Monday, August 24, 2020

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি: মুসনাদ গ্রন্থ সংকলনেতার অবদান

 

প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান

সারসংক্ষেপ (Abstract ) 

Imam Ahmad bin Muhammad bin Humble Abu Abdullah Al-Shaibani Rahmatullah Alaihi (60-655 AH according to 164-241 AH)

  Was a famous Islamic figure, scholar of Islamic law and hadith.  One of the four traditional schools of Islam, the Hanbali school, is based on its interpretation.  In the Muslim world, Imam Ahmad is known as Shaikhul Islam. [Musnad, a collection of hadiths compiled by Imam Ahmad, is considered his great work.  Known all over the world as Musnad Ahmad Ibn Humble.

ভূমিকা (Introduction ) 

এই প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ, আইনবিদ ও হাদিসবিদ হিজরি ১৬৪ সনের ১ রবিউল আউয়াল বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি আরবের বনি শায়বান গোত্রের লোক।  মুসলমানদের ইরাক ও খোরাসান বিজয়ের সময় এ গোত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  উমাইয়া আমলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহির - এর দাদা হাম্বল ইবনে হিলাল ছিলেন গভর্নর তাঁর দপ্তর ছিল মার্ভে।  বাবা মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল খোরাসানের সরকারি বাহিনীতে চাকরি করতেন।  পরে তিনি বাগদাদ যান এবং তিন বছর পর ইন্তেকাল করেন।  আব্বাসীয় খলিফা মামুন-অর-রশীদ তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে এসে মুতাজিলা মতবাদের প্রতি হন এবং মুতাজিলা সম্প্রদায়কে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দান করে

নাম ও পরিচিতি

(name and address )

ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাম্বল আবু আবদুল্লাহ আল-শাইবানী  আল ওয়ালী একজন বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ইসলামি আইন এবং হাদিস বিশারদ। ইসলামের প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের একটি হাম্বলী মাযহাব তার দিকেই সম্পৃক্ত করা হয়েছে । মুসলিম বিশ্বে ইমাম আহমদ, শাইখুল ইসলাম উপাধিতে পরিচিত।  ইমাম আহমদের সংকলিত হাদিস গ্রন্থ  মুসনাদকে তাঁর বিখ্যাত অনবদ্য কীর্তি মনে করা হয়।

ইমাম আহমদ  ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পিতা তাকে নিয়ে মুরউ নামক থেকে যখন বাগদাদ চলে যান, তখন তিনি তার মায়ের গর্ভে ছিলেন।  

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছেলে সালিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তার পিতা বলেন, “তখন আমার মা আমার উভয় কান ছিদ্র করে তাতে দুটি মুক্তা স্থাপন করে দেন। বড় হওয়ার পর মা আমাকে মুক্তাগুলো দিয়ে দেন। আমি সেগুলো ত্রিশ দিরহামে বিক্রি করি 

তথ্য বিশ্লেষণ

 (Information analysis)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নামের শেষে আল জাহলী আবার অনেক আল ওয়ালী বলেন। 

 যেমন - 

(أبو عبد الله أحمد بن محمد بن حنبل الشيباني الذهلي  فقيه ومحدِّث مسلم، ورابع الأئمة الأربعة عند أهل السنة والجماعة، وصاحب المذهب الحنبلي في الفقه

তার নাম আহমাদ, উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ পিতার নাম মুহাম্মদ, দাদার নাম হাম্বল 

*ইবনে কাসিরআবু আল-ফিদা 'ইসমাইল ইবনে উমর বিন কাসির বিন দাওয়া বিন দারা আল-কুরাসী আল-হাসলি, আল-বাসরি আল-শাফিয়ী, তারপরে আল-ডিমাস্কি, রাহমাতুললাহ আলাইহি ' আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' গ্রন্থে তার যে বংশ তালিকা উল্লেখ করেছেন তাতে বুঝা যায়,

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ নবী ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে তার বংশধারা এই ভাবে বর্ণিত হয়েছে

