।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।
সত্যের সন্ধানে
পর্ব-৭
সত্যের সন্ধানে পর্ব-৬ পড়তে ক্লীক করুন এখানে
পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর
কুরআনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
একটি বিপ্লবী
আন্দোলনের উপযোগ্
সমর্থকদের
উদ্দীপিত করার মত সম্মোহক।
বিরুধীদের
প্রতিহত করতে বলিষ্ট
বিপ্লবী
নেতার ঝংকারময় ভাষা।
মন মগজ
বুদ্ধি-বিবেককে উদ্বুদ্ধ করার মত এবং ভাবাবেগে প্লাবন সৃষ্টি করার যোগ্য।
দরদী মন দিয়ে
মানুষের হৃদয় জয় করার মত আবেগময় আহবান।
ইসলামী
বিধানের দৃষ্টি ভঙ্গী সম্পন্ন।
একই বিষয়কে
বিভিন্ন ভঙগীতে বিভিন্ন অঙ্গিকে ুপস্থাপন।
১) আল-কুরআনে বর্ণিত বিষয় সমূহের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ না
থাকা
কুরআনে অসংখ্য
বিষয়ের অবতারনা করা হয়েছে। সকল বিষয়, বর্ণনা বিভিন্ন
স্থানে এসেছে। আলাহ বলেন,
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ
الْقُرْآَنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ
اخْتِلَافًا كَثِيرًا
“যদি কুরআন আলাহ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে রচিত হয় তবে তারা তাতে বহু বৈপরিত্য
দেখতে পাবে।”
আল-কুরআন, সূরা নিসা : ৮২।
কুরআন মজিদ প্রদত্ত কোন তথ্য বা বিষয়ের মধ্যে বৈপিরত্য
নেই। মানুষের কথা,
চিন্তা, উপস্থিত তথ্য, ক্ষমা, বাচনভঙ্গি ইত্যাদির মধ্যে
এ ধরনের সামঞ্জস্য পাওয়া অসম্ভব।
২) সংক্ষিপ্ততা ও সহজবোধ্যতা
সংক্ষিপ্ততা ও
সহজবোধ্যতা যে কোন লেখালেখির জন্য অন্যতম দুটি প্রধান গুণ। কারও কারও লেখায় বেশ সংক্ষিপ্ততা
লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে বিশেষ পন্ডিত বলে যারা পরিচিত, তারা সংক্ষেপে ইশারা ইংগিতের মাধ্যমে মূল কথাটি সোজাসুজি বলে
ফেলেন। এরূপ সহজভাবে ও সরলতার সাথে বলা বা বর্ণনা করা কিন্তু সহজ কাজ নয়। ইংরেজীতে
একটা কথা আছে ওঃ রং হড়ঃ বধংু ঃড় ৎিরঃব রহ বধংু ষধহমঁধমব. অর্থাৎ সহজ করে বলা বা লেখা
সহজ নয়। ঠিক তেমনি ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে পুরো বিষয়টা পাঠকের কাছে সঠিক ভাবে তুলে ধরা
সেটাও কিন্তু সহজ নয়,
খুব কম লেখকই তা পারেন।
কুরআন সংক্ষিপ্ত
ও সহজ ভাবে তার বক্তব্য মানবজাতির সামনে পেশ করেছে। এটা কুরআনের বিশেষ মু‘জিযা। কুরআনকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যেখানে মানুষের
প্রয়োজনে যে সব তথ্য,
তত্ত¡, উপদেশ, নিদর্শন যা ইহকাল পরকাল দুই কালের কথা গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা
করার জন্য প্রয়োজন। সবকিছুই সমাবেশ এতে দেখা যায়। কোন কোন বিষয় অধিকতর গুরুত্ব সহকারে
বোঝানোর জন্য বারবার বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে সীমিত জ্ঞানের মানুষ সেটা বুঝে নিতে পারে।
দিদারুল ইসলাম,
কুরআনের প্রকাশ ভঙ্গি ও ভাষা অলংকার, দ্বিতীয় প্রকাশ (ইফাবা : ২০০৫), পৃ. ৮৯।
মহাগ্রন্থ আল
কুরআনে সংক্ষিপ্ত আকারে ও ভাষায় যেসব বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা
হলো।
১. সূরা ফাতিহা ঃ কুরআনে সন্নিবেশিত প্রথম সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ
وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ
أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
“সকল প্রশংসা আল−াহর
যিনি সারা জাহানের রব। যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। যিনি
বিচার দিনের মালিক। আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
তুমি আমাদেরকে সরল সহজ পথ দেখাও। তাদেরই পথ যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ করেছে। তাদের পথ নয়
যারা অভিশপ্ত ও গুমরাহ হয়েছে।” আল-কুরআন, সূরা ফাতিহা : ১-৭।
খুব ছোট আকারে
সাতটি আয়াত নিয়ে এই সূরা। এই ছোট সূরাটি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল-কুরআনে সূরা হিজর
এ উলেখ করা হয়েছে ঃ
وَلَقَدْ آَتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآَنَ
الْعَظِيمَ
“আমিতো আপনাকে
সাতটি পুনরাবৃত্তিশীল আয়াত এবং এই মহান কুরআন দান করেছি।”
এই ছোট সূরাটি
নিয়ে গবেষকরা অনেক বৃহৎ আকারে গ্রন্থ রচনা করেছেন। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ উম্মুল
কুরআন নামে প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার সুপরিসর একটা গ্রন্থ রচনা করেছেন। এবং এই সূরাটির বাক্য
শব্দ ও সামগ্রিক অর্থ ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন। এই সূরাটিতে আমরা অতি সংক্ষেপে
অত্যন্ত বিশাল ব্যাপার সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি। যেমন আল−াহর গুনাবলীর যথাযথ পরিচিতি, মানুষের কর্মফলে বিশ্বাস অর্থাৎ ভাল মন্দ কর্মের বিচার এবং এর
জন্য পরকালে বিশ্বাস এবং সব গোনাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অর্থাৎ ভাল পথে চলার জন্য
ও মন্দ পথ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য আল−াহর সাহায্য কামনা ইত্যাদি। প্রার্থনার সুরে
সূরাটি গাঁথা হয়েছে এবং এর সঙ্গে ছন্দের মিল অপূর্ব এবং প্রতিটি শব্দের জ্যোতি অত্যন্ত
উজ্জ্বল। দিদারুল ইসলাম,
কুরআনের প্রকাশ ভঙ্গি ও ভাষা অলংকার, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯১।
২. সূরা ইখলাস ঃ কুরআনের সংক্ষিপ্ত
সূরার মধ্যে সূরা ইখলাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ছোট ছোট চারটি আয়াতের এই সূরা
নাযিল হয়েছে। অথচ এই ছোট সূরাটিকে সমগ্র কুরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ বলে হাদীস সূত্রে
ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন যে, সূরা ইখলাস পাঠ
করল কুরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করা হলো অর্থাৎ এই সূরাটি তিনবার পাঠ করলে একবার
