।। ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)।।
বিশ্ব এলার্জি সংস্থা এলার্জি বিষয়ে সচেতনতা আরও
বাড়াতে এবছর ২৮ শে জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ব এলার্জি সপ্তাহ ঘোষণা করেছে। সে
অনুযায়ী এখন চলছে বিশ্ব এলার্জি সপ্তাহ। এবছরের
এলার্জি সপ্তাহের স্লোগান হচ্ছে -
"
Allergy care does not stop with COVID-19."
যদিও অতিসংবেদনশীলতা এলার্জির মূল কারণ কিন্তু এলার্জি ব্যক্তিবিশেষে শরীরের বিভিন্ন অংগে ভিন্ন ভিন্ন
রুপে হয়ে থাকে। তাই এখানে শুধু নাকের এলার্জি জনিত সমস্যা এলার্জিক রাইনাইটিস নিয়ে
সহজ ভাবে কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
এলার্জি সর্দি নাকের একটি সমস্যা যা নাসিকা ঝিল্লীর
প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে। যেহেতু এর ব্যাপ্তি চারদিকে তাই বলা যায় এটি বিশ্বময় স্বাস্থ্য
সমস্যা। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০-২৫ ভাগ জনসমষ্টি নাকের এ রোগের শিকার।
যদিও নাকের এলার্জি সর্দি কোন মারাত্মক রোগ নয়, তবে এ রোগের কারণে দৈনন্দিন
জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়।
যেমন: শিশুদের
স্কুলের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়,আবার অন্যদিকে পেশাজীবীদের
কর্মস্থলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মাঝে মাঝে এলার্জি জনিত সর্দি ও হাঁচি জীবনকে করে
তোলে দুর্বিষহ। কখনও কখনও কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে এই রোগের কারণে হঠাৎ নাকে অসহ্য চুলকানি ও একনাগাড়ে কয়েকটি হাঁচি আপনাকে ফেলে দিতে
পারে বিব্রতকর অবস্থায়।
নাকের এলার্জির
কারণ :
মাইট (এক ধরনের কীট) যা পুরাতন বইপত্র বা পত্রিকায়
থাকে, বাসার পুরাতন ধুলা (ঘুনে ধরা); কসমেটিকস, ফুলের রেনু
ও পশু পাখির লোমে এলার্জেন (যা এলার্জী সৃষ্টি করে) থাকে। এছাড়াও গাড়ি থেকে নির্গত
কালো ধোয়া, সিগারেটের ধোয়া, শিল্পকারখানার বিভিন্ন উপাদানও
এলার্জির কারণ হতে পারে। কিছু খাবার যেমন: ইঁলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ী, বেগুন, হাঁসের ডিম
কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জির কারণ হতে পারে। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালি
বেশি থাকে, তাই এই সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
বাসস্থান পরিবর্তন করে নতুন পরিবেশে গেলেও এলার্জিক
রাইনাইটিস হানা দিতে পারে। শতকরা ১২ ভাগ শহরবাসী নিঃশ্বাসের সাথে পথের ধুলা/বায়ুবাহিত
এলার্জেন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
নাকের এলার্জি
কিভাবে হয়? :
যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা এলার্জেনের সংস্পর্শে
এলে রক্তে আইজি-ই (IgE)
এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং এই আইজি-ই নাকের ভিতরে থাকা মাস্ট
সেল নামক কোষকে ভেঙে দেয়। ফলে এই কোষ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি করে নাকে প্রদাহ ঘটায়। শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়া নাসারন্ধের স্নায়ুকোষের রিসেপ্টরকে
উদ্দীপ্ত করার ফলে হাঁচির উদ্রেক করে।
নাকের এলার্জি
জনিত সমস্যার লক্ষণ :
নাক চুলকানো, একনাগাড়ে কয়েকটি
হাঁচি, নাক দিয়ে পানি ঝরে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে
যাওয়া, মাঝে মাঝে এর সাথে মাথা ব্যাথা। অনেক সময় এসবের সাথে কারো কারো
চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। অনেক দিন ধরে এ ধরনের এলার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র
টারবিনেট) ফুলে থলির মত বড় এবং বিবর্ণ হয়ে যায়।
এলার্জি প্রতিরোধ
:
এলার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল কারণ সনাক্ত
করে তা এড়িয়ে চলা। এজন্য রোগীকে সতর্কতার সাথে
খুঁজে বের করতে হবে তার শরীরে কি কি কারণে এলার্জি হয়। এজন্য বলা হয়ে থাকে এলার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল হেলথ এডুকেশন। যাদের
এই সমস্যা আছে তারা শীতের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে অথবা রাস্তায় গাড়ির কালো ধুয়া থেকে রক্ষা
পেতে মুখবন্ধনী বা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
চিকিৎসা :
যদিও এলারজেন বা এলার্জির কারণ এড়িয়ে চলা এই রোগের
প্রধান চিকিৎসা। তবে এর সাথে ঔষধ প্রয়োগ করে অনেকটাই উপশম বা মুক্তি পাওয়া যায়। মনে
রাখবেন ঔষধপত্র দেয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। এ রোগের চিকিৎসায় প্রধান ঔষধ হল এন্টি-হিষ্টামিন, স্টেরয়েড জাতীয়
নাকের স্প্রে। এছাড়াও বয়সভেদে মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ট্যাবলেট বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে এই ক্ষেত্রে একনাগাড়ে অনেকদিন (৩ মাস বা এর অধিক) ব্যবহার
করলে নাকের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই নাকের স্প্রে একজন
নাক-কান-গলা রোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ব্যবহার করবেন। কোনভাবেই নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি
থেকে নিজে থেকে কিনে ব্যবহার করা যাবে না।
দীর্ঘমেয়াদী এলার্জি ঔষধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
তবে যারা অনেকদিন ধরে এলার্জিক রাইনাইটিসে ভুগছেন এবং ঔষধ দ্বারাও কোন ফলাফল পাননা, তাদের ক্ষেত্রে
নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জনরা নাকের ভিতরে ফুলে যাওয়া মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট)
পুড়িয়ে দিয়ে(Electrocauterization)চিকিৎসা করে থাকেন তবে সেটা খুব কম। তবে সুখবর হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে
এলার্জিক রাইনাইটিস এর সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা এলার্জির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি
পদ্ধতি চালু হতে পারে।
নাকের এলার্জি জনিত হাঁচি-সর্দির সুচিকিৎসা না হলে
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এলার্জিক
রাইনাইটিস থেকে শতকরা ২৫ ভাগ রোগির হাঁপানি হতে পারে। এছাড়া নাকের এলার্জিজনিত সর্দি
থেকে সাইনোসাইটিস, নাকের পলিপও হতে পারে।
লেখক-
ডাঃ মোঃ আব্দুল হাফিজ (শাফী);
বিসিএস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা।
0 coment rios:
You can comment here