Saturday, August 8, 2020

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-৫

 

।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-৫

সত্যের সন্ধানে পর্ব-৪ পড়তে ক্লীক করুন এখানে

পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর

আল কুরআন

বিশ্ব জুড়ে মানবতা আজ শৃংঙ্খলিত। এর স্বাভাবিক বিকাশ দারুনভাবে পদদলিত। কাতরাচ্ছে তারা জীবনের যন্ত্রনায়। জীবনের প্রতিটি পদে পদে চলছে নৈরাজ্য ও অরাজকতা। ধম নেমেছে অবক্ষয়ের। সমস্থ পৃথিবী জুড়ে চলছে আজ রাজনৈতিক যুলুম। আনাচে ও নির্যাতন পিড়ীন। অর্থনৈতিক শোষণ ও বাকনা। সাংস্কৃতিক গোলামী ও নির্লজ্জতা। নৈতিক অবক্ষয়ের প্রাণী ও হতাশা। মরণাস্ত্রের বিভীষিকা ও ভয়ালতায় ক্লিষ্ট, জর্জরিত, রক্তাক্ত, হতাশ, আহত ও পীড়িত। সর্বনাশা হুতাশনের লেলিহান শিখা।

কিন্তু কোথায় লূকিয়ে আছে মানবতার মুক্তি বিজয় কাটি। কোথায় গেলে খুঁজে পাবে  ও মুক্তিকামী মানবগোষ্ঠী এক শান্তির ঠিকানা। কোন মানব মস্তিষ্ক কী দিতে পারবে। একটি সর্বজন স্বীকৃত নির্ভুল জিবন বিধান। কোন মহান পন্ডিত, দার্শনিক, নেতা, বৈজ্ঞানিক অথবা কোন মানব প্রেমিক কি পারবে সেজন্য চেষ্টা করে, সফল হতে?

এ সকল প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাবটি হচ্ছে নাকারণ আমরা যাকে পন্ডিত বলে জানি তার নিকট যে জ্ঞান আছে তা অতি নগন্য। সে আসলে সামনে দেখে পিছনে দেখে না। দুহাত ফাঁক দিয়ে সমান্তরালভাবে চলে রেল লাইনকে সে দেখে কিছু দুর গিয়ে একত্রে মিলে গেছে। মাথার উপরে থাকিয়ে সে মহাশূন্যে দেখতে পায়। আকাশ নামক ছাঁদ যার কোন বাস্তবতা নেই। সে ক্ষুদ্রকে দেখে না বড়কে ও দেখে না, বেশি নিকটেও দেখে না। বেশি দূরেও দেখে না। সাপকে দড়ি মনে করে আর দড়িকে সাপ মনে করে ভয় পায়। পানিকে (মদ) শরাব মনে করে। শরাবকে পানি মনে করে তৃপ্তি সহকারে পান করে। আজকের সব কিছু যে জানেনা,  গতকালের অনেক কিছুই সে ভুলে গেছে। বলতে পারেনা আগামী কালের কোন কিছুই। এমন জান্দারনামী পন্ডিত একত্রে মিলেও মানুষের অনাগত কালের জীবন বিধান রচনা করতে সক্ষম হবে না। তিনিই সক্ষম যিনি এই পন্ডিতদের সৃষ্টি করেছেন যাঁর কাছে রয়েছে ভবিষ্যতের সুস্পষ্ট জ্ঞান। যিনি মানুষের জীবন মৃত্যুর অধিকারী যিনি চিরঞ্জীব যার আদেশে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যার আদেশে আবার ধ্বংশ হবে তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করে সর্বাধিক পথ ও হিয়দায়াত নাম যে গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন তার নাম আল কুরআন।

আল-কুরআনের শাব্দিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ

পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ আল-কুরআন। এই আল-কুরআন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য অতীব জরুরী হলো তার শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কে জানা। আল-কুরআন সম্পর্কিত শাব্দিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।

প্রথমত: আল-কুরআন নিজেই তার পরিচয় বিশ্ববাসির সামনে তুলে ধরেছে।

দ্বিতীয়ত: রাসূল (সা.) তাঁর বাণীর মাধ্যমে আল কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন।

তৃতীয়ত: প্রখ্যাত মনিষীগণ আল-কুরআনের পরিচয় তুলে ধরতে ভিন্ন উক্তি পেশ করেছেন। আল-কুরআন আল­াহর কালাম। (আল-কুরআন, সূরা বাকারা: ৭৫; সূরা আরাফ: ১৫৮; সূরা তাওবা: ৬; সূরা কাহাফ: ১০৯; সূরা লুকমান: ২৭)

জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তা রাসূল (সা.) এর প্রতি নাযিল করেন। আল-কুরআন নাযিলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ. نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ . عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ . بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ

নিশ্চয়ই আল-কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ। জিবরাঈল এটি নিয়ে অবতরণ করেছেন আপনার ক্বলবে, যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন। এটা নাযিল করা হয়েছে সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায়’ (আল-কুরআন, সূরা শুআরা: ১৯২-১৯৫)

وَبِالْحَقِّ أَنْزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (১০৫) وَقُرْآَنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيلًا (১০৬) قُلْ آَمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا (১০৭) وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا (১০৮) وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا-

আর আমি সত্যসহ এ কুরআন নাযিল করেছি এবং তা সত্যসহই নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করেই পাঠিয়েছি। আমি কুরআনকে পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করে নাযিল করেছি, যেন আপনি তা মানুষের কাছে থেমে থেমে পাঠ করতে পারেন; এবং আমি তা ক্রমান্বয়ে নাযিল করেছি। আপনি বলে দিন: তোমরা এ কুরআনের প্রতি ঈমান আন কিংবা ঈমান না আন, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের কাছে যখন এ কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে- এবং বলে, পবিত্র-মহান আমাদের রব। অবশ্যই আমাদের রবের ওয়াদা কার্যকরী হবে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ তাদের অন্তরের বিনয়ভাবকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়।’ (আল-কুরআন, সূরা বনী ইসরঈল: ১০৫-১০৯)

নিম্নে কুরআনের শাব্দিক ও পারিভাষিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যায়ক্রমে পেশ করছি।

আল-কুরআনের শাব্দিক পরিচয়

১। আল-কুরআন (القرآن) শব্দটি قرء-يقر ক্রিয়ার বাব فتح-يفتح ও মূল ধাতু(قرأ)  (কারউন) থেকে উৎপত্তি। অর্থ একত্রিত করা। (যারকানী, ড. মুহাম্মদ আব্দুল আযীম, মানাহিলুল ইরফান ফী উলূমূল কুরআন, (বৈরুত: দারুল কুতুব আল আরাবিয়্যাহ, ১৯৮৮ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৯) আল-কুরআন সর্বজ্ঞানের উৎস এবং সর্বশ্রেষ্ট আসমানী কিতাব। বৈপরিত্য নয়, পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়, অর্থাৎ, একটাই বিধান; যার মধ্যে পার্থিব ও পারলৌকিক সকল বিষয় বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনে ঘোষণা করেন-

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ -

আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।’ (আল কুরআন, সূরা নাহল: ৮৯)

২। অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, আল-কুরআন القرآن)) শব্দটির উৎপত্তি কারনুন (قرن) থেকে। তখন আল-কুরআন এর অর্থ হবেقرنت الشيئ بالشيئ قرأن  কোন একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের সাথে সংযুক্ত করা, মিলানো, সঙ্গে থাকাইত্যাদি। (যারকানী, ড. মুহাম্মদ আব্দুল আযীম, পৃ. ১৬)