*আবু আব্দুল্লাহ আশ শায়বানী, আল-মারুযী, আল-বাগদাদী।

*আবু বকর আর বায়হাকী আহমদ বিন আল হুসেন বিন আলী বিন মুসা আল-খোরাসানী আল-বাহাকী, যিনি তার রচিত গ্রন্থ মানাকিবে আহমদ এ তারই শায়খ মুসতাদরাক এর রচয়িতা হাকিম আবু আব্দুল্লাহ আল হাকিম এর সূত্রে এই বংশধারা উল্লেক করেছেন।

 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর ছেলে সালিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমার পিতা আমার কিতাবে এই বংশধারা দেখতে পেয়ে বলেন, এ দিয়ে তুমি কি করবে? তিনি এই বংশধারা কে অস্বীকার করেন নি।

বনি শায়বান গোত্র

বনী শাইবান বিন থালবাহ হ'ল একটি আরব উপজাতি বকর বিন ওয়াল উপজাতির অন্তর্ভুক্ত যারা ইরাক, সিরিয়ার মধ্যে উত্তর আরব লেভেন্টে ফোরাত দ্বীপের অঞ্চলে এবং উত্তর সিরিয়ার অঞ্চলগুলিতে (বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে অবস্থিত) বাস করে।  এর অনেক কর্মী বাবেল, নাজাফ, ধী কার, বাসরা, ওয়াসিত, মুথানা এবং দক্ষিণ ইরাকের দিওয়ানিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। (ويبلغ طول نهر الفرات من منبعه في تركيا حتى مصبه في شط العرب في العراق حوالي 2940 كم منها 1176 كم في تركيا و610 كم في سوريا و1160 كم في العراق، ويتراوح عرضه بين 200 إلى أكثر من 2000 متر عند المصب. ويطلق على العراق بلاد الرافدين لوجود نهري دجلة والفرات بها.) The length of the Euphrates River from its source in Turkey to its mouth in the Shatt al-Arab in Iraq is about 2,940 km, of which 1,176 km are in Turkey, 610 km in Syria, and 1,160 km in Iraq, and its width ranges from 200 to more than 2000 meters at the mouth.  Iraq is called Mesopotamia because of the Tigris and Euphrates rivers.তাকে ইবন জাহল শাযবানী বলে। 

(أي أنّه بن ذهل الشيبانيّ، أحد الفقهاء المتميّزين

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এর জম্ম ও বংশধারা

(Birth and lineage)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৬৪ হিজরী মোতাবেক ৭৮০ খ্রীষ্টাব্দ সালের রবিউল আউয়াল মাসে তার মা তাকে বাগদাদে প্রসব করেণ। তার জন্ম স্থান সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, তিনি ইরাকের বাগদাদ জন্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, তিনি পারস্য জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা সেখানে চাকরি করতেন বিধায় অনেকেই যুক্তি দেখিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি আফগানিস্তানে জন্ম গ্রহণ করেন। মূলত তিনি এতিম অবস্থায় কিছু দিনের জন্য লালিত পালিত হন।

বংশানুগতির তালিকা

আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল ইবনে হিলাল ইবনে আসাদ ইবনে ইদ্রীস ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হায়্যান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আনাস ইবনে আওফ ইবনে কাসিত ইবনে মাজিন ইবনে শায়বান ইবনে যাহল ইবনে ছালাবা ইবনে উকাবা ইবনে সাব ইবনে আলী ইবনে বকর ইবনে রাবিয়া ইবনে নাযার ইবনে মাদ ইবনে আদনান ইবনে আদাদ ইবনে হামীসা ইবনে হামল ইবনে নাবত ইবনে কায়দার ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির শিক্ষা জীবন

 (Educational life of Imam Ahmad ibn hanbal ) 

তার বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন তার পিতা মারা যান। পরে তার মা তাকে লালন পালন করেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মাতা একজন আবেদা  আলেমা ছিলেন । তাই খুব ছোট বয়সেই তিনি তার ছেলেকে মক্তবে ভর্তি করে দেন। শিশু আহমদ প্রথমত কুরআন হিফজ করেন। তারপর  তিনি হাশেম বিনা বশীর আল ওয়াসেতি নিকট ইলমুল হাদীসের গভীর জ্ঞান লাভ করেন । একাধারে চার বছর ধরে তার নিকট ইলমু অর্জন করেন। 

