতি

. আলীদের রাজনীতি

. পাপীদের রাজনীতি

. প্রতারকদের নীতি

(দ) শিক্ষা এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. ইসলামী শিক্ষা নীতি

. বিভক্ত শিক্ষানীতি

. সুবিধাবাদীদের শিক্ষানীতি

. অর্থের কবলে শিক্ষা নীতি 

(ধ)আল-ইসলাম এ বিষয়ে যা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি তা হলো-

. যন্ত্রের কবলে ইসলাম

. ছাপার কাগজের কবলে ইসলাম

. ধর্ম নিরপেক্ষতার কবলে ইসলাম

. মুনাফিকদের কবলে ইসলাম

. হিংসার কবলে ইসলাম   

সবগুলো বিষয়ের বিস্তারিত দালিলীক আলোচনা শেষে একটা পরিশিষ্টে মূল উপসংহার বা শিক্ষা নিয়ে প্রানবন্ত আলোচনার চেষ্টা করেছি।

(ক) আল্লাহ তায়ালা

মহান আল্লাহ আসমান, যমীন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবই সৃষ্টি করেছেন- যেমন আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালা উল্লেখ করেছেন।

সুরা আনআম ৭৩নং আয়াতঃ

﴿وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَيَوْمَ يَقُولُ كُنْ فَيَكُونُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ﴾

 তিনি (আল্লাহ) সঠিকভাবে আকাশ মন্ডলী পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি কোন কিছু সম্পর্কে বলেন হয়ে যাও তখনই তা হয়ে যায়। তার কথাই সত্য এবং সর্বত্র তাঁরই রাজত্ব চলছে।

সুরা সাজদাহ ৪নং আয়াতঃ

﴿اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ﴾

আল্লাহ তিনিই, যিনি আকাশ মন্ডল যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।

সুরা আল ফাতিহা নং আয়াতঃ

﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি সারা বিশ্বের সব কিছু লালন-পালন করেন।

সুরা দোখান- ৭নং আয়াতঃ

﴿رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا إِنْ كُنْتُمْ مُوقِنِينَ﴾

তিনি আকাশ মন্ডল যমীন  এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে প্রতিপালন করেন যদি তোমরা দৃঢ় (বিশ্বাসী) বিশ্বাসকারী হও।

সুরা আলহাজ্জ- ৩৪ নং আয়াতঃ

﴿فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ﴾

তোমাদের ইলাহ  হচ্ছেন মাত্র একজন। তোমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর।

সুরা আল আরাফ- ৬৫ নং আয়াতঃ

﴿وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ﴾

তিনি (নবী) বললেন- হে তোমার জাতী, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ইলাহ নেই।

সুরা হুদ ৬নং আয়াতঃ

﴿وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ﴾

যমীনে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার রিযিকের ব্যবস্থা আল্লাহর উপর নয় এবং যার স্থায়ী অস্থায়ী অবস্থান সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। এসব কিছুই এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

সুরা আন আম- ৫৯ নং আয়াতঃ

﴿وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ﴾

গায়েবের সব চাবিকাঠি তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানেনা। স্থল জল ভাগে যা কিছু আছে তার সবই তিনি জানেন। বৃক্ষচ্যুত একটি পাতা এমন নেই। যার সম্পর্কে আল্লাহ জানে না। যমিনের অন্ধকারাচ্ছন্ন পর্দার অন্তরালে একটি দানাও এমন নেই, যে সম্পর্কে তিনি জানেন। আর্দ্র শুষ্ক প্রতিটি জিনিস এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

সূরা- আল ইমরান- ২৬নং আয়াতঃ

﴿قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾

বলুন! হে সার্বভৌম মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করো এবং যার কাছ থেকে ইহা রাজ্য কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল।

সুরা আল বাকারা- ২৫৫ নং আয়াতঃ

﴿وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ﴾

তাঁর সম্রাজ্য সমগ্র আকাশ মন্ডল ওপৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে।

সুরা আল ইমরান ৮৩ নং আয়াতঃ

﴿أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ﴾

তারা (মানুষ) কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীন (জীবন বিধান) চায়? অথবা আকাশ পৃথবীতে যা কিছু আছে সবই ইচ্ছা অনিচ্ছায় হোক তাঁর বিধানের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে এবং সবাইকে তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে।