৩। ইমাম শাফিয়ী, ফাররা ও আবূল হাসানقرأن” (কুরআন) শব্দটি হামযা-বিহীন পড়তেন। ইমাম শাফিয়ী قرأنশব্দটিকে হামযা-বিহীন উচ্চারণ করতেন, এবং قرأنকোন শব্দ থেকে গঠিত নয় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (কুরআন পরিচিতি, ইসলামী বিশ্বকোষ সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত, (ঢাকা: ইসলামী ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ২)

৪। জাহেলীযুগে আরবগণ قرأশব্দটি তিলাওয়াত অর্থে ব্যবহার না করে অন্য অর্থে ব্যবহার করত। যেমন তারা বলত:هذه الناقة لم تقرأ سلى قط  এ উষ্ট্রীটি কখনও গর্ভবতী হয়নি।” ‘আমর ইবনু কুলসুমের কবিতায়ও শব্দটি অনুরূপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে : هجان اللون لم تقرأ جنينا. নিম্নমানের ঘোড়া বাচ্চা প্রসব করেনি।” (ইবনুল মানযুর, লিসানুল আরব, (বৈরুত: দারুইহয়াউত তুরাছিল আরবি, ১৪১৩হি. /১৯৯৩খ্রি.), খ.১, পৃ. ১২৬। অথবা قرانশব্দটি قرأة” (কিরআতুন) থেকে উদ্ভুত, যা مقروو” (মাকরুউন) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ পঠিত বিষয়।

৫। আল­ামা যাজ্জায (মৃ. ৯২৩ খ্রি.) এর মতে قرانশব্দটি فعلانশব্দের সম-ওযন বা সম-উচ্চারণভুক্ত। তাঁর দৃষ্টিতে এটা قرا” (কারাআ) থেকে উৎকলিত। (ড. আব্দুল আযীম আল্ যারকানী, পৃ. ১৬; আল কুরআন পরিচিতি, পৃ. ২-৩)

৬। লিহায়ানী (মৃ. ৯২৭খ্রি.) এর মতে, কুরআন قرانশব্দটি মাসদার, হামযাযুক্ত, আল-গুফরান এর ওযনে গঠিত এবং قرأ থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ পাঠকরা। প্রকৃতপক্ষে এটিই সঠিক। কেননা শব্দের বিচারে কুরআন (قرأن) শব্দটি ক্রিয়ামূল (مصدر) এবং কিরআতের সমার্থক। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন

إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآَنَهُ (১৭) فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ

নিশ্চয় তার সংরক্ষণ করা ও পাঠ করা আমারই দায়িত্ব। সুতরাং আমি যখন তা পাঠ করি, আপনি তখন সেই পাঠের অনুসরণ করুন। (আল কুরআন, সূরা কিয়ামাহ: ১৭-১৮)

৭। অতঃপর তৎকালীন আরবগণ قراশব্দটিকে আরবী ভাষা থেকে تلاوة” (পাঠ করেছে) অর্থে গ্রহণ করে এবং قراশব্দটি পাঠ করা অর্থেই তাদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে পড়ে। (ড. সুবহী সালেহ, মাবাহিস ফী উলূমিল কুরআন, পৃ. ১৯)

৮। কুরআন (قرأن) শব্দটি فعلان  অথবা غفران এর ওযনে মাসদার। এটা قرأ থেকে مقروء এবং قرن থেকে مقرون অর্থে ব্যবহৃত। কুরআন শব্দটি পাঠ করা তিলাওয়াত করা, একত্রিত করা, সম্পৃক্ত করা, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ‘(আল্লামা মান্না আল কাত্তান, পৃ. ১৪; ড. মুহাম্মদ শফিকুল্লা, পৃ. ৮-৯; মাজদুদ্দীন আল-ফিরূযাবাদী, পৃ. ২৬২-২৬৩)

৯। আল-কুরআন শব্দটি মূলতঃ কি ছিল এবং তা কোথা থেকে উদ্ভূত হয়েছে এ সম্পর্কে শব্দ বিশারদদের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।

ক. আল্লামা ইব্ন কাছীর (র.) কুরআন শব্দটি হামযাহ বিহীনভাবে তিলাওয়াত করতেন।  (আল­ামা জালাল উদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.), আল-ইতকান ফী ঊলূমিল- কুরআন, (বৈরুত ঃ দারু ইহইয়াউল উলূম, ১৪০৭ হি./ ১৯৮৭ খ্রি.), খ. ১, পৃ. ১৪৬)

খ. কারো মতে,  এটা غير مهموز অর্থাৎ এর শব্দমূলে হামযাহ নেই। আবার কারো মতে এটা مهموز  , অর্থাৎ এর শব্দমূলে হামযাহ আছে। আল-কুরআন শব্দটি اسم مشتق (ইসমে মুশতাক), না اسم غير مشتق (ইসমে গাইরে মুশতাক), এ নিয়েও ভাষাতত্ত¡বিদ এবং তাফসীরকারদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। যাদের মতে আল-কুরআন শব্দটি গাইরি মাহমুয তাদের মধ্যে ইমাম শাফি, বৈয়াকরণ আল ফাররা এবং আবুল হাসান আলী ইব্ন ইসমাঈল আল-আশআরী প্রমূখ বিশেষভাবে উলে­খযোগ্য। যেমন:

ইমাম শাফিঈ (১৫০-২০৪ হি./৭৬৭-৮২০ খৃ.), বলেন আল-কুরআন শব্দটি কুরআন মজীদের নাম (المعروف) এটি مشتق (ধাতু থেকে উৎপন্ন) বা مهموز নয়। নবী করীম (সা.) এর ওপর অবতীর্ণ আল­াহ তাআলার কালামের জন্য এ নামটি সুনির্দিষ্ট। যেমন : التوراة এবং الانجيل দুটি আসমানী গ্রন্থের নাম।

গ. একদল বলেন ঃ কুরআন শব্দটি গাইরে মুশতাক। অপর দল বলেন এটি মুশতাক। (যারকাশী, আল-বুরহান ফী উলূমিল-কুরআন, পৃ. ২৭৮ উপরের বর্ণিত শাব্দিক বিশ্লেষণে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারি যে, কুরআন শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো পঠিত বা সংযুক্ত যা সর্বমহলে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য।

রাগিব ইস্পাহানী বলেন : কুরআন فعلان (ফুলানুন) এর ওযনে قرأن  (কুরআনুন) ও رحجان  (রুহজানুন) এর ন্যায় একটি মাসদার। এটি ক্কিরাআত থেকে গৃহীত। এর অর্থ পঠনের বর্ণ ও শব্দগুলোকে পরস্পর একটির পাশে অন্যটি জমা করা। বুৎপত্তির আলোকে কুরআনের নামকরণের বিভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। যেমন :

(১) আবূ উবাইদা বলেন: পবিত্র কুরআনে সূরা ও আয়াতগুলোকে একটির পাশে অন্যটি জমা করা হয়েছে বলে একে এ নামে অভিহিত করা হয়।

(২) কেউ কেউ বলেন: সব ধরণের জ্ঞান এ গ্রন্থে জমা করা হয়েছে বলে এ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

(৩) কেউ কেউ বলেন: এ মহাগ্রন্থে বিভিন্ন ঘটনা, আদেশ নিষেধ,নিয়ামতের ওয়াদা ও আযাবের হুঁশিয়ারী এবং আয়াত ও সূরাগুলোকে একটির পাশে অন্যটি জমা করা হয়েছে বিধায় একে কুরআন বলা হয়। (ইব্ন মানযূর, লিসানুল-আরব, খ. ১, পৃ. ১২৯)