সমগ্র কুরআন পাঠ করার সওয়াব পাওয়া যায়।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“বলুন তিনিই আলাহ এক ও অদ্বিতীয় আলাহ কারোর মুখাপেক্ষী
নন। তিনি কারো জনক নন। আর কারোর সন্তানও নন। আর কেউই তাঁর সমকক্ষ নেই। আল-কুরআন, সূরা ইখলাস।
৩. সূরা আত-তারিক এর ১৩ নম্বর আয়াতে সংক্ষিপ্ততার এক উৎকৃষ্ট
উদাহরণ। যেখানে বলা হয়েছে ঃ
إِنَّهُ لَقَوْلٌ فَصْلٌ
“নিশ্চয়ই এই কালাম
বা বাণী পার্থক্য বিধানকারী”। আল-কুরআন, সূরা আত-তারিক : ১৩।
এখানে শুধুমাত্র
একটা শব্দ ফাসলুন দিয়ে এমন ভাব ও বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে যার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে
গেলে কয়েক সহস্র শব্দ ব্যবহার করলে বর্ণনা পরিপূর্ণ হবে না। ফাসলুন শব্দের বাংলা অর্থ
করা হয়েছে পার্থক্য বিধানকারী। কুরআনকে বলা হয়েছে পার্থক্য বিধানকারী। এখন দেখা যাক
এই বিশেষ শব্দ ফাসলুন বা পার্থক্য বিধানকারী দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে। সমগ্র কুরআন যদি
আমরা একান্তচিত্তে অর্থ বুঝে পাঠ করি তবে আমাদের কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে
যে এর মাধ্যমে আলাহ মানুষকে অন্ধকার বা গুমরাহীর পথ থেকে আলোকের পথে নিয়ে আসার
পথ বাতলে দিয়েছেন।
৪. সূরা ছোয়াদ এর আয়াতটি সংক্ষিপ্ত বাক্য উলেখ করা হয়েছে। আলাহ বলেন
-
رَبُّ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
“যিনি আসমান ও
যমীন এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সে সবের রব।”
আল-কুরআন, সূরা ছোযাদ : ৬৬।
মাত্র কয়েকটি
শব্দ দিয়ে আয়াতটি রচিত হয়েছে, অথচ এই কয়টি শব্দ দ্বারা
সমস্ত বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং দেখা যায় যে আলাহ চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্রমন্ডলের যেমন প্রতিপালক তেমনি পৃথিবী, ছোট বড় সব জিনিস এবং পৃথিবী ও গগনমন্ডলের মাঝে যে ক্ষুদ্র ধূলিকণা
উড়ে বেড়ায় সেটারও তিনি প্রতিপালক। শুধু কয়েকটি শব্দ আকাশ মন্ডল ও পৃথিবী আর দুয়ের মাঝে
দিয়ে সত্যিকার অর্থে সবকিছু তার আওতাধীন সেটা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সহজবোধ্যতা
আলাহ তা’আলা কুরআনকে মানুষের
জন্য সহজ করে দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রত্যেক ভাষাভাষি মানুষের জন্য কুরআনকে বুঝা ও হৃদয়াঙ্গম
করা সহজ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন যে,
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا
الْقُرْآَنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
“আমিতো কুরআনকে
সহজ করে দিয়েছি। বুঝবার জন্য, কিন্তু চিন্তা করে দেখবার
মত কেউ আছে কি?”
আল-কুরআন, সূরা আল-কামার : ৩২।
কুরআনে এমন কিছু কিছু বর্ণনা আছে যেটা সামান্য জ্ঞান-সম্পন্ন
লোকের কাছেও বোধগম্য হবে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষ কোন অলঙ্কার ব্যবহার করা হয়নি, দ্ব্যর্থবোধক শব্দাবলী পরিহার করা হয়েছে এবং প্রয়োজনবোধে একই
জিনিসকে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে মানুষের বুঝতে সুবিধা হয়।
সূরা মায়িদায়
আলাহ তা’আলা ইরশাদ করেন -
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ
بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ
الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا
تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ
يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا
حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ
آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আলাহ তোমাদের বেহুদা কসমের জন্য তোমাদেরকে তা’আলাড়াও করবেন না। কিন্তু তা’আলাাপোক্ত কসমের জন্য অবশ্যই তা’আলাড়াও করবেন।
এ জন্য কাফফারা হচ্ছে দশজন অনাথকে মাঝামাঝি ধরনের খাবার একবেলা খাওয়াবে যা তোমরা পরিবারের
লোকদের খাইয়ে থাক কিংবা তাদেরকে জামা কাপড় দেয়া, নতুবা একটি গোলামকে মুক্তি দেয়া। যদি কারো সামর্থ্য না থাকে তবে সে তিনটি রোযা
রাখবে। এ হচ্ছে তোমাাদের শপথের কাফফারা। যখন তা তোমরা ভংগ করবে। তোমরা নিজেদের প্রতিজ্ঞার
হিফাযত কর। আলাহ তো এভাবেই তোমাদের জন্য তাঁর আয়াত সমূহ বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা
করেন। যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও”। আল-কুরআন, সূরা মায়েদা
: ৮৯।
এখানে আমরা পরিষ্কার
নির্দেশ লক্ষ্য করছি যা যে কোন লোকের কাছে সহজবোধ্য। নির্দেশের মর্মার্থ বুঝবার জন্য
এবং সম্ভাব্য ভুল বুঝাবুঝি নিরসনের জন্য নির্দেশ কিভাবে পালন করতে হবে সে সম্বন্ধে
পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে কোন ইঙ্গিত নয়।
যা সত্য সেটা
কুরআনে খুব সহজ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে করে মানুষ সে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে অসুবিধার
মধ্যে না পড়ে। সূরা ইমরানে বলা হয়েছে -
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ
بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ
وَالْإِنْجِيلَ
“তিনি আপনার প্রতি
সত্যসহ এই কুরআন নাযিল করেছেন যা আগেকার কিতাব সমূহের সত্যতা প্রমাণ করে। এর আগে তিনি
তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিল করেন”। আল-কুরআন, সূরা আল ইমরান : ৩।
এখানে পরিষ্কার
ভাবে বলা হয়েছে যে কুরআন আগেকার সব কিতাব সমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে। এই পরিষ্কার উক্তিটি
না থাকলে পূর্বেকার কিতাব সমূহ সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিত। এখানে আরও বলা
হয়েছে কুরআন নাযিলের পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিল করা হয়েছে। এখানে এ দুটির ব্যাপারে
সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে এ কারনে যে এই কিতাবগুলো তখন বেশ প্রচলিত ও সুপরিচিত ছিল।
দিদারুল ইসলাম,
কুরআনের প্রকাশ ভঙ্গি ও ভাষা অলংকার, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৬।
আইন সংক্রান্ত
আরো অনেক সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী কুরআনে নাযিল হয়েছে। যেগুলোর ভাব অথবা শব্দার্থ নিয়ে
কোন প্রকার সন্দেহ সংশয় বা ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই।
যেমন সূরা মায়িদায়
বলা হয়েছে ঃ
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً
بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
“যে কেউ চুরি করবে
চাই সে পুুরুষ কিংবা নারী হোক, তোমরা তাদের হাত দুটি
কেটে ফেল। এ হচ্ছে তাদের কর্মফল। আলাহর কাছে থেকে
উচিত শিক্ষা হিসাবে,
যা তারা কামাই করছে তারই ফল। আলাহ মহান পরাক্রমশালী ও পরম কুশলী।” আল-কুরআন, সূরা মায়িদা : ৩৮।
সম্বোধন ও উপস্থাপন
রীতি আল কুরআনের একটি মু‘জিযা। কুরআনে সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করা হয়েছে। দায়সারা গোছের
নয়। চেতনাকে উদ্ধুদ্ধ করে;
হৃদয়গ্রাহী ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে বার বার মানব জাতিকে সঠিক
মূল্যায়ন করেছে। সম্বোধন বাক্য ব্যবহার করে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা অধিকতর সহজ ও
কার্যকরী। কুরআনে কখনো মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে, আবার কখনো মানুষ ও জ্বীন উভয়কে একত্রে সম্বোধন করা হয়েছে। সম্বোধন করার পর আলাহ তার বক্তব্য রেখেছেন। কখনো উপদেশ, কখনো সাবধান বাণী, কখনো সুসংবাদ
ইত্যাদি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সাধরণভাবে বলার চাইতে সম্বোধন করে বলার ফলে পাঠকের
দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষন অধিকতর হয়েছে। দিদারুল ইসলাম, কুরআনের প্রকাশ ভঙ্গি ও ভাষা অলংকার, প্রাগুপ্ত, পৃ. ৪৮।
সূরা মায়েদাতে
আলাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ
مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“ওহে তোমরা যারা
ঈমান এনেছ! মদ,
জুয়া, মূর্তি ও তা’আলাা খেলা এসব হচ্ছে শয়তানের জঘন্য কাজগুলোর মধ্যে শামিল। তোমরা
এসব কাজ থেকে বেঁচে থাক,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। আল-কুরআন,
সূরা মায়েদা : ৯০।
এখানে যারা ঈমানদার
তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলা হচ্ছে, যেন তারা বিশেষ
কয়েকটি জঘন্য শয়তানি কাজ থেকে দুরে থাকে। ঈমানদারদেরকে দৃষ্টি আকর্ষন করে বলার ফলে
আহবানটা অনেক বেশী জোরালো হয়েছে। আবার একই সূরায় অন্য একটা আয়াতে বলা হয়েছে -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آَمَنُوا لَا تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِنْ
تَسْأَلُوا عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْآَنُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللَّهُ
عَنْهَا وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ
“ওহে তোমরা যারা
ঈমান এনেছ! এমন সব বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করোনা, যেসব বিষয়ের প্রকৃত
রহস্য যদি প্রকাশ করা হয়,
তবে তোমাদের কাছে খারাপ লাগবে। আর তোমরা যদি কুরআন নাযিলের দিনগুলোতে
সে সব নিয়ে প্রশ্ন কর,
তাহলে তোমাদের কাছে তা প্রকাশ করা হবে। আলাহ মাফ করেছেন সে সব। আলাহ তা‘আলা বড়ই ক্ষমাশীল, সহিষ্ণু।” আল-কুরআন, সূরা মায়েদা : ১০১।
এখানে মানুষের
দৃষ্টি আকর্ষন করে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে যেন মানুষেরা রাসূলের কাছে বেশি বেশি প্রশ্ন
না রাখে। এমন অনেক বিষয় আছে যা আলাহ চান না যে, মানুষের কাছে সেগুলো পরিব্যক্ত হোক। কুরআন গোটা সৃষ্টিকে সম্বোধন
করে,
তার সামনে কিছুই বাদ পড়ে না। অতএব সে সব বিষয়গুলোও উন্মোচন করে
যা মানব প্রকৃতি;
অন্তর এবং বিবেক নিরংকুশ প্রানবন্ত দিয়ে তা গ্রহন করে। অনুরূপভাবে
এ বিধান মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আল কুরআনে যে
শুধু মানুষকেই সম্বোধন করা হয়েছে তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ও জ্বীন স¤প্রদায়কে একত্রে আহবান করে বক্তব্য রাখা হয়েছে। যেমন সূরা আর
রাহমানে আলাহ তা’আলা ঘোষণা করছেন ঃ
سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَا
الثَّقَلَانِ فَبِأَيِّ آَلَاءِ
رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
“হে মানুষ ও জ্বীন।
আমি শীঘ্রই তোমাদের হিসাব নিকাশের প্রতি মনোনিবেশ করবো। অতএব, তোমরা স্বীয় রবের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে।”
৪) কুরআন সম সাহিত্য রচনা অসম্ভব
কুরআন অবতীর্ণ
সময়ে আরবের সাহিত্যের চরম উৎকর্ষতা বিরাজ করছিল যার দ্বারা তারা গর্ববোধও করত। কুরআন
নাযিল করে আলাহ তা’আলা তাদের সাহিত্যকর্মকে
কুরআনের মোকাবেলায় অক্ষম করে দেন। নাজ্জাম মু’তাজেলী ও ইবনে
হাজাম জাহেরী মনে করেন,
কুরআন মজিদের মু‘জিযা হলো এই যে, আলাহ তাঁর অসীম কুদরাত দ্বারা আরব-অনারবের সকল বড় বড়, সাহিত্যিক ও কবির মুখকে এর মুকাবিলায় একেবারে বোবা বানিয়ে দিয়েছেন।
এ কারণে এর কোন জবাব দিতে পারে না।
সর্বকালের এবং
সর্বযুগের মানুষ কুরআনের অনুরূপ একটি কুরআন এমন কি এর সর্বকনিষ্ঠ সূরার ন্যায় একটি
সূরা রচনা করতে অক্ষম। আর এটাই হচ্ছে ইজাযুল কুরআন (কুরআনের অপারগ করণ)। সকল নবীর মু‘জিযা ছিল তাঁদের যুগোপযোগী। আমাদের নবীর যুগ কিয়ামত পর্যন্ত, এ কারণে তাঁর মু‘জিযাও চিরন্তন।
কুরআন মজিদের এ চিরন্তনতা বিভিন্নমুখী। কুরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোন কালে কেউই পারেনি।
চৌদ্দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে এখনো কেউ সক্ষম হয়নি।
কুরআনে চার বার
যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে তার বর্ণনা নিম্নরূপ ঃ
১. কুরআন প্রথমত সাধারণভাবে
তার অনুরূপ আর একটি কুরআন রচনা করার জন্য জিন-ইনসান, আরব-আজম সকলের প্রতি আহবান জানায়। আলাহ্ বলেন-
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ
الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا
يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا
“বলুন! যদি এ কুরআনের
অনুরূপ কুরআন আনবার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও
তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না।’ আল-কুরআন, সূরা বনী ঈসরাইল : ৮৮।
কুরআন মাজীদের
এ চ্যালেঞ্জ সকলের প্রতি। অবতরণ যুগের এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল জ্ঞানী-গুণী এ চ্যালেঞ্জের
মধ্যে শামিল। আলাহ তা‘আলা বলেন ঃ
قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِنْ
عِنْدِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَى مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
“বলুন! তোমরা সত্যবাদী হলে আলাহর নিকট থেকে এক কিতাব নিয়ে আস, যার পথ নির্দেশ
এতদুভয় (তাওরাত ও কুরআন) হতে উৎকৃষ্টতর হবে। আমি সে কিতাব অনুসরণ করব।” আল-কুরআন, সূরা কাসাস : ৪৯।
২. কুরআন মাজীদ দ্বিতীয় পর্যায়ে কুরআনের অনুরূপ দশটি সূরা রচনার
আহবান জানায়।
আলাহ তা’আলা বলেন,
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ
قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ
اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ فَإِنْ لَمْ
يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنْزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَنْ لَا
إِلَهَ إِلَّا هُوَ
“তারা কি বলে, তিনি এটা নিজে রচনা করেছেন? বলুন,
তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা
নিয়ে এসো এবং আলাহ ব্যতীত অপর যাকে পাও ডেকে নাও। যদি তারা আপনার আহবানে সাড়া
না দেয় তবে জেনে রাখুন,
এটা আলাহরই ‘ইলম হতে অবতীর্ণ এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। আল-কুরআন, সূরা হূদ : ১৩-১৪।
৩. কুরআন মাজীদ তৃতীয় পর্যায়ে তার অনুরূপ একটি সূরা রচনার আহবান
জানায়। আলাহ তাআলা বলেন,
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ
قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ
اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
“তারা কি বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এসো এবং আলাহ ব্যতীত অপর যাকে পাও আহবান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।”
৪. চতুর্থ পর্যায়ে আলাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ
مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا
شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
“আমি বান্দার প্রতি
যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে আসো।’ এবং তোমাদের সাক্ষী, সাহায্যকারীদের
আহবান কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” আল-কুরআন, সূরা বাকারা : ২৩।
এ সকল আয়াতে তৎকালীন
যুগের পৃথিবীর অধিবাসী এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল অধিবাসীর প্রতি কুরআন মাজীদের অনুরূপ
একটি কুরআন অথবা দশটি সূরা অথবা তার সর্বকনিষ্ঠ সূরার অনুরূপ একটি সূরা রচনার আহবান
জানানো হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ তার মুকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি।
আলাহ তা’আলা তাদের এ অপারগতার
কথা উলেখ করে বলেন,
فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ
الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
“যদি তোমরা (কুরআনের
অনুরূপ একটি সূরা) আনয়ন কর এবং কখনই করতে পারবে না, তবে সে আগুনকে ভয় কর,
মানুষ এবং পাথর হবে যার ইন্ধন, কাফিরদের জন্য যা প্রস্তুত রয়েছে।’ আল-কুরআন, সূরা বাকারা : ২৪।
আলামা কুরতুবী (র.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, لَمْ تَفْعَلُوا
‘তারা অতীতে কখনও সক্ষম হয়নি।’ আর لَنْ تَفْعَلُوا ‘তারা ভবিষ্যতে কখনও এর মুকাবিলা করতে সক্ষম হবে না।’ ঈমাম কুরতুবী, আল জামি লি আহকামিল কুরআন, প্রথম খ. প্রাগুক্ত,
পৃ. ২২৩।
এ আয়াতে আলাহ তা‘আলা কুরআন অমান্যকারীদের
তার মুকাবিলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর সাথে সাথে এ খবরও দিয়েছেন যে, ওরা এর মুকাবিলায় আসতে সক্ষম হবে না। কুরআনের এ খবর একটি গায়েব
বিষয়,
যা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই কুরআন খবর দিয়েছে।
কুরআনের ই’জায সম্পর্কে চিন্তা করলে দেখা যায়, নবী করীম (সা.) আরবদের সামনে একটি নতুন দীন উপস্থাপন করেন। তাদের
প্রতিমাসমূহ ও আকীদা বিশ্বাসকে অসার প্রমাণ করেন এবং তাদের প্রতিমাগুলোকে মানুষের সামনে
হাস্যষ্পদ করে তুলে ধরেন। ড. মুহাম্মদ শফিকুলাহ, ‘উলূমু’ল-কুরআন, প্রথম প্রকাশ (রাজশাহী : আল মাকতাবাতুশ্-শাফি’ঈয়্যাহ, মার্চ ২০০১) পৃ. ১৩৫।
৫) আল কুরআন চিরন্তন শ্বাশত ঃ
পূর্ববর্তী নবীগণের
ইন্তিকালের পর তাঁদের মু’জিযার সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু আমাদের নবীর মু’জিযা স্থায়ী ও চিরন্তন।
যুগ পরিক্রমার সাথে সাথে কুরআনের মাহাত্ম বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৈজ্ঞানিক উন্নতি, গবেষণার প্রসার এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির অনুশীলন ব্যাপকতর হওয়ার
ফলে আজ কুরআন মাজীদের বিভিন্ন তত্ত¡ ও তথ্য অনুধাবন
করা সহজ হতে চলেছে। আমাদের নবীর মু’জিযা পর্যন্ত
অম্লান ও স্থায়ী থাকবে।
‘আলামা যারকানী (র.) বলেন ঃ
وهنا نلفت النظر الى ان القران --لا نفرق بين احد من رسله
‘আমরা কুরআনের