(Al-Hanbali began to learn the hadith of the Prophet at the hands of Sheikh Hashem bin Bashir al-Wasiti, and that was in the year 179 AH, and he continued to learn at the hands of this sheikh for a period of four years until he passed away in the year 183 AH, and he continued to seek and learn the hadith of the Prophet in Baghdad until the year 186) 

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ ছোট বয়সেই শিক্ষায় মনোনিবেশ হন। তিনি প্রখর মেধাশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। অতি সহজেই অনেক কিছু মুখস্ত করে ফেলতেন।

আবু ইসহাক ইব্রাহিম বিন ইসহাক বিন ইব্রাহিম আল-বাগদাদী  ইবরাহীম আল হারবী রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন,

‘‘মনে হয় যেন আল্লাহ তাআলা ইমাম আহমাদকে আদি-অন্তের সকল প্রকার জ্ঞান দান করেছেন।’’

আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বাগদাদে ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুললাহ আলাইহি এরছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মালিক বিন আনাসের ছাত্র ইমাম শাফিয়ী রাহমাতুললাহ আলাইহি নিকট পড়াশুনা করেন।

ইলমুল হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ

(Learning Ilmul Hadith)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুললাহ আলাইহি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে    ইলমুল হাদীস  শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি 

ইরাকে রাজধানী বাগদাদের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি  ইলমুল হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।  বাগদাদের অধ্যয়ন সমাপ্ত করে তিনি বসরা, কুফা, হেজাজ, শাম প্রভৃতি অঞ্চল সফর করেন এবং প্রতিটি স্থানের বিখ্যাত সব মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে  ইলমুল হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। 

বাগদাদের মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ উস্তাদ হুশাইম ইবনে বশীর ইবনে আবূ হাযেম রাহমাতুললাহ আলাইহি (মৃঃ ১৮৩ হিঃ)। তাঁহার খিদমতে তিনি একদিক্রমে চার বৎসর পর্যন্ত অব্স্থান করেন- ১৬ বৎসর বয়স হইতে ২০ বৎসর পর্যন্ত, (১৭৯-১৮৩হিঃ)।

এই সময়ে তিনি বাগদাদের অপর একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস উমাইর ইবনে আবদুল্লাহ ইবেন খালিদ হইতে যথেষ্ট সংখক হাদীস শ্রবণ করেন।

আবদুর বহমান ইবনে মাহাদী রাহমাতুললাহ আলাইহি ও আবূ বকর ইবনে আইয়াশ  রাহমাতুললাহ আলাইহি এ দুইজন বিখ্যাত মুহাদ্দিসের নিকট  থেকে ইলমুল হাদীস গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।

 ঈমাম  আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এর দেশ ভ্রমণ

 (Iman Ahmad Ibn Hamble Rahmatullahi

Alaihir's Country Tour)

১৮৬ হিজরি সনে তিনি ইলমুল হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন।তিনি ইলমুল হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে যে সকল স্থানে ভ্রমণে যান তার মধ্যে অন্যতম হলো

 ক) বসরা গমন  (ইরাকের একটি শহর। এই শহরটি কুয়েত এবং ইরানের মধ্যবর্তী শাত-ইল-আরবে অবস্থিত। ২০১২ সালের গণনা অনুযায়ী এখানকার লোকসংখ্যা ১৫ লক্ষ।যদিও এখানকার পানির গভীরতা তেমন নেই, তবুও বসরা ইরাকের প্রধান সমুদ্র বন্দর; এটি উম কসর বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।) 

খ) হিজায (বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে জর্ডান, পূর্বে নজদ ও দক্ষিণে আসির অবস্থিত। এর প্রধান শহর জেদ্দা। তবে ইসলামের পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার জন্য এই অঞ্চল অধিক পরিচিত। ইসলামের পবিত্র স্থানের অবস্থানের কারণে হেজাজ আরব ও ইসলামি বিশ্বে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমে তিহামাহ থেকে পূর্বের নজদকে পৃথক করেছে বলে এই অঞ্চলের এরূপ নাম হয়েছে। এটি "পশ্চিম প্রদেশ" বলেও পরিচিত) 