আল কুরআনের শাব্দিক বিশ্লেষণে আমরা বলতে পারি যে, আল-কুরআন (القرآن) শব্দটি  قرء-يقر ক্রিয়ার বাব فتح-يفتح ও মূল ধাতু (قرأ)  (কারউন) থেকে উৎপত্তি। অর্থ একত্রিত করা। আবার আল-কুরআন القرآن)) শব্দটির উৎপত্তি কারনুন (قرن) থেকে। তখন আল-কুরআন এর অর্থ হবে কোন একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের সাথে সংযুক্ত করা, মিলানো, সঙ্গে থাকা। আবার  কুরআন قرانশব্দটি মাসদার, হামযাযুক্ত, আল-গুফরান এর ওযনে গঠিত এবং قرأ থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ পাঠকরা। সুতরাং কুরআন সর্বাধিক পঠিত, অপূর্ব সঙ্গতিপূর্ণ এবং পরস্পর মিলানো একটি কিতাব।

আল-কুরআনের পারিভাষিক পরিচয়

আল-কুরআনের পরিচয় কুরআন নিজেই। এখানে আল-কুরআনের পারিভাষিক পরিচয় বলতে আল-কুরআনের আলোকে কুরআনের পরিচয়, হাদীসের আলোকে কুরআনের পরিচয় এবং অন্যান্য খ্যাতনামা ইসলামী ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন কিতাবের আলোকে আল-কুরআনের পরিচয় সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হল।

এক. আল-কুরআনের আলোকে আল-কুরআনের পরিচয়

  আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে কুরআনের পরিচয় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। তারমধ্য থেকে কয়েকটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

وَبِالْحَقِّ أَنْزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (১০৫) (و(فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيلًا (১০৬) قُلْ آَمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا (১০৭) وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا (১০৮) وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا

আর আমি সত্যসহ এ কুরআন নাযিল করেছি এবং তা সত্যসহই নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করেই পাঠিয়েছি। আমি কুরআনকে পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করে নাযিল করেছি, যেন আপনি তা মানুষের কাছে থেমে থেমে পাঠ করতে পারেন; এবং আমি তা ক্রমান্বয়ে নাযিল করেছি। আপনি বলে দিন : তোমরা এ কুরআনের প্রতি ঈমান আন কিংবা ঈমান না আন, যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের কাছে যখন এ কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে- এবং বলে : পবিত্র-মহান আমাদের রব। অবশ্যই আমাদের রবের ওয়াদা কার্যকরী হবে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ তাদের অন্তরের বিনয়ভাবকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়।আল-কুরআন, সূরা বনী ইসরঈল: ১০৫-১০৯)

আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাইলের মাধ্যমে আরবী ভাষায়, যেমন-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ. نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ . عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ . بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ

নিশ্চয়ই কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ। জিবরাঈল এটি নিয়ে অবতরণ করেছেন আপনার ক্বলবে, যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন। এটা নাযিল করা হয়েছে সুষ্পষ্ট আরবি ভাষায়।’ (আল-কুরআন, সূরা শুআরা: ১৯২-১৯৫)

আলোচ্য আয়াতগুলোতে আল-কুরআনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

ক) কুরআন বিশ্ব প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ।

খ) রূহুল-আমীন (الروح الأمين) অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সা.) এর নিকট কুরআন নিয়ে আসতেন।

গ) কুরআন রাসূল (সা.) এর কলবের উপর অবতীর্ণ হয়।

ঘ) কুরআন রাসূল (সা.) এর উপর এ জন্য নাযিল হয়, যাতে তিনি আল-কুরআনের দ্বারা উম্মতকে তথা মানবজাতিকে সতর্ক করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন-

رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

রাসূলরা (হচ্ছেন জান্নাতের) সুসংবাদবাহী ও (জাহান্নামের) ভয় প্রদর্শনকারী, (তাদের এজন্যই পাঠানো হয়েছিলো) যাতে করে রাসূলদের আগমনের পর আল্লাহ তাআলার উপর মানব জাতির কোনো অজুহাত দার করার কোনো সুযোগ না থাকে; (সত্যিই আল্লাহ তাআলা  মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (আল-কুরআন, সূরা নিসা: ১৬৫)

ঙ) পবিত্র কুরআন সু-স্পষ্টআরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন-

 إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآَنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ 

নিসন্দেহে আমি একে আরবি কুরআন (হিসেবে) নাযিল করেছি, আশা করা যায়, তোমরা তা অুনধাবন করতে পারবে।” (আল-কুরআন,  সূরা ইউসুফ: ২)

  আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে আল-কুরআনের সংজ্ঞায় বলেন :

وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ (১৯২) نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ (১৯৩) عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ (১৯৪) بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ

আল কুরআন জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট থেকে অবতীর্ণ। জিবরাঈল (আ.) তা নিয়ে অবতরণ করেছেন আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন। এটা নাযিল করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” (আল-কুরআন, সূরা আশ-শুআরা ২৬ : ১৯২-১৯৫)

উলি­খিত আয়াতগুলোতে আল কুরআনুল কারীমের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যেমন :

ক. আল-কুরআন আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে নাযিলকৃত।

খ. রুহুল আমীন অর্থাৎ জিবরাঈল (আ.) রাসূল (সা.) এর নিকট আল-কুরআন পৌঁছিয়ে দেন।

গ. আল-কুরআন রাসূলুল­াহ (স.) এর উপর নাযিল হয়।

ঘ. আল-কুরআন রাসূলুল­াহ (স.) এর উপর এজন্য নাযিল হয়, যাতে তিনি কুরআনের দ্বারা উম্মতকে সতর্ক করেন।

অতএব, কুরআন জগৎবাসীর জন্য সতর্ককারী। আল­াহ তায়ালা বলেন :

لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

রাসূলগণ আসার পর যাতে আল­াহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে।” (আল-কুরআন, সূরা আন-নিসা: ১৬৫)

 মানব জাতির পথ প্রদর্শন পূণ হেদায়াতের মাধ্যম। যেমন-অন্য এক আয়াতে আল­াহ তায়ালা কুরআনকে আল­াহর সত্যবাণী ও মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ হিসেবে ঘোষণা করেন-

ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ

আল-কুরআন সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, এতে রয়েছে মোত্তাকীদের জন্য পথের দিশা।  (আল-কুরআন, সূরা বাকারা: ২)

 আল্লাহ তায়ালা অন্য এক আয়াতে আল-কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে:

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ

রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়াত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে আল-কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

إِنَّهُ لَقُرْآَنٌ كَرِيمٌ . فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ . لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ . تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ.

নিশ্চয়ই আল-কুরআন অতি সম্মানিত গ্রন্থ। যা সংরক্ষিত কিতাবে লিপিবদ্ধ। যারা পাক-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করে না। এটা বিশ্ব-পালনকর্তা পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (আল-কুরআন, সূরা ওয়াকিআ: ৭৭-৮০)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়তে আল-কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

وَكَذَالِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا مَا كُنتَ تَدْرِى مَا الْكِتَـابُ وَلا الايمَـانُ وَلَـاكِن جَعَلْنَـاهُ نُورًا نَّهْدِى بِه مَن نَّشَآءُ مِنْ عِبَادِنَا وَإِنَّكَ لَتَهْدِى إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ.      

এভাবে আমি  আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি  রূহ তথা আমার নির্দেশ; আপনি তো জানতেন না কিতাব কি? এবং ঈমান কি? পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ নির্দেশ করি; আপনি তো প্রর্দশন করেন কেবল সরল পথ।’ (আল কুরআন, সূরা শূরা: ৫২)

قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ . يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلاَمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنِ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ  يَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ.    

আল্লাহর নিকট হতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, ইহা দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (আল কুরআন, সূরা মায়িদা: ১৫-১৬)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে আল-কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

فَالَّذِينَ آمَنُواْ بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُواْ النُّورَ الَّذِيَ أُنزِلَ مَعَهُ أُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.

সুতরাং যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে তাকে সম্মান করে ,তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।” (আল কুরআন, সূরা আরাফ: ১৫৭)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنْزَلْنَا.