সুরা আল রাফ ৫৪ নং আয়াতঃ

﴿أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾

সাবধান! সৃষ্টি যার, নির্দেশ করার অধিকার তাঁর।

সুরা আল বুরুজ-১৬ নং আয়াতঃ

﴿فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ﴾

আল্লাহ যা ইচ্ছা তা সম্পন্ন করেই ছাড়েন।

সুরা আল ফাতিহা  নং আয়াতঃ  

﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ﴾

তিনি প্রতিফল দিবসের মালিক।

সুরা আল বাকারা ১৪২ নং আয়াতঃ

﴿سَيَقُولُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَنْ قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا قُلْ لِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ﴾

হে নবী, বলে দিন, পূর্ব পশ্চিমের  সবই মহান আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করেন সঠিক পথের দিকে।

সুরা আল বাকারা ২৫৫ নং আয়াতঃ

﴿اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ﴾

আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী। তন্ত্রতা নিদ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

সুরা আল হাদীদ ৩নং আয়াতঃ

﴿هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآَخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ﴾

তিনি সকল সৃষ্টির প্রথম আর সবকিছু বিলীন হওয়ার পরও তিনি থাকবেন এবং তিনিই প্রকাশ্য শুপ্ত আর তিনি সবকিছু জানেন।

সুরা নাহাল ১০৬নং আয়াতঃ

﴿مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾

যারা মনের সন্তোষ সহকারে কুফরী গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের উপর আল্লাহর গযব। এসব লোকদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

সুরা আল কিয়ামাহ ২২ নং আয়াতঃ  

﴿وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ﴾

সেদিন (কিয়ামতের দিন) কিছু সংখ্যক চেহারা হাসোজ্জল হবে, নিজেদের রবের প্রতি দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখবে।

সুরা আল বাকরা, ১৮৬ নং আয়াতঃ

﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ﴾

হে নবী! আমার বান্দাহ যদি তোমার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তবে তাদের বলে দাও যে, আমি তাদের অতি নিকটে। আমাকে যে তাকে, আমি তার ডাক শুনি এবং তার উত্তর দিয়ে থাকি। কাজেই আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের কর্তব্য। এসব কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও: হয় তারা প্রকৃত সত্য পথের সন্ধান পাবে।

সুরা আল রাফ ১৮০ নং আয়াতঃ

﴿وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾

আল্লাহ ভাল ভাল নামের অধিকারী। তাঁকে ভাল ভাল নামেই ডাক। সে লোকদের কথা ছেড়ে দাও যারা তাঁর নামকরণে পিথগামী হয়।

আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ:

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। একশো থেকে একটি কম। যে এই নামগুলি মনে রাখবে, বুঝবে এবং উপলব্ধি করবে, সে জান্নাহতে যাবে। [বুখারি : ৮৯৪, মুসলিম : ৬৪৭৬, তিরমজি : ৫১৩৮]।

মহান প্রভুর সর্বশ্রেষ্ঠ নামআল্লাহ। তার আরও ৯৮টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে কোনো গুণবাচক নাম দিয়েই আল্লাহর কথা বলা হোক না কেন, সব নাম দ্বারা আল্লাহকেই ইঙ্গিত করা হয়।

আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ্, যিনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান জগতের সব ব্যাপারে যিনি সম্যক অবগত। তিনি সবচাইতে দয়ালু, সবচাইতে ক্ষমাশীল। তিনিই আল্লাহ্, যিনি সবকিছুর অধিপতি, পুতঃপবিত্র, সবকিছুর ঊর্ধ্বে, নিরাপত্তা প্রদানকারী, অভিভাবক, সর্বশক্তিমান, গৌরবান্বিত, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, তারা তাঁর সাথে যা কিছু শরিক করে সেগুলা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। তিনি আল্লাহ্, যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি শুরু করেছেন, সবকিছু তৈরি করেছেন, আকৃতি দিয়েছেন। সবচাইতে ভালো নামগুলো তাঁর জন্যই প্রযোজ্য। মহাকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁর মহত্ত্ব বর্ণনা করে, এবং তিনিই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ।