গ) ( ইয়েমেন(ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এটি আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। সুউচ্চ পর্বতমালা ইয়েমেনের উপকূলীয় সমভূমিকে অভ্যন্তরের জনবিরল মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। ইয়েমেনের জনসংখ্যা অল্প। দেশের অর্ধেকের বেশি অংশ বসবাসের অযোগ্য। এখানকার আরবেরা বেশির ভাগই গ্রামীণ। প্রাচীনকালে এখানে অনেকগুলি সমৃদ্ধ সভ্যতার অবস্থান ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এলাকাটির গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং এক হাজার বছরেরও বেশি সময় এটি একটি দরিদ্র ও অবহেলিত দেশ হিসেবে বিরাজ করছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে এখানে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।)

ঘ) কূফা গমন 

কুফা  ইরাকের একটি শহর। শহরটি বাগদাদ হতে ১৭০ কিলোমিটার (১১০ মা) দক্ষিণে এবং নাজাফ হতে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মা) উত্তরপূর্বে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত। ২০০৩ সালে শহরটির আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১১০,০০০।

চ) শাম  (উমাইয়া ও পরবর্তীতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার একটি প্রদেশ। সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে ইয়ারমুকের যুদ্ধের পর এটি মুসলিমদের হস্তগত হয়। পূর্বে এই অঞ্চল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্তমুসলিম  বিজয়ের পরবর্তী ২০ বছর সিরিয়া বনু উমাইয়া গোত্রের সাহাবি মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক শাসিত হয়। তিনি এই প্রদেশে তার পারিবারিক ক্ষমতার ভিত্তি গড়ে তোলেন। তিনি প্রথম ফিতনার সময় বিজয়ী হন এবং উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। উমাইয়া শাসনামলে আল-শাম পাঁচটি জান্দ বা সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয়) শহরেও গমন করেন। বসরা শহরে তিনি পরপর পাঁচবার উপস্থিত হন। কোন কোন বার তখায় তিনি ক্রমাগতভাবে তিন মাস করিয়া অবস্থান করেন। হিজাযেএ তিনি পাচঁবার গমন করিয়াছেন। বিদেশে এইসব সফরের মূলে তাঁহার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহ করা। বস্তুতপক্ষে এই সময়কার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের নিকট হইতেই তিনি হাদীস শিক্ষা ও

 সংগ্রহ করিয়াছেন।

ইমাম আহমাদ  রাহমাতুললাহ আলাইহি এর শিক্ষকবৃন্দ

(Teachers of Imam Ahmad Rahmatullah Alaihi)

ইমাম আহমাদ  রাহমাতুললাহ আলাইহি বাগদাদসহ  মুসলিম জাহানের অনেক  শিক্ষা কেন্দ্রে জ্ঞানের অর্জনের জন্য  ভ্রমণ করেন। ফলে বিভিন্ন এলাকা জুড়ে তার অগনিত শিক্ষক পাওয়া যায়। 

روى أحمد بن حنبل عن كثير من العلماء والأئمة ورواة الحديث، وقد جمعهم ابن الجوزي في كتاب "مناقب الإمام أحمد بن حنبل" فيf  الباب الخامس "في تسمية من لقي من كبار العلماء وروى عنهم" وقد رتبهم على الحروف الأبجدية، ومنهم

,ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন

* ইমাম আহমাদ রাহমাতুললাহ আলাইহি ‘‘মুসনাদে আহমাদ’’ গ্রন্থের হাদীসসমূহ যে সব শিক্ষক হতে গ্রহণ করেন তাঁদের সংখ্যা হলো দুইশত তিরাশি (২৮৩) জন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো

*১)ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি ( وسفيان بن عيينة أبو محمد الهلالي) 

২) ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ রাহমাতুললাহ আলাইহি (ووكيع بن الجراح أبو سفيان الرؤاسي) 

৩) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস আশ্ শাফেয়ী রাহমাতুললাহ আলাইহি 

( ومحمد بن إدريس أبو عبد الله الشافعي،)

৪) ইমাম আব্দুর রায্যাক আস সানআনী রাহমাতুললাহ আলাইহি (السمعاني عبد الرزاق بن همام،) 

৫) ইমাম কুতাইবাহ বিন সাঈদ  রাহমাতুললাহ আলাইহি (قتيبة بن سعيد القطان) 

৬) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রাহমাতুললাহ আলাইহি (على ابن المديني) 