অতএব তোমরা আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল ও যে জ্যোতি আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস      স্থাপন       কর।’ (আল কুরআন, সূরা তাগাবুন : ৮)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

 لَوْ أَنْزَلْنَا هَذَا الْقُرْآَنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ.

যদি আমি এই কুরআনকে পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে আপনি উহাকে আল্লাহর ভয়ে বিনীত এবং বিদীর্ণ দেখতেন। আমি এ সমস্ত দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (আল কুরআন, সূরা হাশর: ২১)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

بَلْ هُوَ قُرْآَنٌ مَجِيدٌ - فِي لَوْحٍ مَحْفُوظٍ. 

বস্তুত ইহা সম্মানিত কুরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।  (আল কুরআন, সূরা বুরুজ: ২১)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِي لَهُ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ وَقُرْآَنٌ مُبِين.

আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাই নাই এবং ইহা তার পক্ষে শোভনীয় নয়। ইহা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন।  (আল কুরআন, সূরা ইয়াসিন: ৬৯)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

وَلَقَدْ آَتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآَنَ الْعَظِيمَ.

আমি তো আপনাকে দিয়াছি সাত আয়াত যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহান কুরআন।’ (আল কুরআন, সূরা হিজর: ৮৬)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

الَر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيد.ِ

আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব, ইহা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি মানবজাতিকে তাদের প্রতি পালকের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোকে ,তার পথে যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসশিত।  (আল কুরআন, সূরা ইবরাহীম: ১)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

 وَلَوْ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ كِتَابًا فِي قِرْطَاسٍ فَلَمَسُوهُ بِأَيْدِيهِمْ لَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ 

আমি যদি আপনার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি উহা হস্ত দ্বারা স্পর্শ করত তবুও কাফিররা বলত, ইহা স্পষ্ট জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।  (আল কুরআন, সূরা আনআম: ৭।

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَهَذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَهُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ.

এ কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামায সংরক্ষণ করে।  (আল কুরআন, সূরা আনআম: ৯২)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

  هَذَا بَيَانٌ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِلْمُتَّقِينَ .

ইহা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বর্ণনা এবং মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।” (আল কুরআন, সূরা ইমরান: ১৩৮)

 আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-

 إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ . لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ .

নিশ্চয় যারা কোরআন আসার পর তা অঙ্গীকার করে, তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার অভাব রয়েছে। এটা অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ। এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (আল কুরআন, সূরা হামীম আস সিজদা: ৪১-৪২)

উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরো কিছু আয়াত যা আল কুরআনের পরিচয় বহন করে তা নিচে উল্লেখ করছি।

সুরা বাকারা- ১৮৫ নং আয়াতঃ

আল কুরআন পুরে মানব জাতির জন্য জীবন বিধান এবং তা এমন সুুস্পষ্ট উপদেশাবলীতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য পরিস্কার রূপে তুলে ধরে।

সুরা আল বাকারা ২৩ নং আয়াতঃ

আমি আমার বান্দার উপর যা অবতির্ণ করেছি সে ব্যাপারে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তাহলে তোমরা কুরআনের সুরার অনুরূপ একটি সুরা তৈরী করে নিয়ে আস আর একাজে তোমরা আল্লাহকে ব্যতিত তোমাদের সকল বন্দুদের সহযেগিতা গ্রহণ কর। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।

সুরা হামীম সিজদা ৪২ নং আয়াত ঃ

আসল কথা এটা একখানা বিরাট কিতাব। বাতিল না সামনের দিক থেকে তার উপর আসতে পারে না পিছন থেকে। এ এক মহাজ্ঞানী ও সুপ্রসংশীত সত্যার নাযিল করা বিধান।

সুরা কাহাফ ২৭ নং আয়াত ঃ

তোমার প্রভুর নিকট থেকে তোমার প্রতি যে অহী নাযিল করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত কর। তার কথা পরিবর্তন করার ক্সমতা কারো নেই।

সুরা ইউনুস ১৫ নং আয়াত ঃ

আপনি বলে দিন যে, আমি নিজের পক্ষ থেকে এ কিতাব পবির্তন করার অধিকারী নই। আমি শুথু অহীর অনুসরণ করি। যা আমার প্রতি অবতির্ণ হয়।

সুরা নাহল- ৮৯ নং আয়াতঃ

তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি। যার মধ্যে সকল বিষরে বর্ণনা আছে।

সুরা ইউসুুফ ১১১ নং আয়াত ঃ আল কুরআনে প্রত্যেকটি বিষয়ের বিস্তারিত আছে।

সুরা আল ইমরান ১২৮ নং আয়াত ঃ

স্বস্তুতঃ এটা মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং আল্লাহকে যারা ভয় করে তাদের জন্য এটা পথ নির্দেশ ও কল্যাণের উপদেশ।

সুরা হাশর ২১ নং আয়াতঃ

আমরা যদি এ আল-কুরআন কোন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করে দিতাম তাহলে তুমি দেখতে যে, তা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে খাচ্ছে ও দীর্ন-বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ দৃষ্টান্ত এজন্য মানব জাতীর সামনে পেশ করলাম যেন তারা চিন্তা ভাবনা করতে পারে।

সুরা মুহাম্মদ ২৪ নং আয়াতঃ

এমন কিতাব, যার মধ্যে বিস্তারিত ব্যাখ্য করা হয়েছে। কুরআনের আয়াত আরবী ভাষায় সে হাতির জন্য যারা কুরআন বুঝে।

সুরা মায়েদা ৪৪ নং আয়াতঃ

যারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান মোতাবেক সমস্যার মাধান করে না। (বিচার ফয়সালা, দেশ (রাজ্য) শাসন করে না) তারা কাফের।

সুরা মোজাদালাহ ৫নং আয়াত ঃ

আমার স্পষ্ট বয়ান সম্বলিত আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। অস্বিকার কারদের জন্য রয়েছে অপমানকর আযাব।

সুরা আল আসর ঃ

কালের শপথ, মানুষ বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। সে লোকদের ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে নেক আমল করেছে এবং সত্যের উপদেশ দিয়েছে ও ধৈর্য্যরে জন্য উৎসাহিত করেছে।

সুরা ইসরা ৮২ নং আয়াতঃ

আমরা কুরআনের আয়াত নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্য শেফা (সকল সমস্যার সমাধান) এবং রহমত। শুধু জারেম ও অত্যাচারী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

সুরা ইমরান ৮৮ নং আয়াতঃ

আপনি চ্যালেঞ্জ করুন। জগতের সমগ্র মানুষ ও জ্বীন মিলেও যদি এ ধরণের একখানা আল কুরআন রচনা করার চেষ্টা করে তাহলেও তারা পারবেনা যদিও তারা এ ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে।

সুরা কাহফ ১০৯ নং আয়াতঃ

হে মুহাম্মদ (ষা.)! বল, আমার প্রভুর বাণী সমূহ লিখবার জন্য যদি সমুদ্র কাীল হয়, তবু আমার প্রভুর বাণী সূহ শেষ হওয়ার পূর্বে সমুদ্র শেষ হয়ে যাবে যদি অনুরূপ অনগন্য সমুদ্রকে সাহায্যের জন্য আনয়ন করা হয়।

সুরা হিজর ৯নং আয়াতঃ

নিশ্চয়ই কুরআন আমি নাযিল করেছি। আর অবশ্যই উহার হেফাজতের দায়িত্ব আমারই।

দুই.  রাসূল (সা.) এর ভাষায় আল-কুরআনের পরিচয়:

   রাসূল (সা.) আল-কুরআনের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে বলেন:

كتاب الله فيه نباء من قبلكم ، وخبر ما بعدكم  ، وحكم ما بينكم ، هو الفصل ليس بالهزل ، من تركه من جبار قصمه الله ، ومن ابتغى الهدى في غيره اضله الله ، هو حبل الله المتين . وهو الذكر الحكيم ، وهو الصراط المستقيم ، وهو الذي لا تزيغ به الأوهواء ، ولا تلتبس به الألسنة ، ولا يشبع منه العلماء ولا يخلق على كثرة الرده ، ولا تنقضى عجائبه ، وهو الذي لم تنته الجن إذ سمعته حتى قالوا : إنا سمعنا قرآنا عجبا ، يهدى إلى الرشد فأمنا به . من قال به صدق ، ومن عمل به أجر ، ومن حكم به عدل ، ومن دعا إليه هدى إلى صراط مستقيم .

