সত্যের সন্ধানে, পর্ব-৬
।। ইমাম
মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।
সত্যের সন্ধানে
পর্ব-৬
সত্যের সন্ধানে পর্ব-৫ পড়তে ক্লীক করুন এখানে
পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর
আল-কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট, উপমা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে
ও আলোচ্য বিষয়
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিলের প্রেক্ষিত বা প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আল্লাহ তাআলা
যেসব প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আল কুরআনের আয়াত নাযিল করেন তাকেই আসহাবে নুযুল বলা
হয়। প্রতিটি আয়াত বা সূরা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও কারণে অথবা উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করেছেন।
সাবাবুন-নুযূলের সংজ্ঞায় যারকানী বলেন-“কোন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সেই
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় উলেখ করে বা ঐ ঘটনার সংঘটিত হওয়ার
কালে ঐ ঘটনার হুকুম বর্ণনা করে এক বা একাধিক আয়াত নাযিল হওয়াকে সাবাবুন-নুযূল বলে।” (মুহাম্মদ আলী
আস-সাবূনী, আত-তিবইয়ান ফী উলূমিল কুরআন, পৃ. ১৭)
আল-কুরআনের আয়াতসমূহকে বুঝার ক্ষেত্রে আসবাবুন-নুযূল এর জ্ঞান অত্যন্ত
জরুরী। আর এ কারণেই অধিকাংশ আলেম আসবাবুন-নুযূল এর জ্ঞানের উপর গুরুত্বারোপ
করেছেন। শানে নুযূল সম্পর্কে অনেক কিতাব রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে أسباب النزول ও لباب النقول في أسباب النزول উল্লেখযোগ্য।
আল-কুরআনের আয়াতসমূহকে নাযিল হওয়ার দিক থেকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। কোন কারণ
ছাড়াই অবতীর্ণ আয়াত অথবা ঘটনা বা জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ আয়াত।
নুযূলের দিক থেকে আয়াতের প্রকারভেদ
(ক) কোন বিশেষ ঘটনার সাথে
সম্পৃক্ততা ছাড়াই কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াত নাযিল হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের উদ্দেশ্যে এ সকল আয়াত নাযিল করেন।
(খ) কোন বিশেষ ঘটনা অথবা কোন
জিজ্ঞাসার জবাবে কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল হয়। মুফাস্সিরগণের পরিভাষায় এ ধরণের
বিশেষ ঘটনাকে বলে সাবাবুন-নুযূল বা শানে নুযূল।
ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিলের উপমা
খাব্বাব ইব্ন র্আত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ছিলাম কর্মকার। আস ইব্ন ওয়ায়েল আমার থেকে ঋণ গ্রহণ করে। আমি ঋণ তাগাদায়
তাঁর নিকট গেলাম। তখন সে আমাকে বলল, তুমি রাসূল (সা.) এর প্রতি কুফরী
এবং লাত ও ওয্যার পূজা না করা পর্যন্ত আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করব না। তখন আমি বললাম, আমি কুফুরী করব না যতক্ষণ না তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যু দিয়ে পুনরায় জীবিত
করেন। তখন সে বলল, আমি কি মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত
হব? এরূপ হলে তুমি আমাকে ঐদিন পর্যন্ত সময় দাও। কারণ, তখন আমাকে ধন-দৌলত এবং সন্তান-সন্তুতি প্রদান করা হবে। আর আমি তখন তোমার ঋণ
পরিশোধ করব। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ
بِآَيَاتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا . أَطَّلَعَ الْغَيْبَ أَمِ
اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا . كَلَّا سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ وَنَمُدُّ لَهُ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا . وَنَرِثُهُ مَا
يَقُولُ وَيَأْتِينَا فَرْدًا.