আল্লাহর ৯৯টি নাম অর্থসহ তুলে ধরা হলো।

১. الله (আল্লাহ)। অর্থ : আল্লাহ, প্রভু।

২. الرَّحْمَنُ (আর-রহমান)। অর্থ : সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়।

৩. الرَّحِيمُ (আর-রহিম)। অর্থ : সবচাইতে ক্ষমাশীল।

৪. الْمَلِكُ (আল-মালিক)। অর্থ : অধিপতি।

৫. الْقُدُّوسُ (আল-ক্বুদ্দুস)। অর্থ : পূতপবিত্র, নিখুঁত।

৬. السَّلَامُ (আস-সালাম)। অর্থ : শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা।

৭. الْمُؤْمِنُ (আল-মুমিন)। অর্থ : জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী।

৮. الْمُهَيْمِنُ (আল-মুহাইমিন)। অর্থ : অভিভাবক, প্রতিপালক।

৯. الْعَزِيزُ (আল-আযিয)। অর্থ : সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত।

১০. الْجَبَّارُ (আল-জাব্বার)। অর্থ : দুর্নিবার, সুউচ্চ, মহিমান্বিত।

১১. الْخَالِقُ (আল-খলিক)। অর্থ : সৃষ্টিকর্তা।

১২. الْبَارِئُ (আল-বারি)। অর্থ : বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, পরিকল্পনাকারী।

১৩. الْمُصَوِّرُ (আল-মুসাউয়ির)। অর্থ : আকৃতিদানকারী।

১৪. الْغَفَّارُ (আল-গাফফার)। অর্থ: পুনঃমার্জনাকারী।

১৫. الْقَهَّارُ (আল-কাহ্হার)। অর্থ : দমনকারী।

১৬. الْوَهَّابُ (আল-ওয়াহ্হাব)। অর্থ : স্থাপনকারী।

১৭. الرَّزَّاقُ (আর-রজ্জাক।। অর্থ : রিজিকদাতা।

১৮. الْفَتَّاحُ (আল-ফাত্তাহ)। অর্থ : প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী।

১৯. الْعَلِيمُ (আল-আলীম)। অর্থ : সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী।