আল­াহর কিতাব তাতে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের সংবাদ রয়েছে। তোমাদের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে বিবরণ আছে। তোমাদের পার্থিক জীবনের হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ের নির্দেশ আছে। উহা এমন এক চুড়ান্ত পার্থক্যকারী (হক ও বাতিলের মধ্যে) এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রন্থ যাতে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন  কিছুই নেই। অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি এটিকে পরিত্যাগ করবে আল­াহ তাআলা তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবেন। যে এটা ব্যতীত অন্যত্র হেদায়াত কামনা অথবা অন্বেষণ করবে আল­াহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন। এটি আল­াহ প্রদত্ত মজবুত রজ্জু বা রশি। এটি বিজ্ঞপূর্ণ স্মরণিকা।এটি সিরাতুল মুসতাকীম তথা সহজ-সরল পথ।এটি এমন এক গ্রন্থ যাকে প্রবৃত্তির অনুসারীরা  পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না। এমন কি  অন্য কোন ভাষা অথবা কোন কিছুর সাথে সংমিশ্রিত হবে না। এর অধ্যয়ন ও জ্ঞানাণ্বেষণে আলিমগণ পরিতৃপ্ত হবে না। বার বার তেলাওয়াতে এর স্বাদ হ্রাস পাবে না। এর অভিনবত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। এটি এমন এক গ্রন্থ জ্বিনগণ যখন এর আয়াত  শ্রবণ করেছিল তখন তারা থেমে থাকেনি; বরং তারা বিষ্মিত হয়ে বলে উঠেছিল : আপনি বলুন : আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে কুরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা নিজ কওমের কাছে ফিরে গিয়ে বলল : আমরা তো শুনে এসেছি এক বিস্ময়কর কুরআন।’(আল-কুরআন, সূরা জিন: ১)

যে ব্যক্তি এ কুরআন অনুসারে কথা বলবে সে সত্যকথা বলবে। আর যে ইহা অনুসারে আমল করবে সে প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। যে এর অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করবে সে ন্যায়বিচার করবে। আর যে এর প্রতি আহবান জানাবে সে সঠিক পথের দিশাপ্রাপ্ত হবে।’ (আত্-তিরমিযী, আবূ ঈসা মুহাম্মদ ইবনু ঈসা, সুনানু তিরমিযী, (ইান্ডিয়া: মুখতার ইন্ড কোম্পানী, ১৯৮৫খ্রি.), খ. ২, পৃ. ১১৮)

আলী ইব্ন আবী তালিব (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন-

جاء في سنن الترمذي عن علي بن ابي طالب رضي الله عنه عن النبي صلي الله عليه وسلم ستكون فتن قلت وما المخرج فيها قال صلي الله عليه وسلم كتاب الله فيه نباء من قبلكم وخبر ما بعدكم وحكم ما بينكم هو الفصل ليس بالهزل من تركه من جبار قصمه الله ومن ابتغي الهدي في عيره اضله الله هو حبل الله المتين وهو الذكر الحكيم وهو الصراط المستقيم وهو الذي لا تزيغ به الا هواء ولا تلبس به الالسنة ولا يشبغ منه العلما ولا يخلق علي كثرة الرد ولا تنقض عجائبه وهو الذي لم تنته الجن اذ سمعته حتي قالوا  : ( انا سمعنا قرانا عجبا يهدي الي الرشد فامنا به) من قال به صدق ومن عمل به اجر ومن حكم به عدل ومن دعا اليه هدي الي صراط مستقيم-

অতি শীঘ্রই নানাবিধ ফিতনা (বিশৃংখলা) প্রকাশিত হবে, তারপর আমি বললাম, ওটা থেকে বাঁচার উপায় কি? উত্তরে নবী করীম (সা.) বললেন, আল­াহর কিতাব, তাতে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের সংবাদ রয়েছে। তোমাদের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে বিবরণ আছে। তোমাদের পার্থিব জীবনের হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ের নির্দেশ আছে। তা হক ও বাতিলের মধ্যে চূড়ান্ত পার্থক্যকারী। তাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু নেই। অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি এটাকে পরিত্যাগ করবেআল্লাহ তাআলা তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। যে এটা ভিন্ন অন্য কিছুতে হিদায়াত অন্বেষণ করবে আল­াহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বেন। এটা আল­াহ প্রদত্ত মজবুত রজ্জু। এটা বিজ্ঞানপূর্ণ স্মরণিকা এবং একটা সরল-সহজ পথ।’ (আল-কুরআন, সূরা জ্বিন: ১-২)

প্রবৃত্তির অনুসারীরা এটাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না। অন্য কিছু এর সাথে সংমিশ্রত হবে না। এর অধ্যয়ন ও জ্ঞানান্বেষণে আলিমগণ পরিতৃপ্ত হবে না। পুনঃ পুনঃ তেলাওয়াতে এর স্বাদ হ্রাস পাবে না। এর অভিনবত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। জ্বিনগণ যখন এ কুরআন শ্রবণ করে, তখন তারা থেমে থাকেনি। বরং তারা বলে উঠে- আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করছি, যা সৎ পথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।

যে ব্যক্তি এ কুরআন অনুসারে কথা বলবে, সে সত্য কথা বলবে। আর যে এর অনুসারে আমল করবে, সে প্রতিদান প্রাপ্ত হবে। যে এর অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করবে, সে ন্যায়বিচার করবে। আর যে এর প্রতি আহবান জানাবে, সে সঠিক পথের দিশা প্রাপ্ত হবে।

  আল-কুরআনের সংজ্ঞা প্রদানে রাসূল (সা.) আরও বলেন,

قال النبي عليه السلام  : ان هذا القران مأدبة الله فتعلموا من مادبته ما استطعتم ان هذا القران حبل الله والنور المبين والشفاء النافع عصمه لمن تمسك به ونجاة لمن اتبعه ولا يزيغ فيستعتب ولا يعوج فيقوم ولا تنضي عجائبه ولا يخلق عن كثرة الرد فابلوه فان الله يأجركم علي تلاوته بكل حرف عشر حسنات اما اني لا اقول الم حرف واحد ولكن بالف حرف ولاحرف وميم حرف-

নিশ্চয়ই এ কুরআন আল­াহর মাদুবাহ। সুতরাং তাঁর জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর সাধ্যানুযায়ী, নিশ্চয়ই এ কুরআন আল্লাহর রশি (দড়ি) এবং স্পষ্ট আলোকবর্তিকা এবং উপকারী আরোগ্য দানকারী। যে অনুসরণ করবে তার পরিত্রাণকারী। পথিককে সহজ-সরল পথের দিশা দানকারী। বক্র পথের পথিককে সোজা পথের দিশারী। তাঁর বিস্ময়কর বিষয়াদি কখনও নিঃশেষ হবে না। বারবার তিলাওয়াতে এর স্বাদ হ্রাস পাবে না। সুতরাং তোমরা এটাকে তিলাওয়াত কর। কেননা আল­াহ তাআলা এর তিলাওয়াতের বিনিময়ে প্রতিদান দেবেন, প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময়ে দশ নেকী। আমি একথা বলছি না যে, الم  একটি অক্ষর; বরং আলিফ (ا) একটা অক্ষর, লাম (ل) একটা অক্ষর এবং মীম (م) একটা অক্ষর।” (‘আল­ামা দারিমী, আস-সুনানু মাউসুআতুল -হাদীছিন-নব্বী, কিতাবু ফাযাইলিল-কুরআন, (মিসর  : শিরকাতুস- সকর, ১ম ও ২য় সং., ১৯৯১-১৯৯২ খৃ.), হাদীস নং- ৩১৮১)

  রাসূল (সা.) আরো বলেন-

قال النبي صـ إن هذا القرآن مأدبة الله فتعلموا من مأدبته ما استطعتم ، إن هذا القرآن حبل الله النور المبين الشفاء النافع عصمة لمن تمسك به ونجاة لمن اتبعه ولا يزيغ فيستعتب ولا يعوج فيقوم ولا تنقضي عجائبه ولا يخلق عن كثرة الرد فاتلوه، فإن الله يأجركم على تلاوته بكل حرف عشر حسنات أما أني لا أقول الم ولكن بألف ولام وميم.