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান
করে এবং বলে, আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান দেয়া হবেই। সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে
অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? কখনই নয়, তারা যা বলে আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখব এবং তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব।
সে যে বিষয়ের কথা বলে তা থাকবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসবে একা। (আল-কুরআন, সূরা মারইয়াম: ৭৭-৮০)
প্রশ্নের প্রেক্ষিত আয়াত নাযিলের উপমা
(ক) সাহাবীগণ একবার রাসূলুল্লাহ
(সা.) কে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ তা‘আলা কি আমাদের নিকট আছেন, না দূরে অবস্থান করছেন? তিনি আমাদের নিকটে অবস্থান করলে আমরা তাকেঁ গোপনে ডাকব। আর তিনি দূরে থাকলে
আমরা তাঁকে জোরে জোরে ডাকব। তখন আল-কুরআনের আয়াত নাযিল হয়-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ.
‘আমার বান্দাগণ যখন আপনাকে প্রশ্ন
করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি
তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন
করুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারাহ: ১৮৬)
(খ) একদিন মু’আয ইব্ন জাবাল (রা.) রাসূল (সা.) কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), ইয়াহুদী সম্প্রদায় আমাদের বেষ্টন করে আছে। তারা নব চাঁদ সম্পর্কে আমাদের
অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে। নব চাঁদ কেন সূ²াকারে প্রকাশ পায় এবং এরপর
বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পূর্ণ হয়ে গেলে গোলাকৃতি লাভ করে, এরপর আবার তা হ্রাস পেতে পেতে
পূর্ব অবস্থায় ফিরে যায়?
তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ
مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ
تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ
ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, তা মানুষ এবং হজ্জের জন্যে সময় নির্দেশক।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারা: ১৮৯)
আল-কুরআন নাযিলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আল্লাহ তা‘আলা মানবতাকে খেলাফতের দায়িত্ব
যথাযথভাবে পালনের গাইড লাইন হিসেবে আল-কুরআন নাযিল করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববাসীকে
অন্ধকারসমূহ থেকে এক আলোর দিকে নিয়ে আসা, মানুষের সকল দৌহিক, আত্মিক, সামাজিক ব্যাধি বা রোগ নিরাময়ের
জন্য মহোঔষধ, আলোর দিশারী হেদায়াত ও সত্য
মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে আল-কুরআন নাযিল করেছেন। নিচের আয়াতগুলোতে সেদিকেই
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-
الر كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى
صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ.
‘আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল
করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।’ (আল-কুরআন, সূরা ইব্রাহীম: ১)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
‘রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং
সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য
বিধানকারী।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারা: ১৮৫) অন্যত্র আল্লাহপাক ইরশাদ করেন:
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ
جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ . يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى
صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ.
‘হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে
আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন।
তোমাদের কাছে একটি নূর এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন
করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে
পরিচালনা করেন।’ (আল-কুরআন, সূরা মায়িদা: ১৫-১৬) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ.
‘হে মানবকুল! তোমাদের কাছে
উপদেশবাণী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হিদায়াত ও রহমাত মুসলমানদের জন্য।’ (আল-কুরআন, সূরা ইউনূস: ৫৭) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آَمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ
فِيهَا خَالِدُون.
‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি
বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচেছ
তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের
অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারা: ২৫৭) সুতরাং আমরা
বলতে পারি যে,
আল কুরআন
হিদায়াতের শ্রষ্ট আলোক বর্তিকা।
তাজকিয়া
নাফসের গাইড লাইন।
ভ্রান্ত
আকিদা অপনোদনে শানিত তলোয়ার।
শিরক মুক্ত
সমাজ ব্যবস্থার প্রমান্য দলিল।
পাপীদের
হুশরীয়ারী সংকেত।
কুফরী
মতবাদের মূলোৎপাঠনকারী
জাহিলিয়াত
নির্মুলের পতাকাবাহী
অন্ধকারে
মশালবাহী।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের
সৌরমালা।
শান্তি
প্রতিষ্ঠার অনন্য মাধ্যম।
ইসলামী
জীবনের রুপরেখা বর্ণনা।
রাষ্ট
পরিচালনার ফর্মুলা
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত
সমাজ গঠনের নির্দেশনা।
মানজাতীর
কল্যাণ কামনা।
ইসলামী সমাজ
ব্যবস্থার চিরস্থায়ী দলিল।
বিশ্বমানবতার
মুক্তির সনদ
বিশ্বশান্তির
পথ
জান্নাত
লাভের চুরান্ত সিড়ির পথ।
নেককারদের সু
সংবাদ দাতা।
আল্লাহর
সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের রাজপথ।
সেরা মানবের
সু সুংবাদ দাতা।
মানবাত্বার
সুসভ্যকরণ।
সত্যপথের
সন্ধানদাতা।
সুষ্ট সুন্দর
পরিবার গঠনের দিক নির্দেশক।
পুর্ববর্তী
কিতাবের সত্যায়নকারী।
নারীর অধিকার
প্রতিষ্ঠায় বজ্র কন্ঠ।
একত্ববাদের
ভিত্তিভূমি।
সত্যমিথ্যার
পার্থক্যকারী।
আল্লাহর
পরিচিতি তত্ত¡।
কিয়ামতের
ধারা বর্ণনা।
ইনছাফপূর্ণ
সমাজ কায়েমের সূর্য সৈনিক।
সুদমুক্ত
সমাজপ্রতিষ্ঠর প্রধান সিপাহসালার।
শ্রেষ্ঠ
উম্মতে ষোষনাকারী।
আতীত
ইতিহাসের স্মারক।
রিসালাতের
ঘোষণাকারী।
আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়
আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষ বা মানবতাকে কেন্দ্র করে আল-কুরআন
তার সমস্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। খলিফা হিসেবে তার সামগ্রিক জীবনের সব দিক-বিভাগ, জীবন প্রণালী, ইহকাল-পরকালের সাফল্য ব্যর্থতা
সবই বিস্তৃত আল কুরআনের গোটা বক্তব্যে।
বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে আল-কুরআনকে চারভাগে ভাগ করা যায়। আল-কুরআনের আয়াতগুলো এ চারটির যেকোনো একটির আওতাভুক্ত।
নিম্নে বর্ণনা করা হলো- যেমন:
ক. আকাইদ;
খ. আহাকাম;
গ. ঘটনাবলী এবং
ঘ. উপমা-উদাহরণ।
ক. আকাইদ
আল-কুরআন তিনটি মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসকে প্রমাণ করে। যেমন:
১. তাওহীদ: (আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস)। তাওহীদ দ্বারা
উদ্দেশ্য হচ্ছে, একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে
আল্লাহ তা‘আলাই সমস্ত ক্ষমতার উৎস। সৃষ্টিগজতের প্রত্যেকটি
অণু-পরমাণু মাত্র এক শ্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে বিশ্বাস করা। মানুষ তারই ইবাদত করবে।
তাকেই ভয় করবে। তাঁরই নিকট কল্যাণ চাইবে। অন্তরে এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির প্রতিটি কণা তাঁরই ক্ষমতাধীন। তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কেউ
এদিক-সেদিক করতে সক্ষম নয়।
২. রিসালাত: (আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নবী-রাসূল প্রেরণের
প্রতি বিশ্বাস)। রিসালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাসূল (সা.) ও তাঁর পূর্ববর্তী
নবী রাসূলকে আল্লাহর মনোনীত প্রেরিত সত্য নবী হিসেবে মেনে নেয়া। তিনি যে বিষয়কে হক
বলেন, সেটাকে হক হিসেবে মেনে নেয়া এবং যে বিষয়কে বাতিল
বলেন, সেটাকে বাতিল বলে মেনে নেয়া।
৩. আখিরাত: (পরকালের প্রতি বিশ্বাস)। আখিরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর ঈমান রাখা। যা হবে চিরস্থায়ী। তখন প্রত্যেক