২০. الْقَابِضُ (আল-কাবিদ)। অর্থ : নিয়ন্ত্রণকারী, সরলপথ প্রদর্শনকারী।

২১. الْبَاسِطُ (আল-বাসিত)। অর্থ : প্রসারণকারী।

২২. الْخَافِضُ (আল-খাফিদ)। অর্থ : (অবিশ্বাসীদের) অপমানকারী।

২৩. الرَّافِعُ (আর-রাফি)। অর্থ : উন্নীতকারী।

২৪. الْمُعِزُّ (আল-মুয়িজ্জিব)। অর্থ : সম্মানপ্রদানকারী।

২৫. الْمُذِلُّ (আল-মুঝিল্ল)। অর্থ : সম্মানহরণকারী।

২৬. السَّمِيعُ (আস-সামীয়ু)। অর্থ : সর্বশ্রোতা।

২৭. الْبَصِيرُ (আল-বাসির)। অর্থ : সর্বদ্রষ্টা।

২৮. الْحَكَمُ (আল-হাকাম)। অর্থ : বিচারপতি।

২৯. الْعَدْلُ (আল-আদল)। অর্থ : নিখুঁত।

৩০. اللَّطِيفُ (আল-লাতিফ)। অর্থ : অমায়িক।

৩১. الْخَبِيرُ (আল-খবির)। অর্থ : সম্যক অবগত।

৩২. الْحَلِيمُ (আল-হালিম)। অর্থ : ধৈর্যবান, প্রশ্রয়দাতা।

৩৩. الْعَظِيمُ (আল-আযিম)। অর্থ : সুমহান।

৩৪. الْغَفُورُ (আল-গফুর)। অর্থ : মার্জনাকারী।

৩৫. الشَّكُورُ (আশ-শাকুর)। অর্থ : সুবিবেচক।

৩৬. الْعَلِيُّ (আল-আলিই)। অর্থ : মহীয়ান।

৩৭. الْكَبِيرُ (আল-কাবীর)। অর্থ : সুমহান।

৩৮. الْحَفِيظُ (আল-হাফিজ)। অর্থ : সংরক্ষণকারী।

৩৯. الْمُقِيتُ (আল-মুকিত)। অর্থ : লালনপালনকারী।

৪০. الْحَسِيبُ (আল-হাসিব)। অর্থ : মীমাংসাকারী।

৪১. الْجَلِيلُ (আল-জালিল)। অর্থ : গৌরবান্বিত।

৪২. الْكَرِيمُ (আল-কারিম)। অর্থ : উদার, অকৃপণ।

৪৩. الرَّقِيبُ (আর-রকিব)। অর্থ : সদা জাগ্রত, অতন্দ্র পর্যবেক্ষণকারী।

৪৪. الْمُجِيبُ (আল-মুজীব)। অর্থ : সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা।

৪৫. الْوَاسِعُ (আল-ওয়াসি)। অর্থ : অসীম, সর্বত্র বিরাজমান।

৪৬. الْحَكِيمُ (আল-হাকিম)। অর্থ : সুবিজ্ঞ, সুদক্ষ।

৪৭. الْوَدُودُ (আল-ওয়াদুদ)। অর্থ : স্নেহশীল।

৪৮. الْمَجِيدُ (আল-মাজিদ)। অর্থ : মহিমান্বিত।

৪৯. الْبَاعِثُ (আল-বাঈস)। অর্থ : পুনরুত্থানকারী।

৫০. الشَّهِيدُ (আশ-শাহীদ)। অর্থ : সাক্ষ্যদানকারী।

৫১. الْحَقُّ (আল-হক)। অর্থ : প্রকৃত সত্য।

৫২. الْوَكِيلُ (আল-ওয়াকিল)। অর্থ : সহায় প্রদানকারী, স্থাভাজন, উকিল।

৫৩. الْقَوِيُّ (আল-কুওয়াত)। অর্থ : ক্ষমতাশালী।

৫৪. الْمَتِينُ (আল মাতীন সুদৃঢ়।

৫৫. الْوَلِيُّ (আল-ওয়ালিই)। অর্থ : বন্ধু, সাহায্যকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী।

৫৬. الْحَمِيدُ (আল-হামিদ)। অর্থ : সকল প্রশংসার দাবীদার, প্রশংসনীয়।

৫৭. الْمُحْصِي (আল-মুহসি)। অর্থ : বর্ণনাকারী, গণনাকারী।

৫৮. الْمُبْدِئُ (আল-মুব্দি)। অর্থ : অগ্রণী, প্রথম প্রবর্তক, সৃজনকর্তা।

৫৯. الْمُعِيدُ (আল-মুঈদ)। অর্থ : পুন:প্রতিষ্ঠাকারী, পুনরূদ্ধারকারি।

৬০. الْمُحْيِي (আল-মুহিই)। অর্থ : জীবনদানকারী।

৬১. الْمُمِيتُ (আল-মুমীত)। অর্থ : ধ্বংসকারী, মৃত্যু আনয়নকারী।

৬২. الْحَيُّ (আল-হাইই)। অর্থ : চিরঞ্জীব, যার কোনো শেষ নাই।

৬৩. الْقَيُّومُ (আল-কাইয়ুম)। অর্থ : অভিভাবক, জীবিকানির্বাহ প্রদানকারী।

৬৪. الْوَاجِدُ (আল-ওয়াজিদ)। অর্থ : পর্যবেক্ষক, চিরস্থায়ী।

৬৫. الْمَاجِدُ (আল-মাজিদ)। অর্থ : সুপ্রসিদ্ধ।

৬৬. الْوَاحِدُ (আল-ওয়াহিদ) ।অর্থ : এক, অনন্য, অদ্বিতীয়।

৬৭. الصَّمَدُ (আস-সমাদ)। অর্থ : চিরন্তন, অবিনশ্বর, নির্বিকল্প, সুনিপুণ, স্বয়ং সম্পূর্ণ।

৬৮. الْقَادِرُ (আল-কাদির)। অর্থ : সর্বশক্তিমান।

৬৯. الْمُقْتَدِرُ (আল-মুকতাদির)। অর্থ : প্রভাবশালী, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী।