নিশ্চয় এ কুরআন আল­াহর মাদুবাহ, সুতরাং জ্ঞান ভান্ডার থেকে সাধ্যানুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই কুরআন আল­াহর রশ্মি দড়ি স্পষ্ট আলোকবর্তিকা এবং উপকারী আরোগ্যদানকারী, যিনি এটাকে আঁকড়ে ধরবে তার রক্ষাকারী, যিনি অনুসরণ করবে তার পরিত্রানকারী, পথিককে সহজ সরল পথের দিশা দানকারী, বক্রপথের পথিককে সোজা পথের দিশারী, তাঁর আশ্চর্য জনক বিষয়াদি কখনো নি:শেষ হবে না। সুতরাং এটাকে তোমরা তেলাওয়াত কর। কেননা, আল­াহ হেদায়াতের বিনিময়ে প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেক আয়াতে বিনিময়ে দশ নেকী।’ (‘আল­ামা দারিমী, আস-সুনানু মাউসুআতুল -হাদীছিন-নব্বী, কিতাবু ফাযাইলিল-কুরআন, হাদীস নং- ৩১৮১)

উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও আরো কিছু হাদীস রয়েছে যা আল কুরআনের পরিচয় বহন করে তা নিচে উল্লেখ করছি।

হাদীসঃ আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে কুরআনে হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট মনে করে না। যে কুরআন সুন্দর উচ্ছারনে পড়ে না সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়। (বুখরী শরীফ)

হাদীসঃ আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুরআনে পাঁচ প্রকার আয়াত নাযিল হয়েছে। (১) হালাল  (২) হারাম (৩) মুহকামা (৪) মুতাশাবিহ (৫) পূর্রে জাতির দৃষ্টান্ত।  তোমরা হালালকে হালা জান, হারাম থেকে দুরে থাক, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক কাজ কর। মুতাশাবেহ আয়াতের প্রতি ঈমান রাখ এবং পূর্বের জাতির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর।  (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

হাদীসঃ ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিকে ও অন্যকে শিখায়।  (বুখারী শরীফ)।

হাদীসঃ  আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন- এমন কোন নবী ছিল না যাকে মুজিযা দেয়া হয়নি। যা থেকে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে  অহী, যা আল্লাহ আমার কাছে নাজিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনয় আমার উম্মতের সংখ্যা সর্বাধিক হবে।  (বুখারী শরীফ)

হাদীসঃ ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই এ কুরআনের দ্বারা অনেক জাতিকে উচ্ছ মর্যাদা দান করেছেন এবং এ কুরআনের বিধান (অমান্য) করার কারণে অনেক জাতির পতন ঘটেছে। (মুসলিম শরীফ)।

হাদীসঃ হারিসুল আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের বিধি-বিধান, নিয়ম-নীতির দিকে আহবান জানায়, সে জাহান্নামী। যদিও সে রোযা রাখে নামাজ পড়ে এবং নিজেকে অমুসিলম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমীযি শরীফ)।

তিন. উসূলবিদ ও আরবি ভাষাবিদগণের দৃষ্টিতে আল-কুরআনের পরিচয়:

আল-কুরআনের পারিভাষিক অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে উসূলবিদ, আরবী ভাষাবিদ ও তর্কশাস্ত্রবিদগণ বিভিন্নভাবে কুরআনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে এগুলো উপস্থাপন করা হলো -

ক. উসূলবিদ ও আরবী ভাষাবিদগণের নিকট কুরআনের পারিভাষিক সংজ্ঞা ঃ ইমাম আহমদ মুল্যাজিয়্যুন (র.) কুরআনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন এভাবে-

 أما الكتاب فالقرآن المنزل علي الرسول صلي الله عليه وسلم المكتوب في المصاحف المنقول عنه نفلا متواترا بلا شبهة.

কিতাব বলতে এমন কুরআনকে বুঝায়, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে সন্দেহাতীতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।” (মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আন্ওয়ারুল মানার শরহে নুরুল আনওয়ার,(ঢাকা : ইসলামিয়া কুতুবখানা, ২০০২ খৃ.) পৃ.৭)

খ. প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা মুহাম্মদ আলী আস্-সাবূনী বলেন,

هو كلام الله المعجز المنزل علي خاتم الانبياء والمرسلين بواسطة الالمين جبرائيل عليه السلام، المكتوب في المصاحف، المنقول الينا بالتواتر، المبدأ بسورة الفاتحة، المختتم بسورة الناس-

আল-কুরআন হল এমন (আসমানী) গ্রন্থ যা সূরা ফাতিহা দ্বারা শুরু এবং আন-নাস দ্বারা সমাপ্ত।” (মুহাম্মদ আলী আস-সাবূনী, আত-তিব্ইয়ান ফী উলূমিল-কুরআন, (দামিশক: মাকতাবাতুল - গায্যালী, ২য় সং., ১৯৮১ খৃ.), পৃ. ৬)

গ. আল্লামা মান্নাআল-কাত্তান (র.) বলেন-

القران هو كلام الله ،المنزل علي محمد صلي الله عليه وسلم، المتعبد بتلاوته.

কুরআন আল­াহ তায়ালার কালাম। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর ইহা অবতীর্ণ হয়েছে। এর তেলাওয়াত করা ইবাদত হিসেবে গন্য করা হয়।আল-কাত্তান, মাবাহিস ফী উলূমিল-কুরআন,  পৃ. ২১)

ঘ. ড. সুবহী সালিহ (র.) কুরআনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-

هوالكلام المعجز المنزل علي النبي صلي الله عليه وسلم المكتوب في المصاحف، المنقول عنه بالتواتر، المتعبد بتلاوبه.

ইহা মুহাম্মদ স. এর উপর নাযিলকৃত এমন এক মুজিযাপূর্ণ বাণী যা মুসাহিফে লিপিবদ্ধ, তাঁর থেকে ধারাবহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং যা তিলাওয়াতের মাধ্যমে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত।

ঙ. আল- কুরআন এর সংজ্ঞা সম্পর্কে ফিক্হ ও উসূলবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো:

 إنه اللفط المنزل على النبي صلى الله عليه من أول الفاتحة إلى آخر سورة الناس .

নবী করীম স. এর উপর অবতীর্ণ সূরা ফাতিহাথেকে সূরা নাসপর্যন্ত সকল বাণীই হলো আল- কুরআন।” (মান্নাআল-কাত্তান, মাবাহিছ ফী উলূমিল-কুরআন,  পৃ. ২১)

চ. আল্লামা যারকানী বলেন:

إن القرآن علم أي كلام ممتاز عن كل ما عداه من الكلام الإلهي.

