।। বেলাল আহমদ চৌধুরী।।
আমাদের নির্জীব ইসলামী সাহিত্যে মুসলিম তরুণ/নবীন লেখকদের পদচারণা খুব কমই দেখা যায়। ইসলাম বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিতর্কের ধর্ম। কোনো আজগুবিত্বের স্থান ইসলামে নেই। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) কোনো অবতার ছিলেন না। তিনি মহান আল্লাহর দাস ও প্রেরিত রাসুল। এই আবদিয়েত হলো মানবজীবনের চরম স্বার্থকতা ও গৌরবের।
সাহিত্য জাতির জীবনের দর্পণ স্বরূপ। সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো-আদর্শ পরিবেশ গড়ে তুলা। কবি মুন্সি আব্দুল কাদির সাহিত্যের একজন আদর্শ কর্মবীর। তার কবিতাগ্রন্থ মুসলিম তরুণদের জাগিয়ে তুলবে। নির্জীব মুসলিম সাহিত্যে তার আগমন সাহিত্যের আদর্শ ও কর্ম প্রেরণার বিরল দৃষ্টান্ত। কবি তার এই কাব্যগ্রন্থে মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রশংসা বিরাজমান।
কবি মুন্সি আব্দুল কাদির মুসলিম তরুণ সমাজকে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যতার কথা কবিতার ছন্দে উপস্থাপন করেছেন এবং মুসলিম তরুণ সমাজের মধ্যে আত্মচেতনা জাগিয়ে তুলেছেন। কবি সত্যের সাধনা ও আদর্শকথা কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবি কাব্যগ্রন্থে অনেকগুলো রূপক কবিতার আড়ালে ইসলামের অন্তর্নিহিত রূপের আভাস ফুটিয়ে তুলেছেন। কবির কবিতার বিষয়বস্তু উপলব্ধি করলে কবিতাগ্রন্থের রূপক তাৎপর্য অনুধারণ করা সহজ হবে। ইসলাম কর্মময় ধর্ম। দুনিয়া ও আখিরাতকে নিয়ে সংসারের কোলাহলের মধ্যে বাস করে আল্লাহ তায়া’লার ইবাদতের মধ্যেই জীবনের আদর্শ নিহিত।
শিক্ষা একটি জাতির অবয়ব নির্মাণ করে। একটি জাতির পরিচয় বিধৃত হয় তার আদর্শ শিক্ষায়, ইসলামই দুনিয়ার মহত্তম আদর্শের উদ্বোধক। কবির চিন্তা ও দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই কাব্যগ্রন্থে। গ্রন্থকার তার কাব্যে মনোজ্ঞভাবে মহান আল্লাহ ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শানে ইসলামের ইতিবাচক দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি ইসলামী জিন্দেগীর নিত্যদিনের ঈমান, আমল আখলাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার প্রশান্তিমূলক গৌরব গাঁথা কবিতা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি প্রণীত কবিতায় মহানবী (সা.)-এর প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভক্তির স্ফুরণ ঘটিয়েছেন।
কবি মুন্সি আব্দুল কাদির-এর ‘হে আল্লাহ! প্রশংসা কেবল তোমারই’ গ্রন্থ ইসলামের সমুজ্জ্বল আলোয় সিজ্জীন। সাহিত্যকর্মে তাঁর তীক্ষè সমাজ সচেতনতা ও ইসলামী ভাবধারার শৈল্পিক ফসল। সাহিত্যের অনুসঙ্গে তিনি একজন প্রতিভাবমান কবি। একজন দায়িত্বশীল ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে যেমন দায়বদ্ধ। ঠিক তেমনি একজন সমাজ সচেতন ও ইসলামের জাগরণের কবিও বটে। কবি তার কাব্যগ্রন্থে ৬৫টি কবিতা নিয়ে ফুলের পাপড়ি সাজিয়েছেন।
কবি মুন্সি আব্দুল কাদির ব্যাংকের চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। ব্যক্তিজীবনে তিনি ইসলামী পন্ডিত, আলেমে দ্বীন, কবি ও প্রাবন্ধিক, সর্বোপরি একজন বিনয়ী আদর্শবান পুরুষ। কবি তার চিন্তায় ও চেতনায় আদর্শ জীবন গঠনের ব্যাপকতা কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সুচিন্তা ধর্মের ধারক। কবিতা পাঠে চিন্তার আলোকে হৃদয়ে খোদাপ্রেম জাগ্রত হয়। ঈমান তো আল্লাহ থেকে ও রাসুলে বিশ্বাসী হয়েই জীবনের সর্বক্ষেত্রে অটুট ও দৃঢ়তার কর্মক্ষেত্রে বাস্তবায়নের মধ্যে ঈমানের একমাত্র পরিচয়। ঈমানের পরিচয় শুধু কথার নয়, কাজের মধ্যেই ঈমানের বড় পরিচয়। কবি মুন্সি আব্দুল কাদির একজন আলেমে দ্বীন হিসেবে ধর্মীয় চেতনা বোধ থেকে তার এই কাব্যগ্রন্থ ইসলামী সাহিত্যে মহীরূহ হয়ে বেঁচে থাকবে। কবি কাব্যগ্রন্থে মহান আল্লাহ ও নবী প্রেমের আবেগ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কবি তার আবেগ ও অনুভ‚তি অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রসারণ করেছেন। একটি কবিতা লিখা মানে একটি ম্যাসেজ। কবি হৃদয়ের আবেগ কবিতার ভেতর দিয়ে প্রসরণ করেছেন। কবির কবিতার হাত সূক্ষ্ম এবং গভীর। যা পাঠে মুগ্ধ, বিমোহিত এবং প্রেমসিক্ত করে তুলে। তার কবিতায় আল্লাহ প্রেমের অনাবিল আনন্দই খোঁজে পাওয়া যায়। সেই সাথে কবি ভাষাশৈলীর স্বাদ ও অতুলনীয়।
‘হে আল্লাহ! প্রশংসা কেবল তোমারই’ কাব্যগ্রন্থটি দক্ষতার সাথে প্রকাশ করছেন সিলেটের সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাণ্ডুলিপি প্রকাশন-এর স্বত্তাধিকারী বলিষ্ঠ লেখক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল। গ্রন্থটির প্রচ্ছদে আল-কুরআনকে সিম্বলিক হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কুরআনের বন্ধনের মধ্যেই ইসলামের শান্তির নিবিড় স্পর্শ উপলব্ধি করা যায়। সম্মানিত পাঠকদের কাছে কাব্যগ্রন্থটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আমার এই সংক্ষিপ্ত অনুভ‚তি প্রকাশ করলাম। আশা করি গ্রন্থটি প্রত্যেকের হাতে শোভা পাবে।
লেখক : কবি, কলামিস্ট ও গীতিকার
0 coment rios:
You can comment here