প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখতে পাই, বহু মু’জিযা সম্বলিত কুরআন চিরন্তন। যুগ-পরিক্রমায় তা বিলুপ্ত হয়নি
এবং রাসূলুলাহ (সা.)-এর মৃত্যুতে তার মৃত্যু ঘটেনি। বরং তা দুনিয়াতে সুপ্রতিষ্ঠিত
আছে এবং প্রত্যেক মিথ্যা প্রতিপন্নকারীর বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করে এবং প্রত্যেক
অস্বীকারকারীর প্রতি চ্যালেঞ্জ প্রদান করে। আর বিশ্বের সমগ্র জাতিকে তাতে নিহিত ইসলামী
হিদায়াত ও মানব কল্যাণের দিকে আহবান জানায়। এভাবে ইসলামের নবীর মু’জিযা এবং অন্যান্য নবীগণের মু’জিযার মাঝে একটি স্পষ্ট পার্থক্য প্রকাশ পায়। শুধু কুরআনেই মুহাম্মদ
(সা.)-এর মু’জিযা কয়েক সহস্র। আর এ কুরআন আজ থেকে অনাগত ভবিষ্যতে যতদিন পর্যন্ত
পৃথিবী এবং তার অধিবাসীদের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন পর্যন্ত বিরাজমান থাকবে। সকল রাসূলের
মু’জিযা ছিল সংখ্যায় সীমাবদ্ধ এবং স্বল্প সময়ের জন্য। তাঁদের যুগের
সমাপ্তির সাথে সাথে সেগুলোর সমাপ্তি ঘটে। তাঁদের মৃত্যুতে সে সবের মৃত্যু ঘটে। কোন
ব্যক্তি এখন সে সবের অন্বেষণ করলে ইতিহাসের পাতায় ছাড়া তার সন্ধান পাবে না। আর এ কুরআন
ব্যতীত সে সবের পক্ষে কোন সাক্ষীও পাওয়া যাবে না। এটা সকল ধর্মীয় গ্রন্থ, রাসূলগণ এবং সকল ধর্মের প্রতি আল-কুরআনের একটি মহান অবদান।’
আরবে কবি-সাহিত্যিকরা
ওকায,
যুলমাজাহ ও মাজান্নাহ নামক স্থানে প্রতি বছর সাহিত্য মেলার আয়োজন
করতো এবং এ ব্যাপারে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতারও ব্যবস্থা ছিলো। প্রতিযোগিতায় যারা ভালো
করতো,
তাদের বিভিন্ন খেতাব ও পুরস্কার দান করা হতো। এমনকি তাদের উন্নত
সাহিত্য কর্ম কাবাঘরে ঝুলিয়ে রাখা হতো। মানুষ তাদের সেই সাহিত্যকর্ম পড়তো। এমন পরিবেশে
রাসূল (সা.)-এর আগমন ঘটেছিলো। এ কারণেই তাঁকে সাহিত্য ও অলংকার শাস্ত্রে পরিপূর্ণ এ
কুরআনে হাকীম দান করা হয়। এর সাথে আলাহ তা‘আলা এ কুরআনের মাধ্যমে সে যুগের পন্ডিতদের কুরআন সদৃশ কুরআন, এমনকি তার একটি আয়াত সদৃশ কোনো আয়াত তৈরী করতে চ্যালেঞ্জ প্রদান
করেন,
কিন্তু তারা সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি। কুরআনুল
করীম কালের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় মু‘জিযা হিসেবে আজও বিদ্যমান
রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মানব সন্তান তার মোকাবেলা করতে দুঃসাহস করেনি। আলাহর সেই চ্যালেঞ্জ অদ্যবধি বহাল রয়েছে। যারা কথাশিল্প নিয়ে চর্চা
করে,
তারা এক্ষেত্রে মানবশক্তির সীমাবদ্ধতা ভালো করেই উপলব্ধি করে।
তারা এটা খুব ভালো করেই জানে, কুরআনের বর্ণনাভংগি নিঃসন্দেহে
একটি মু‘জিযা।
আরবের অন্যতম
শ্রেষ্ঠ কবি লবিদ বিন রাবিয়া একটি কবিতা লিখে কাবার ফটকে লাগাতে গেলে দেখেন সূরা কাউসার, তিনি অভিভুত হয়ে বলেন, ليس هذا من كلام البشر “এটা মানুষের কথা নয়” ও ঈমান আনেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.), হযরত ঈসা (আ.) এর স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী উপরোক্ত দাবি আজ হতে
১৪শ বছর পূর্বে করা হয়েছে;
কিন্তু মানব জাতি আজ অবধি তার চেয়ে উৎকৃষ্ট অথবা অনুরূপ বা সমমানের
কোন কিছু তৈরি করতে পারেনি। আল-কুরআনের ঐশ্বরিক উৎস সম্পর্কে এটাই চিরস্থায়ী প্রমাণ।
আরব খ্রিস্টানদের
প্রচেষ্টা ঃ মধ্য প্রাচ্যের আরব খ্রিস্টানগণ এক ষোলসালা প্রকল্প হাতে নিয়ে নতুন নিয়ম
আরবি বাইবেলের কিছু নির্বাচিত অংশ তৈরি করেছে, সেখানে আরবি কুরআন
শরীফের হুবহু শব্দ ও বাক্যাংশ ধার করে তারা সেটি করেছে। এটি তাদের এক নির্লজ্জ চোরামির
এক নিচতম প্রচেষ্টা। এই নতুন আরবি বাইবেলের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রারম্ভে ‘বিসমিলাহির রাহমানির রাহীম’ (দয়াময় পরম দয়ালু আলাহর নামে) বসানো
হয়েছে। সেটাকে তো পরাস্ত করতে পারলো না? আহমদ দীদাত, অনু: ফজলে রাব্বী মো: গোলাম মস্তফা, আহমদ দীদাত রচনাবলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭৩।
একদা প্রথিতযশা
ও সুসাহিত্যিক ইবনুল মকাফ্ফা (মৃত্যু ৭৫৯ হিজরী) কুরআন মাজীদের মুকাবিলায় কিছু রচনায়
হাত দেন। তখন তিনি একজন বালককে তিলাওয়াত করতে শুনেন-
وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي
وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ وَقِيلَ
بُعْدًا لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
“আর নির্দেশ দেয়া
হলো,
হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হলো এবং কাজ শেষ হয়ে
গেল,
জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষণা করা হলো, দুরাত্মা কাফেররা নিপাত যাক। আল-কুরআন, সূরা হুদ : ৪৪।
ইবনুল মুকাফফা
তখনই নিজের কলম ভেঙ্গে ফেলেন, কাগজগুলো খন্ড বিখন্ড
করে দেন এবং বলেন আল্হার শপথ! এ কালামের অনুরূপ রচনা করতে কোন মানুষ সক্ষম হবে না।
ইবনুল-মুকাফফা কুরআন মাজীদের এ আয়াতের লালিত্য, মাধুর্য ও ছন্দে
মোহিত হয়ে পড়েন এবং তার দ্যোতনা ও ব্যঞ্জনায় মুগ্ধ হন। অতঃপর কুরআনের মুকাবিলা ত্যাগ
করেন।
এ প্রসঙ্গে বৈয়াকরণিক
আল-আসমা’ঈর জীবনের একটি ঘটনা উলেখযোগ্য। তিনি একদিন এক সুদর্শনা বেদুইন বালিকাকে কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেন এবং
ঐ কবিতার বিশুদ্ধ শব্দ ভাষা অলংকার এবং সুর মূর্ছনা এ কথা শুনে বালিকাটি বলে উঠল কতইনা
বিশুদ্ধ ভাষিণী। এ কথা শুনে বিমোহিত হন এবং বালিকাটিকে লক্ষ্য করে বলেন, আলাহ তোমাকে মেরে ফেলুন! বালিকাটি বল উঠল, তোমার জন্য পরিতাপ, আলাহ তা’আলার বাণীর পর এটা কি
বিশুদ্ধ ভাষা বলে পরিগণিত হতে পারে? এরপর সে তিলাওয়াত
করে-
وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ
عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا
رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ
“আমি মূসা (আ.)