মানুষকে তার পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে। নেককার হলে সে জান্নাতের
অসংখ্য নিয়ামতের অধিকারী হবে, আর যদি বদ আমলের মাধ্যমে দুনিয়ার
জীবনকে বরবাদ করে থাকে, তাহলে সে জাহান্নামের চিরস্থায়ী
আযাবের সম্মুখীন হবে।
খ. আহকাম
আল-কুরআনুল কারীমের দ্বিতীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে আহকাম। এতে যে আহকাম বর্ণনা করা
হয়েছে,
প্রকারভেদে আমরা সেগুলোকে
তিনভাগে বিভক্ত করতে পারি :
প্রথমত: যে সব আহকাম যা শুধু আল্লাহর হকের সাথে সম্পৃক্ত।
যাকে আমরা বলি ইবাদত। পবিত্রতা, নামায, রোযা, হ্জ্জ, যাকাত ও কুরবানীর আহকাম এ
প্রকারের আওতাভূক্ত।
দ্বিতীয়ত: দ্বিতীয় প্রকারের আহকাম শুধু বান্দাহর হকের সাথে
সম্পৃক্ত। যাকে আমরা বলি মু‘আমালাত। যেমন: ব্যবসা, বিচার, সাক্ষ্য, আমানত, যাবাইকৃত জানোয়ারের গোশত খাওয়া, বিভিন্ন পানীয় ব্যবহার, মীরাস ইত্যাদি বিষয়ের বিধি-বিধান
আল-কুরআনেই বিদ্যমান আছে।
তৃতীয়ত: এমন আহকাম, যাতে রয়েছে ইবাদাত ও মুআমালাতের
মিশ্রণ। এ প্রকারের মধ্যে রয়েছে বিবাহ-তালাক, হুদুদ-তা‘যিরাত বা অপরাধ দমন আইন, দিয়ানত, কিসাস, জিহাদ, ঈমান, শপথ, যৌথ কারবার ইত্যাদি বিধি-বিধান
আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
গ. ঘটনাবলী
আল-কুরআনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হচ্ছে- কাহিনী ও ঘটনাবলী। এটা
দুভাগে বিভক্ত: অতীতের ঘটনাবলী ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী
অতীতের ঘটনাবলী
আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা অতীতের ঘটনাবলীর মধ্যে নবী ও
রাসূলদের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও নেককার ও বদকার ব্যক্তি ও স¤প্রদায়ের উপর আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত ও শাস্তির ঘটনা
বর্ণনা করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য ঘটনাবলী
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে ভবিষ্যত বাণী
হিসেবে ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য কিছু ঘটনাও উলেখ করেছেন। এ ধরনের ঘটনার মধ্যে
রয়েছে কিয়ামতের লক্ষণসমূহ, কিয়ামতের অবস্থা, হাশর-নাশরের দৃশ্য, দোযখের ভয়াবহতা ও বেহেশতের মনোরম
পরিবেশের অগ্রীম সংবাদ। এছাড়া কিয়ামতের পূর্বে ভূমি থেকে অদ্ভূত এক প্রাণীর প্রকাশ, ইয়াজুয ও মাজুযের আত্মপ্রকাশ, ইসরাফীলের শিঙ্গায় ফুঁক, প্রশ্ন-উত্তর, জাহান্নামীদের পরস্পারিক কথোপকথন
ইত্যাদি আল-কুরআনে একাধিক স্থানে বর্ণিত রয়েছে।
ঘ. উপমা-উদাহরণ
আল-কুরআনের অসংখ্যা জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা অনেক উপমা ও উদাহরণ পেশ
করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কীটপতঙ্গ, বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠী, প্রাচীন অসংখ্য সম্প্রদায়ের ধ্বংসের ঘটনা উদাহরণ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে
তুলে ধরেছেন।
চলবে
ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান
সেক্রেটারি:
শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে-
ইমাম ও খাতিব:
মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে
সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:
নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে
প্রিন্সিপাল:
আর রাহমান একাডেমি ইউ কে
পরিচালক:
আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে
📞07476136772 📞 07476 961067
nrahmansky@googlemail.com
Arrahmaneducationtust@gmail.com
https://www.facebook.com/Imam.Nurur
https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/
https://www.youtube.com/user/nurur9
0 coment rios:
You can comment here