।। মুন্সি আব্দুল কাদির।।
হাজারো দুঃখ
আর বেদনার ভীড়ে মননশীলতা,উদার্যতা আর হারিয়ে গেছে। বিষন্নতা চারিদিকে ঘ্রাস
করেছে। বাগানের হাজারো ফুলের মাঝে সবচেয়ে ফুটন্ত, প্রস্ফুটিত, সুবাসিত ফুলটির
দিকেই দর্শকের মন আকৃষ্ট করে। যেখানে সুন্দর আছে সেখানে সর্বসুন্দরটাকে মানুষ খুঁজে
নেয়। যেখানে শুধুই দুঃখ সেখানে খানিকটুকুন সুখের পরশ পেলেও মানুষ আনন্দিত হয়। ভাল, সুন্দর, সুখময় বস্তুটাকে
মানুষ সব সময় খুঁজ করে। বাজারে হাজারো ভেজালের সয়লাবে খাটি দ্রব্যকে মনের মনিকোঠায়
সব সময় তালাশ করতে থাকে। না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্তর চক্ষু থেমে থাকে না। সে যে
ভালটিকেই চায়। নিজে শত অপরাধের মধ্যে ডুবে থাকলেও বিবেক কিন্ত সঠিক পথেই সায় দেয়। বিবেক
এমন এক চিজ যাকে কখনো ঘোষ অথবা তেল কিছুই খাওয়ানো যায় না। সে তার সত্যটা নাছোর বান্দার
মত বলতেই থাকে। তার কথা এমন যে তুমি মানলে মানতে পার, না মানলেও আমি
আমার কথা বলতেই থাকব।
আমাদের চারিদিকের
পরিবেশ যেন ঠিক এমনি। তবে এ কয়লার মধ্য অনেক হিরা মনি মানিক্য রয়েছে। তা যেন জ্বল জ্বল
করে আলো ছড়ায়। হাজারো কষ্টের মধ্যে মনে সুখ এনে দেয়। মুহুর্তের মধ্যেই মানুষ দুঃখকে
ভুলে প্রাণ খুলে হাসতে পারে। শত কষ্টের পর যখন আলাদিনের চেরাগ হাতে পায়, তখন এমন হয়
যে চোখ দিয়ে কষ্টের কান্নায় পানি ঝরছিল, সে চোখ দিয়ে
আনন্দে তপ্ত লোনাজল বইতে শুরু করে।
১৪.১০.২০২০
সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। সকাল মোবাইলের কয়েকটি কল করেছি এবং রিসিভ করেছি, ম্যাসেজ দেখা
হয়নি। এমনিতেই কেন যেন ম্যাসেজ দেখতে মন চায়না। এর জন্য অবশ্য কথাও শুনতে হয়। আমার
চিন্তা ভিন্ন। তুমি এতো কষ্ট করে ম্যাসেস লিখতে পারলে আর কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করে একটা
সালাম দিতে পারলে না, তোমার ম্যাসেস পড়ার আমার সময় কোথায়। এর সাথে অবশ্য
কারো দ্বিমত থাকতেই পারে। তবে আজকের ব্যাপারটি একান্তই নিজের সাথে। সকাল সোয়া দশটার
দিকে ম্যাসেজের দিকে চেয়ে দেখি ডিজি স্বাস্থ্য সেবা থেকে ম্যাসেস দেওয়া হয়েছে, আমার করোনা
পজিটিভ। হতাশা, দুঃখ, গ্লানি, দুশ্চিন্তা, বিষন্নতার কিছুই
নেই। সব মহান মালিকের ইচ্ছা। আমার ব্যাংকের শাখা প্রধান থেকে শুরু করে অনেকেই ফোন করে
খবর নিয়েছেন, নিচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন, সাহস যোগাচ্ছেন, ফেসবুকে আমার
সম্মানিত জোনাল হেড স্যার থেকে শুরু করে অনেকেই দোয়া করছেন। মহান মালিক সকলকে সর্বোত্তম
সর্বোত্তম জাযা দান করুন।