এর-মাকে আদেশ পাঠালাম,
তাকে স্তন্য দান করতে থাক। এরপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের
আশংকা কর,
তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে
পয়গম্বরগণের একজন করব।”
আল-কুরআন, সূরা কাসাস : ৭।
এরপর বালিকাটি আয়াতের ই’জায উলেখ করে বলল, আয়াতে দু’টি আদেশ (স্তন্য দান কর ও দরিয়ায় নিক্ষেপ কর) দু’টি নিষেধ (ভয় করো না এবং দুঃখ করো না) দু’টি সংবাদ (আদেশ পাঠালাম ও বিপদের আশংকা করলে) এবং দুটি সুখবর (আমি তাঁকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বর করব) একই সাথে সন্নিবেশ করা হয়েছে। আসমাঈ বালিকার কথা শুনে তার উপলব্ধি, বুদ্ধিমত্তা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখে স্তম্ভিত হলেন। মুহাম্মাদ আলী সাবুনী, আত তিবইয়ান ফী উলুমিল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৫।
মহানবী (সা.)-এর
অনেক মু‘জিযা ছিল। আলাহতা’আলা তার পেয়ারা নবীকে অনেকগুলো মু‘জিযা দিয়ে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ
মু‘জিযা হলো আল-কুরআন। আজ চৌদ্দশত বছর পরেও তাঁর এ মু‘জিযা মানবজাতির সামনে তার নবুওয়াতের স্বাক্ষ্য বহন করছে। আম্বিয়া
কেরামের উপর যে সকল আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল, সেগুলোর মাঝে
বিকৃতি ঘটেছে। কিন্তু মহাকালের ব্যবধানে আল কুরআনের কোন বিকৃতি ঘটেনি। এর একটি শব্দ, একটি আয়াত, এমনকি একটি বর্ণেরও বিকৃতি
ঘটেনি। বর্তমান বিশ্বে প্রায় একশ কোটির অধিক মুসলমান, তারা সবাই যে একবাক্যে গভীর প্রত্যয়ের সাথে কুরআনকে আলাহর বাণী বলে গ্রহণ করেছেন এটাইতো অলৌকিকতা। আহমদ দীদাত, অনুবাদ : ফজলে রাব্বী, আহমদ দীদাত রচনাবলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭।
১৪০০ বছর আগের
নাযিলকৃত কুরআন অদ্যাবধি কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়নি এবং কিয়ামত পর্যন্ত পরিবর্তন হওয়ার
কোন সম্ভাবনা নাই। কারণ তা সংরক্ষনের দায়িত্ব তার নিজ হাতে নিয়েছেন। আলাহতা’আলা ঘোষণা করেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
“ আমি কুরআন নাযিল
করেছি এবং এর সংরক্ষনের দায়িত্ব আমি নিজেই নিয়েছি।” আল-কুরআন,
সূরা হিযর : ৯।
১৬) পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান
আল কুরআন মানবজীবনের
একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রচনা করে বিশ্ব ইতিহাসে একটি বিপ্লব সৃষ্টি
করেছে। মানুষের আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, আখলাক-চরিত্র, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন সর্বক্ষেত্রে ও সর্বযুগের জন্য তার বিধান বিস্তৃত
ও প্রযোজ্য। মানব রচিত কোনো বিধানই এরকম পরিপূর্ণ জীবন বিধান উপস্থাপন করতে সক্ষম নয়।
এটা আল-কুরআনের মু’জিযা, এর একটা বিশেষ দিক।
আলাহ তা’আলা বলেন ঃ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ
الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ
“আর এটি সমস্ত
বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা”। আল-কুরআন, সূরা নাহল : ৮৯।
কুরআনের বিধান
ও বিষয়বস্তু বলে লিখে শেষ করা যাবে না। এর দিকে ইংগিত করেই আলাহ তা‘আলা এরশাদ করেন ঃ
قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ
الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ
مَدَدًا
“(হে নবী), বলো,
আমার রবের কথা লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিশেষিত হয়ে যাবে, সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও তা শেষ হয়ে যাবে।” আল-কুরআন, সূরা আল কাহাফ ঃ ১০৯।
আলাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন ঃ
وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ
وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِنْ بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ
اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
“সকল গাছ যদি কলম
হয় এবং মহাসমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে তা যদি কালি হয়, তবুও আলাহ তা‘আলার কথাগুলো লিখে শেষ করা যাবে না, নিশ্চয়ই আলাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।” আল-কুরআন, সূরা লোকমান ঃ আয়াত ২৭।
এ জ্ঞান বিজ্ঞানের
উৎসই আলাহর ইচ্ছায় মানব জাহানে এ মু‘জিযার সৃষ্টি করেছে। পূর্বেকার নবী রাসূলদের মু‘জিযা বা অলৌকিক ঘটনাসমূহের কোনটিই এ মু‘জিযার সমতুল্য
নয়। এটা হচ্ছে বাস্তব মু‘জিযা, আর সাহাবায়ে কেরামের
সময়টা হচ্ছে ইতিহাসের একক অনন্য ঘটনা। সাইয়েদ কুতুব, বিস্ময়কর গ্রন্থ আল কোরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৯।
রাসূল (সা.) এর
এই সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযা যা এখনও বিশ্বমানবতার মাঝে বিদ্যমান। সে কিতাবে প্রত্যেকটি
বিষয়ের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। ‘আলামা ফখরুদ্দীন রাযী, তাফসীর মাফাতিহিল
গায়ব,
৩য় প্রকাশ (বৈরুত : দারুল মা’রিফা,
১৪০১ হি./ ১৯৮৯ ইং) ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৬।
১৭) নিখুঁত ঐতিহাসিক দলিল
প্রিয় রাসূল
(সা.) ছিলেন একজন উম্মী (নিরক্ষর) ব্যক্তি। অথচ কুরআন মাজীদে পূর্ববর্তী বহু নবী রাসূল
এবং জাতির ঘটনা ও ইতিহাস সঠিক ভাবে বিধৃত হয়েছে। এ সবই কুরআনের এজাযকে প্রমাণিত করে।
হযরত মারইয়াম (আ.) এর লালন-পালনের ঘটনা, হযরত নূহ (আ.)
এর মহা প্লাবনের ইতিহাস,
হযরত ইউসুফ (আ.) সুবিস্তৃত জীবন বৃত্তান্ত। হযরত সালিহ (আ.), হুুদ (আ.) প্রমূখ নবীগণের জাতির করুন পরিনতির ইতিবৃত্ত কুরআন মাজীদ প্রদত্ত¡ গায়েবী তথ্য। এখানে উলেখযোগ্য কয়েকটি
উলেখ করা হলো ঃ
১। হযরত নূহ
(আ.)Ñ
এর তুফানের উলেখ করার পর আলাহ বলেন ঃ
تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ
مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ
“এটি গায়েবের খবর, আমি আপনার প্রতি
ওহি প্রেরণ করছি। ইতোপূর্বে এটা আপনার এবং জাতির জানা ছিল না।” আল-কুরআন, সূরা হুদ, আয়াত : ৪৯।
২। হযরত মুসা
(আ.) এর জীবনালেখ্য বর্ণনা প্রসংগে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَى مُوسَى
الْأَمْرَ وَمَا كُنْتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ
وَلَكِنَّا أَنْشَأْنَا قُرُونًا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ وَمَا
كُنْتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِنَا وَلَكِنَّا كُنَّا
مُرْسِلِينَ وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ
الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَكِنْ رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا
أَتَاهُمْ مِنْ نَذِيرٍ مِنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
“মুসাকে আমি নির্দেশনামা
দিয়ে ছিলাম,
যখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও
ছিলেন না। কিন্তু আমি অনেক স¤প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছে, আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করতেন। কিন্তু আমি ছিলাম রাসূল
প্রেরণকারী। আমি যখন মুসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর
পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন না,
কিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ যাতে আপনি এমন এক স¤প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আগমন করেনি। যাতে তারা স্মরণ রাখে।” আল-কুরআন, সূরা কাসাস, আয়াত : ৪৪-৪৬।
১৮) গায়েবী বিষয়সমূহ অবগত হওয়া
গায়বী বা অদৃশ্য
বিষয়সমূহের জ্ঞান আলাহ তা‘আলা ব্যতিত অন্য কাহারও
নাই। অবশ্য তিনি ইচ্ছা করলে যাকে ইচ্ছা এই নেয়ামত দান করিতে পারেন। তিনি তার প্রিয়
নবী রাসূল (সা.) কে কোন বহু দূরবর্তী বাস্তব
ঘটনা অবহিত করে দিতেন,
কখনও দূরদূরান্তের বস্তু মধ্যস্থিত অন্তরায়সমূহ তিরোহিত করে
তার চক্ষের সম্মুখে হাজির করতঃ প্রত্যক্ষ করাইয়া দিতেন, আবার কখনও মানুষের অন্তরের গোপন কথা অন্য কোন গুপ্ত রহস্য তাকে
জানিয়ে দিতেন।
কাফিরগণ এমন কি
মুনাফিকগণ এই ভয়ে সদা ও সন্ত্রস্ত থাকত যে, না জানি তিনি
আমাদের হৃদয়ের কুমতলব ও অসৎ অভিপ্রায় সকলের সম্মখে প্রকাশ করে দেন। যদিও রাসূলের প্রতি
তাদের আস্থা ছিল না তথাপি বারবার এরূপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেই তাদের মনে এরূপ ভীতির সঞ্চার
হত।
আলাহ তা‘আলা বলেন ঃ
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ
تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ
مَا تَحْذَرُونَ
“মুনাফিকগণ আশঙ্কা
করে যে,
মুসলমানদের না এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে পড়ে যা তাদেরকে মুনাফিকদের
অন্তরের কথা বলে দেয়।”
আল-কুরআন, সূরা আত-তাওবা : ৬৪।
ভবিষ্যদ্বানী
ও সিদ্ধিলাভ ঃ
আল কুরআনের মু‘জিযা সমূহের অন্যতম মু‘জিযা হচ্ছে রাসূল
(সা.) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বানী ও তার বাস্তবায়ন। নি¤েœ
কুরআনের উলেখযোগ্য কিছু ভবিষ্যদ্বানী
ও তার সিদ্ধিলাভ উলেখ করা হলো ঃ
১। রাসূল (সা.) এর মক্কায় প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বানী
আলাহ তা’আলা কুরআনে ঘোষণা করেন
ঃ
إِنَّ الَّذِي فَرَضَ عَلَيْكَ الْقُرْآَنَ لَرَادُّكَ إِلَى
مَعَادٍ قُلْ رَبِّي أَعْلَمُ مَنْ جَاءَ بِالْهُدَى وَمَنْ هُوَ فِي ضَلَالٍ
مُبِينٍ
“যিনি তোমার জন্য
কুরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন প্রত্যাবর্তন স্থানে।” আল-কুরআন, সূরা কাসাস : ৮৫
এখানে প্রত্যাবর্তন
স্থানে বলতে মক্কা শরীফকে বোঝানো হয়েছে। যখন হয়তো মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায়
গমন করেন সেই সময়কে হিজরাত বলা হয়। তখন সময়টি ছিল ভীষণ খারাপ। তার অধিকাংশ অনুসারী
মদীনায় চলে গিয়েছে। এবার তাঁর যাবার পালা। হযরত আবু বকর (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে যহফা নামক
স্থানে যখন পৌঁছলেন তখন আলাহর তরফ থেকে এই সান্তনা
দেয়া হলো যে,
তিনি আবার তাঁর জন্মস্থান মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং
তাই তিনি করেছিলেন। তিনি শরণার্থী হিসাবে গিয়েছিলেন এবং আলাহ তাকে বিজয়ী রূপে ফিরিয়ে আনলেন। এখানে উপরের ভবিষ্যদ্বাণী
বাস্তবায়িত হয়েছিল।
২। রোম বিজয়ের ভবিষ্যদ্বানী ঃ তৎকালীন শ্রেষ্ঠ দু’পরাশক্তি ছিল রোম পারস্য। রোমের রাষ্ট্রনায়ক ছিল হিরাক্লিয়াস।
সে তখন প্রচণ্ড প্রতাপশালী ছিল কুরআনে রোম সাম্রাজ্য পরাস্ত হওয়ার ভবিষ্যদ্বানী ঘোষণা
করেন। সূরা রুমে আলাহ বলেন ঃ
غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الْأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ
غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ
سِنِينَ لِلَّهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْ بَعْدُ وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ
الْمُؤْمِنُونَ
“রোমকগণ পরাজিত
হয়েছে নিকটবর্তী স্থলে,
কিন্তু তারা তাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হবে কয়েক বছরের
মধ্যে। পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আলাহরই। আর সেদিন
মুমিনগণ হর্ষোৎফুল
হবে।” আল-কুরআন, সূরা রুম : ২-৪।
৬১৫/১৬ খ্রিষ্টাব্দে
রাসূলুলাহর নিকট উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বানী প্রত্যাদেশ হিসেবে নাযিল হয়েছিল।
রোমের খ্রিষ্টান সাম্রাজ্য পারস্যের জেরুজালেম হারিয়েছিল এবং তারা ধলায় অবনমিত হয়েছিল।
সেকালের বৃহৎ শক্তি ধ্বংসযজ্ঞে মক্কার মুশরিকরা, পৌত্তলিক,
পারসিক কর্তৃক রোমানদের পরাজয়ে বিশেষ আনন্দ অনুভব করেছিল।
পৌত্তলিক আরবরা
স্বাভাবিকভাবেই পৌত্তালিক ইরানীদের সহমর্মী ছিল এবং তাদের ধ্বংসাত্বক কাজে তারা আনন্দ
অনুভব করেছিল,
ভেবেছিল রোমের খ্রিষ্টান শক্তির পরাজয় অর্থ রাসুলের বাণীর পরাজয়।
অর্থাৎ ঈসা (আ.) এর প্রকৃত উত্তরসূরীর বাণীর পরাজয়। যখন সমগ্র বিশ্ব মনে করেছিল পারস্য
কর্তৃক রোম সাম্রাজ্য পরাজিত হয়েছে তখন তার নিকট পরিদৃষ্ট হয়েছিল যে, পারস্যের এই বিজয় স্বল্প ও ক্ষনস্থায়ী। এবং অল্প কয়েক বছরের
মধ্যে রোমকরা আবার বিজয়ী হবে এবং পারস্যকে চরম আঘাত হানবে। মাত্র দশ বছরের মাথায় এ
ভবিষ্যদ্বানী বাস্তবায়িত হয়েছিল। আহমদ দীদাত রচনাবলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১০১।
ভবিষ্যদ্বানীটি
অসম্ভব মনে করে কাফিরগণ কিছু উটের বাজি ধরল কিন্তু আরবী উম্মী রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যদ্বানীটি
অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হলো আলাহ ওয়াদা পূর্ণ করে মুসলমানদেরকে
আনন্দিত করলেন। মুসলমানগণ দ্বারা বদরে কুরাইশগণের দম্ভচূর্ণ হয়, সে সময় রোমীয়গণ ইরানীগণকে পরাস্ত করে রাসূলের ভবিষ্যদ্বানীর
সত্যতা প্রমাণিত করল। জামি তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৪। ইরানী ও রোমীয়দের পাল্টাপাল্টি আক্রমণে অবশেষে ৬২৫
সালে রোমই বিজয়ী হয়। যে ভবিষ্যদ্বানী ঠিক নয় বছর পর পূর্ণ হয়েছিল।
৩। বিজয় লাভের প্রতিশ্র“তি ঃ একদল কুরাইশ বণিক বহুপণ্য সম্ভার নিয়ে সিরিয়া হতে মক্কা ফিরছিলেন। অপরদিকে কুরাইশদের
আরেকটি দল বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেছিল। আলাহ মুসলমানদের মদীনা হতে বের হওয়ার পূর্বেই অবহিতসহ বিজয়ের প্রতিশ্র“তি দিলেন। সুতরাং কুরাইশ বাহিনীকে পরাজিত করে আলাহ তা‘য়ালা তার অঙ্গিকার পূর্ণ
করলেন।
আলাহ তা‘আলা বলেন ঃ
وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ
إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ
الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ
‘আর স্মরণ কর, যখন আলাহ ত‘য়ালা তোমাদের সাথে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন যে,
উক্ত দুই দলের কোন একদল তোমাদের আয়ত্ত¡াধীন হবে।’ আল-কুরআন, সুরা আনফাল : ৭।
৪। আরব-গোত্রপুঞ্জের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী ঃ কুরাইগণ দূর্বল হওয়ার পর তারা সারা “আরব জাহানের গোত্রসমূহের শরণাপন্ন হয় এবং তাদের সাহায্য প্রার্থনা
করে। কুরাইশের আহŸানে সাড়া দিয়ে আরব জাহান একতাবদ্ধ হইয়া ইসলাম ও এটির অনুসারীদেরকে
নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়। প্রবল পরাক্রান্ত যুদ্ধ আরব শক্তির বাহ্যিক
উপকরণ ও দুর্দম ক্ষমতা দৃশ্যে কে না মনে করত যে, এই নগন্য মুসলমান দল নিমেষের মধ্যেই এদের হাতে নিষ্পেষিত ও নিঃশেষ হয়ে যাবে?