আল কুরআন হলো আল­াহর অন্যান্য কালাম বা বাণী থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনন্য উৎকৃষ্ট এক ধরণের বাণী যা তার পুর্ববর্তী সকল ওহী থেকে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

আরবী ভাষাবিদদের কেউ কেউ আবার কুরআনের সংজ্ঞা প্রদানে সংক্ষিপ্ত নীতি অবলম্বল করেছেন। আরবী ভাষাবিদ আল্লামা আমাদী (র.) তাঁর প্রখ্যাত আল-আহকামগ্রন্থে বলেন,

إن القران هو الكتاب المنزل.

নিশ্চয় কুরআন এটি একটি নাযিলকৃত গ্রন্থ।বিশিষ্ট আরবী সাহিত্যিক ও পণ্ডিত ড. ত্বা-হা হুসায়ন কুরআনের সংজ্ঞায় বলেন, “আল-কুরআন এর ছন্দ পুরোপুরি গদ্য নয়। অথচ সাহিত্যের গদ্যরীতির অনুপম সরল গভীরতার সংগে বলিষ্ঠ গাম্ভীর্য এবং তার মাধ্যমে অভিব্যক্তি ভাব সম্পদের প্রকাশ নজীর বিহীন। এর আংশিক বা পুরোপুরি পদ্য ও নয়। অথচ পদ্যের সাবলীল ভাব মাধুর্য্যরে মোহমায় পরিবেশ সর্বজনে হৃদয় ভেদ করে এর সূর মূর্ছনা, আবেগ সৃষ্টির অন্তর প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি পূর্ণ মাত্রায় বিরাজিত।” (ড. ত্বা-হা হুসায়ন, হাদীছুশ- শেরওয়ান-নছর, (কায়রো: তাবআহ মিসরিয়্যাহ, তা.বি.), পৃ. ২৫)

খ্যাতিমান মনীষীদের দৃষ্টিতে আল-কুরআনের পরিচয় ঃ

আল কুরআনের অলৌকিকতা, মাধূর্য ও সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে বিশ্বের বহু অমুসলিম মনীষী এর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন। নিম্নে কতিপয় বরেণ্য  মনীষীর মতামত পেশ করা হলো-

 রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডঃ ওয়াসওয়েল মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অপূর্ব মুজিযা দেখে বলেন- আল-কুরআনের প্রজ্ঞাপূর্ণ বিধানগুলো এতই কার্যকরী এবং সর্বকালের জন্য এতই উপযোগী যে, সর্বকালের দাবী পূরণ করতে তা সক্ষম। মুখর জনপদ, শূন্য মরুভূমি, কর্ম-কোলাহলপূর্ণ নগরী এবং রাজ্য থেকে রাজ্যান্তর- সর্বত্রই এ বাণী সমভাবে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হয়।

 স্যার ডায়মন্ড বার্গ এর দৃষ্টিকোণে, “আল-কুরআনের আইন-কানুন শাহানশাহ্ থেকে শুরু করে পর্ণকুটিরের অধিবাসী পর্যন্ত সকলের জন্যই সমান উপযোগী এবং এতই যুক্তিযুক্ত যে, তার কোন বিকল্প কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

  ঐতিহাসিক গীবন লিখেছেন, “জীবনের প্রতিটি শাখার কার্যকরী আইন আল-কুরআনে মওজুদ আছে।

  প্রখ্যাত মনীষী দ্যা-লা ভিনিথেটের  দৃষ্টিতে, “কুরআন হচ্ছে মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসের সনদ ও গঠনতন্ত্র, যা বর্তমান দুনিয়ার মানুষকে কল্যাণের প্রতিশ্রতি এবং আখেরাতে মুক্তির আশ্বাস দিয়েছে।

  এফ আর. বুথ নট বলেন- সাহিত্য শৈলীর বিচারে কোরআন হচ্ছে আধা পদ্য আধা গদ্যের সংমিশ্রণে রচিত বিশুদ্ধতম আরবীর নমুনা।

  ফ্রান্সের অন্যতম বিজ্ঞানী ডঃ মরিস বুকাইলী আল-কুরআন সম্পর্কে বলেন, “আমরা দেখেছি কুরআনের বিজ্ঞান সংক্রান্ত এমন একটি আয়াতও নেই, যা বৈজ্ঞানিক বিচারে অসঠিক। বাইবেলে ভুলের পরিমাণ যেখানে পর্বতসমান সেখানে আল-কুরআনের কোন আয়াতে একটি মাত্র ভুলও আমি খুঁজে পাইনি। বৈজ্ঞানিক তত্ত¡ ও তথ্য সম্বলিত আল-কুরআনের আয়াতের সংখ্যা প্রচুর। আর এ সব বাণী আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে কিভাবে এতো বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারল, সে বিষয়টাই আমাকে বিস্মিত করেছে সব চাইতে বেশী।

  জার্মান কবি গ্যাটের দৃষ্টিতে, “কুরআনের ভাষা, ভাব, উদ্দেশ্য, রীতি পদ্ধতি অতি ভক্তি উৎপাদক ও মহান এবং এ কারণে যুগ যুগ ধরে এ পুস্তকটি অসামান্য প্রভাব বিস্তার করে থাকবে।

  প্রখ্যাত মনীষী টমাস কারলাইল বলেন - ““এমন একজন মানুষের কথা, অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর বাণী আল-কুরআন যেন সরাসরি প্রকৃতির অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত। অন্য সব বাদ দিয়ে মানুষের এ সব শুনা উচিৎ। কারণ এ বাণীর তুলনায় অন্য সব কিছুই ফুৎকার সম।

অমুসলিম মনীষীদের আলোচ্য মন্তব্য থেকে তিনটি সত্য ফুটে উঠে।

(এক). পবিত্র কোরআন এক জীবন্ত মুজিযা, পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ ও মানব রচিত গ্রন্থ এমন শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার ও বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা প্রশংসিত হয়নি।

 (দুই). কুরআন প্রদত্ত জীবন বিধান, মানব জাতির সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের রাজপথ, যার কোন বিকল্প নেই, বিকল্প হতে পারে না।

 (তিন). বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত রাসূল (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, যার কোন নজির নেই, নজির হতে পারে না। (মাওলানা মোঃ ছফিউল­াহ মাহমুদী, আল- কোরআন শ্রেষ্ঠ মো'জেজা, ১ম প্রকাশ (আল এছহাক প্রকাশনী আগস্ট, ১৯৯৭ ইং) পৃ. ২৫-৩০)

শাব্দিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণের পর প্রতিয়মান হয় যে, আল কুরআন মহান আল্লাহ তাআলা র বাণী; যা রাসূল (সা.) এর জীবদ্দশায়, সুদীর্ঘ তেইশ বছরে বিশ্ব মানবতার ভিন্ন প্রয়োজনে জীবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে আরবী ভাষায় যে কিতাব নাযিল হয় তাই মহাগ্রন্থ আল-কুরআন।

এক নজরে আল কুরআনের পরিচিতি

আল্লাহ পাক তার বান্দার পথ নির্দেশের জন্য জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর পর্যায়ক্রমে (২৩) তেইশ বৎসরে যা অবতির্ণ করেছেন। তাই আল  কুরআন। এ আল কুরআনের বিধি বিধান পালন করার ও বাস্তবায়ন করা ফরজ। এটি এক নিখুঁত নির্ভূল ও পরিমন পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির এক মহাস্মারক।

১।  নাযিলের সময়কাল ৬১০ খিষ্টাব্দ। রমযান মাস ক্বদর রজনী।

২।  স্থান- আরবের, হেরা পর্বত গুহায় নাযিল হয়।

৩।  নাযিলের মোট সময়কাল ২২ বছর ৫ মাস ১৪ দিন।

৪।   প্রথম নাযলকৃত সুরা ফাতিহা।

৫। প্রথম নাযিলকৃত আয়াত হলো সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত।