মূল কথায় আসা
যাক। বিকাল ৩.৩৩ মিনিটে আমার নিকট একটি ফোন আসে। প্রথম বার আমি ফোনটি রিসিভ করতে পারিনি।
আবারো ফোন আসে। উপার থেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আমার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। আমাকে জিজ্ঞাসা
করেন, আপনি কি জানেন আপনার করোনা পজিটিভ? আমি বলি আজ
সকালে ম্যাসেস পেয়েছি। আমার শারিরিক অবস্থা সব কিছু খুব দরদভরা কন্ঠে জানতে চান। এদিকে
নেটওয়ার্ক সমস্যায় আবারো ফোন কেটে যায়। ওনি আবারো ফোন করেন। কখন থেকে আমার সমস্যা? আমি কি কি ঔষধ
খাচ্ছি? এখন শরীরে আর কি কি সমস্যা বোধ করছি। আপনি কি কি
ঔষধ খাচ্ছেন? আমি বললাম আমি যেদিন থেকে সমস্যা বোধ করছি সেদিন
থেকেই রোমাইসিন (এজিথ্রোমাইসিন) ৫০০ মিগ্রা, মোনাস ১০, হামদর্দ এর
নিমোলেন্ট, মধু, কালজিরার তেল, ইত্যাদি খাচ্ছি।
তাছাড়া আমি গত ০৮.০৮.২০২০ তারিখে উসমানী মেডিকেল কলেজে গেলে ডাক্তার আরো দুইটি ট্যাবলেট
দেন ডক্সোমা ২০০ মিগ্রা ও ফেনারজিক ১২০ মিগ্রা। আমার সাথে আলাপের পর ডাক্তার আমাকে
ডক্সোমা ও ফেনারজিক আপাতত বন্ধ রাখতে বলেন।
তারপর ডাক্তার
আমাকে আরো কিছু পরামর্শ দেন। পরে যে কথাটি বর্তমান সমাজে সবচেয়ে মনে রাখার মত। এমনকি
আমার অন্তর সত্যিই তৃপ্তিতে ভরে গেছে, অন্তরের অন্তস্থল
থেকে শুধু দোয়া আর দোয়া উচ্চারিত হচ্ছে। ডাক্তার মহোদয় আমার বলেন, আপনার প্রয়োজনীয়
সব ঔষধ আছে কি না? আপনার ঘরে বাজার খরচ, প্রয়োজনীয় সব
কিছু আছে কি না? আমরা আপনাকে কিভাবে সহযোগীতা করতে পারি। সত্যি চোখে
পানি এসে যাওয়ার অবস্থা। আমি কৃতজ্ঞতা আর দোয়া করলাম। তিনি আরো আমাকে বলেন আপনি যে
কোন শারিরিক সমস্যা বোধ করলে এই নাম্বারে সকাল ৯.০০ টা থেকে রাত ৯.০০ পর্যন্ত আমাদের
জানাবেন। আমরা আবারো আপনার খোঁজ নেব। আপনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। কোন চিন্তা
করবেন না। আমার স্ত্রী স্বাস্থ্য সেবায় আছেন বলাতে তিনি তারও খোঁজখবর নেন। মহান মালিকের
নিকট তাদের এবং সকলের কল্যাণ কামনা করি। আল্লাহ তায়ালা ডাক্তার, নার্সদের মহত
পেশায় আরো বরকত বাড়িয়ে দিন। সকলকে মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করার তৌফিক দিন। হাজারো অসামনজস্যতার
ভীড়ে কিছু কিছু বিষয় হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এমন দিন আমাদেরকে এনে দিন আমাদের
মধ্য থেকে খারাপ দৃষ্টান্তগুলো দুর হয়ে যাবে। সত্য, সুন্দর, মানবতার কল্যাণে
আমরা নিবেদিত হব এই প্রত্যাশা।
লেখক: কবি,
প্রাবন্ধিক ও ব্যাংকার
0 coment rios:
You can comment here