কিন্তু তখনই আল-কুরআন
বজ্রগম্ভির কণ্ঠে ঘোষণা করে ঃ
أَمْ يَقُولُونَ نَحْنُ
جَمِيعٌ مُنْتَصِرٌ سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ
“কাফিরগণ বলে নাকি
যে,
আমরা একতাবদ্ধ, অপরাজেয় দল (সুতরাং
আমাদের বিজয় অনিবার্য)। শীঘ্রই তাদের এই দলবদ্ধতা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে এবং তারা
পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করবে।” আল-কুরআন, সূরা আল-কামার : ৪৪-৪৫।
আরও ঘোষণা করে
ঃ
وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الْأَدْبَارَ
ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا
‘‘আর যদি কাফিরগণ
তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তবে তারা অবশ্যই পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করতে
বাধ্য হবে,
তৎপর তারা কোন পৃষ্ঠপোষক ও সহায়ক পাবে না।” আল-কুরআন, সূরা আল-ফাতহ : ২২।
৫। মক্কা বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী ঃ মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক ভবিষ্যদ্বাণী আলাহ তার রাসূলকে
জানিয়ে দিয়েছিলেন। আলাহ বলেন ঃ
وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا
نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
“আর অপর একটি অনুগ্রহ, তোমরা অন্তরের সাথে যা কামনা কর, তা হলো আলাহর সাহায্য ও আসন্ন
বিজয়। আর আপনি মুসলমানদেরকে এটির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।” আল-কুরআন, সূরা সফ্ফ : ১৩।
হুদাইবিয়ার সন্ধি
ও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার পর যখন রাসূল (সা.) মদীনা প্রস্থান করছিলেন তখন সূরা
ফাতহ অবতীর্ণ হয় ঃ
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا
“নিঃসন্দেহে আমি
আপনাকে প্রকাশ্য বিজয় প্রদান করলাম।” আল-কুরআন সূরাতুল
ফাতহ : ১।
রাসূল (সা.) তৎক্ষনাৎ
হযরত উমর (রা.) কে ডেকে এনে এই সুসংবাদ শুনিয়ে দিলেন। এর দুই বৎসর পর মক্কা বিজয় হয়।
৬। আহযাব যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী ঃ আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন গোত্র সম্মিলিত ভাবে মুসলমানদের আক্রমন করবে সে যুদ্ধে
মুসলমানরা বিজয়ী হবে তা রাসূল তাদেরকে পূর্বেই অবহিত করেছিলেন। ভবিষ্যদ্বানী অনুযায়ী
শত্র“
সৈন্য যখন মদীনা অবরোধ করে এবং মুসলমানগণ রাসূলুলাহ (সা.) এর ভবিষ্যদ্বানী প্রত্যক্ষ দর্শন করে তখন রাসূলুলাহ (সা.) এর সত্যতার প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায় এবং
প্রবলভাবে শত্র“র উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ
الْأَحْزَابَ قَالُوا هَذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ
وَرَسُولُهُ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا
“আর যখন মুসলমানগণ
এই আক্রমণকারী সম্মিলিত বাহিনীসমূহ অবলোকন করল তখন তারা বলতে লাগল, এরাই সেই বাহিনী যাদের সম্বন্ধে আলাহ ও রাসূল আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন। আলাহ ও তার রাসূল সত্যই বলেছিলেন। এটিতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যের
দৃঢ়তা আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল।” আল-কুরআন, সূরাতুল আহযাব : ২২।
মক্কা বিজয়ের
মনোমুগ্ধকর সুসংবাদও প্রদান করেন ঃ
وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا
نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
“আর অপর একটি অনুগ্রহ, তোমরা অন্তরের
সাথে যা কামনা কর,
তাহলো আলাহর সাহায্য ও আসন্ন
বিজয়। আর আপনি মুসলমানদেরকে এটির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।” আল-কুরআন, সূরা সফ্ফ : ১৩।
৭। রাসূল (সা.) এর ইন্তিকালের ভবিষ্যদ্বাণী ঃ মক্কা বিজয়ের পর যখন রাসূল (সা.) এর নবী জীবনের উদ্দেশ্য ও
কর্তব্য সম্পূর্ণ হয়ে যায় তখন ইহধাম হতে বিদায় গ্রহণের সময় নিকটবর্তী হয়। তাই আলাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী
ঘোষণা করেন ঃ
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ
وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ
يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
“যখন আলাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং বিজয় আসলো আপনি মানুষকে দলে দলে ইসলামে
প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আলাহর নামে তাসবিহ পাঠ
করুন এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন”। আল কুরআন, সুরা নসর। সূরাটিতে
রাসূলের ওফাতের ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে। বর্ণনা ভঙ্গি ও এ ইঙ্গিতসমূহ দ্বারা বুঝা যায়
যে এটি মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ নয় বরং ওফাতের সুসংবাদ।
চলবে
লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা
ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান
সেক্রেটারি:
শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে-
ইমাম ও খাতিব:
মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে
সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:
নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে
প্রিন্সিপাল:
আর রাহমান একাডেমি ইউ কে
পরিচালক:
আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে
📞07476136772 📞 07476 961067
nrahmansky@googlemail.com
Arrahmaneducationtust@gmail.com
https://www.facebook.com/Imam.Nurur
https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/
https://www.youtube.com/user/nurur9
0 coment rios:
You can comment here