৬।  প্রথম  শব্দ হলো- ইকরা (পড়)

৭। আল কুরআন নাযিল শেষ হয় ১১ হিজরী।

৮।  সর্বশেষ নাযিলকৃত সুরা আন নাসর।

৯। সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত সুরা বাকারার ২৮১ নং আয়াত।

১০।  সর্ববৃহৎ সুরা সুরাতুল বাকারা

১১।  সবচেয়ে ছোট সুরা সুরাতুল কাওছার। আয়াত-৩।

১২।   মোট সুরা ১১৪টি

১৩।   মাক্কি সুরা ৮৯ টি

১৪।   মাদানী সুরা ২৫ টি

১৫।   আল কুরআনে পারা ৩০টি

১৬। মনজিল ৭টি

১৭।   রুকু মোট ৫৬১টি

১৮।   মোট আয়াত ৬৬৬টি

১৯।  মানসুখ আয়াতের সংখ্যা ৫ মতান্তরে ১৯

২০। আয়াতে প্রকার তিন - ১. হালাল ২. হারাম ৩. আমছাল।

২১। শব্দের দিক দিয়ে দুই ধরনের- ১. মুহকাম  ২. মুতাশাবিহ

২২। আয়াতের ধরণ ঃ

ক.  আদেশ সূচক আয়াত ১০০০

খ. নিষেধ সূচক ১০০০

গ. সুসংবাদ সুচক ১০০০

ঘ. ভীতি প্রদর্শন সূচক ১০০০

ঙ. কাহিনীমূলক ১০০০

চ. দৃষ্টান্ত মূলক ১০০০

ছ. হালাল সংক্রান্ত ২৫০

জ. হারাম সংক্রান্ত  ২৫০

ঝ. দোয়া, জিকির ও তাসবীহ সংক্রান্ত ১০০টি

২৩। মোট শব্দ ৭৭,৪৩৯টি অথবা ৭৬,৪৪০টি

২৪। মোট অক্ষর ৩,২৩,৬৭১টি

২৫। ওয়াকফ (বিরতির চিহ্ন) মোট ৫,৫৮৪টি।

২৬। মোট হরকত জের ৩৯,৫৮২টি

২৭। মোট যবর ৫২,৫৮২টি

২৮। মোট পেশ- ৮,৮০৪টি

২৯। মোট জযম - ১,৭৭১টি

৩০। মোট নুকতা - ১,০৫,৬৮১টি

৩১। মোট তাশদীদ ১,৪৫৩টি

৩২। মাদ ১,১৭১টি

৩৩। আরিফামদুদাহ ২৪০টি

৩৪। সর্ব প্রথম মুকতাত্ত হরকত প্রবর্তন করেন, আবুল আসওয়াদ দুয়াইলী মতান্তরে হজাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ।

৩৫। তিলাওয়াতে সিদাজ ১৪ টি

৩৬।  সাকতার সংখ্যা ৪টি

৩৭। আল কুরআনের নাম ৫৫টি

৩৮। আল কুরআনে হরফের সংখ্যা ২৯টি

৩৯। আলিফ ৪৮,৪৭৬টি

৪০। বা - ১১,৪৪২টি

৪১। তা - ১০,১৯৯টি

৪২। ছা - ১,২৭৬টি

৪৩। জিম ৩,২৭৩টি

৪৪। হা ৩,৯৭৩ টি

৪৫। খা ২,৪৪৬ টি

৪৬। দাল- ৫,৬৪২টি

৪৭। ঝাল ৪,৬৭৭টি

৪৮। রা- ১১,৭৯৩টি

৪৯। যা- ১,৫৯৩ টি

৫০। সিন- ১,৮৯১টি

৫১।   শিন- ২,২৫৩টি

৫২। ছোয়াদ ২,০১৩টি

৫৩। দ্বোয়াদ - ১,৬০৭টি

৫৪। ত্বোয়া - ১,২৭৭টি

৫৫। যোয়া- ৮৪২ টি

৫৬। আইন ৯২২০ টি

৫৭। গাইন- ২,১০৮টি

৫৮। ফা- ৮,৪৯৯ টি

৫৯। ক্বাফ- ৬,৮১৩টি

৬০। নুন - ৪৫,১৯০টি

৬১। লাম ৩৩,৪৩২টি

৬২।  মীম ২৬,৫৬০টি

৬৩।   নুন - ৪৫,১৯০ টি

৬৪। ওয়াক্ত- ২৫,৫৩৬ টি

৬৫।  হা- ১০,০৭০টি

৬৬।   লাম আলিপ ৪,৭২০টি

৬৭। ইয়া  ৪৫,৭২০টি

৬৮।  কুরআন শব্দটি এসেছে ৬১টি বার

৬৯। আল্লাহ এসেছে ২,৬৯৮বার

৭০। রব এসেছে ৯৭ বার

৭১।  রাহমান এসেছে ৫৭ বার

৭২। রাহিম এসেছে ১১৪বার

৭৩। মুহাম্মদ (সা.) ৪ বার

৭৪। আহমদ ১বার

৭৫। লা ইলাহা ইল­াল­াহ ২বার

৭৬। সালাত ৮২ বার

৭৭। যাকাত ৩২বার

৭৯। বিভিন্ন নবী রাসুলের নাম ২৬ জনের

৮০। ফেরেস্তা ৪ জনের নাম

৮১।   ছরব শব্দটি ৭২ বার

৮২। শয়তান শব্দটি  ৮৫ বার

৮৩। ইবলিশ শব্দটি ১১ বার

৮৪। জ্বিন দের প্রসংগ ৩২ বার

৮৫। মুসা (আ.) নাম ১৩৫ বার।

৮৬।  আল্লাহ দ্রোহীদের নাম ৬ জনের

৮৭। বিসমিল্লাহ নেই সুরা তাওবায়।

৮৮। বিসমিল্লাহ ২ বার সুর নামলে।

৮৯। মিম নেই সুরা কাওসারে।

৯০। সুরা কাফিরুনে ৯বার মিম এসেছে।

৯১।   কোরআনে বর্ণিত ১জন সাহাবীর নাম এসেছে হযরত যায়িদ (রা.)

৯২। কোরআনে বর্ণিত ১ জন নারীর নাম এসেছে মারইয়াম বিনতে এমরান (আ.)

৯৩। কোরআনে প্রথম ওহি লেখক হযরত যায়েদ বিনতে সাবিত (রা.)

৯৪। তরজুমানুল কোরআন বা কোরআনের মুখপাত্র হযরত আব্দুলল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)

৯৫।  কুরআনকে পূর্ণাঙ্গ লিখিত রূপ দেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৬৩৩ খৃ:

৯৬।  কুরানের প্রথম সংকলক হযরত ওসমান (রা.)

৯৭। কুরআনের প্রথম ভাষ্যকার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)

৯৮। কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক, আমির উদ্দিন রসুনীয়অ।

৯৯।  কুরআনের বাচন ভঙ্গি অতি প্রাঞ্জল বক্তিতা পূর্ণ

১০০। আল কুরআনের উদ্দেশ্য মানুষের হিদায়াত।

১০১। আল কুরআনের উদ্দেশ্য মানুষের মানুষের হিদায়াত।

চলবে

 

লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা

ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান

সেক্রেটারি:

শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে- 

ইমাম ও খাতিব:

মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে

সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:

নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে

 প্রিন্সিপাল:

আর রাহমান একাডেমি ইউ কে

পরিচালক:

আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে

📞07476136772 📞 07476 961067

nrahmansky@googlemail.com

Arrahmaneducationtust@gmail.com

https://www.facebook.com/Imam.Nurur

https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/

https://www.youtube.com/user/nurur9


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here