৭০. الْمُقَدِّمُ (আল-মুকাদ্দিম)। অর্থ : অগ্রগতিতে সহায়তা প্রদানকারী।

৭১. الْمُؤَخِّرُ (আল-মুআক্ষির)। অর্থ : বিলম্বকারী।

৭২. الْأَوَّلُ (আল-আউয়াল)। অর্থ : সর্বপ্রথম, যার কোনো শুরু নাই।

৭৩ الْآخِرُ (আল-আখির)। অর্থ : সর্বশেষ, যার কোনো শেষ নাই।

৭৪. الظَّاهِرُ (আজ-জাহির)। অর্থ : সুস্পষ্ট, সুপ্রতীয়মান।

৭৫. الْبَاطِنُ (আল-বাতিন)। অর্থ : লুকায়িত, অস্পষ্ট (যা কিছু দেখা যায় না)।
৭৬.
الْوَالِيَ (আল-ওয়ালি)। অর্থ : সুরক্ষাকারী বন্ধু, অনুগ্রহকারী, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রভু।

৭৭. الْمُتَعَالِي (আল-মুতাআলী)। অর্থ : সর্বোচ্চ মহিমান্বিত, সুউচ্চ

৭৮. الْبَرُّ (আল-র্বার)। অর্থ : কল্যাণকারী।

৭৯. التَّوَّابُ (আত-তাওয়াব)। অর্থ : বিনম্র, সর্বদা আবর্তিতমান।

৮০. الْمُنْتَقِمُ (আল-মুন্তাকিম)। অর্থ : প্রতিফল প্রদানকারী।

৮১. الْعَفُوُّ (আল-আফুউ)। অর্থ : শাস্তি মউকুফকারী, গুনাহ ক্ষমাকারী।

৮২. الرَّءُوفُ (আর-রওফ)। অর্থ : সদয়, সমবেদনা প্রকাশকারী।

৮৩. مَالِكُ الْمُلْكِ (মালিকুল মুলক)। অর্থ : সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

৮৪. ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ (জুল-জালালি ওয়াল ইকরাম)। অর্থ : মর্যাদা ও ঔদার্যের প্রভু।
৮৫.
الْمُقْسِطُ (আল-মুকসিত)। ন্যায়পরায়ণ, প্রতিদানকারী।

৮৬. الْجَامِعُ (আল-জামি)। অর্থ : একত্র আনয়নকারী, ঐক্য সাধনকারী।

৮৭. الْغَنِيُّ (আল-গানিই)। অর্থ : ঐশ্বর্যবান, স্বতন্ত্র।

৮৮. الْمُغْنِي (আল-মুগনি)। অর্থ : সমৃদ্ধকারী, উদ্ধারকারী।

৮৯. الْمَانِعُ (আল-মানি)। অর্থ : প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা।

৯০. الضَّارُّ (আদ-র্দারু)। অর্থ : যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী।

৯১. النَّافِعُ (আন-নাফি)। অর্থ : অনুগ্রাহক, উপকর্তা, হিতকারী।

৯২. النُّورُ (আন-নূর)। অর্থ : আলোক।

৯৩. الْهَادِي (আল-হাদী)। অর্থ : পথপ্রদর্শক।

৯৪. الْبَدِيعُ (আল-বাদী)। অর্থ : অতুলনীয়, অনিধগম্য।

৯৫. الْبَاقِي (আল-বাকী)। অর্থ : অপরিবর্তনীয়, অনন্ত, অসীম, অক্ষয়।

৯৬. الْوَارِثُ (আল-ওয়ারিস)। অর্থ : সবকিছুর উত্তরাধিকারী।

৯৭. الرَّشِيدُ (আর-রশিদ)। অর্থ : সঠিক পথের নির্দেশক।

৯৮. الصَّبُورُ (আস-সবুর)। অর্থ : ধৈর্যশীল।

৯৯. الْمُتَكَبِّرُ (আল-মুতাকাব্বির)। অর্থ : সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত।

লবে

লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা

ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান

সেক্রেটারি:

শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে- 

ইমাম ও খাতিব:

মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে

সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:

নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে

 প্রিন্সিপাল:

আর রাহমান একাডেমি ইউ কে

পরিচালক:

আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে

📞07476136772 📞 07476 961067

nrahmansky@googlemail.com

Arrahmaneducationtust@gmail.com

https://www.facebook.com/Imam.Nurur

https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/

https://www.youtube.com/user/nurur9



শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here