৭) ইমাম ইবনু আবী শাইবাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি ( ابو شيبة ) 

ويحيى بن سعيد أبو سعيد القطان

والمعتمر بن سليمان أبو محمد التيمي، 

، وعبد الرحمن بن مهدي أبو سعيد الأزدي، 

، ويزيد بن هارون أبو خالد الواسطي، 

 والوليد بن مسلم أبو العباس الدمشقي

، وهشيم بن بشير أبو معاوية الواسطي

، ويعقوب بن إبراهيم بن سعد أبو يوسف الزهري،

،

وإسماعيل بن إبان أبو إسحاق الورَّاق الأزدي، 

وإسحاق بن إبراهيم بن مخلد أبو يعقوب الحنظلي المعروف بابن راهويه، 

وبشر بن السري أبو عمرو البصري،

وثابت بن الوليد أبو جبلة الزهري، 

وعبد العزيز بن أبان أبو خالد الأموي، 

وعمر بن أيوب أبو حفص العبدي، وعلي بن إبراهيم البناني المروزي، وأحمد بن إبراهيم بن خالد

، وإبراهيم بن إسحاق بن عيسى أبو إسحاق الطالقاني.

ইমাম আহমাদ এর ছাত্রবৃন্দ (students of Imam Ahmad ibn hanbal) 

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির অসংখ্য ছাত্রদের তিনি ইলমুল হাদীসে ও ইলমুল ফিক্হ শিক্ষা প্রদান করেন। ছাত্রদের সংখ্যা কেহ নির্ধারণ করেননি। তবে তাদের মধ্যে অন্যতম  উল্লেখ করা হলো - 

(ذكر الذّهبيّ في كتابه سير أعلام النّبلاء، أنّ ستّة وستيّن طالبًا، قد تعلّموا قوانين إسلاميّة مختلفة مثل الفقه، والحديث، والفتاوى من الإمام احمد، ذكر أيضًا أنّ أكثر من خمسين طالبًا من طلّابه أصبحوا مُفتين. أبرز طلّاب أحمد بن حنبل هم

Al-Dhahabi mentioned in his book Siyar Aalam al-Nubala that sixty-six students had learned various Islamic laws such as jurisprudence, hadith, and fatwas from Imam Ahmad, and he also mentioned that more than fifty of his students had become muftis. The most prominent students of Ahmed bin Hanbal are)

১. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী রাহমাতুললাহ আলাইহি (عبدالله محمد بن إسماعيل البخاري) 

২. ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশায়রী রাহমাতুললাহ আলাইহি ( الإمام مسلم بن الحجاج) 

৩. ইমাম আবূ দাঊদ আস সিজিস্তানী রাহমাতুললাহ আলাইহি ( أبو داوود سليمان بن الأشعث) 

৪. ইমাম আবূ ঈসা অত্তিমিযী রাহমাতুললাহ আলাইহি 

৫. ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন্নাসাঈ রাহমাতুললাহ আলাইহি 

 

৬. ইমাম সালিহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির  (صالح وعبد الله

৭)আবদুল্লাহ ইবনে হাম্বল আবু আল-কাসিম আল-বাঘাওয়ী

عبدالله بن حنبل أبو القاسم البغوي

৮)আবু জারআ আল-ডিমাসকী আর রাযী

(أبو زرعة الدمشقي) ، 

৯)আবু বকর আল-আতরাম,

 (أبو بكر الأثرم،

১০)، ইব্রাহিম আল-হার্বি

(وإبراهيم الحربي)

ইয়াহিয়া বিন মুঈন রাহমাতুললাহ আলাইহি 

(يحيى بن معين،)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর গ্রন্থ সমূহের বিবরণ 

Books by Imam Ahmad Ibn Hamble )

১) -মুসনাদ-ই-আহমাদ (مسند احمد ) 

২)ফাদাইলুস সাহাবা - "فضائل الصحابة

৩) - আল ইলাল ওয়া মারিফাতুর রিজাল (العلل ومعرفة الرجال) 

৪)  কিতাবুল তাফসীর (كتاب "التفسير) 

৫) "কিতাবুল মানসুখ)(الناسخ والمنسوخ) 

৬) -  কিতাব আল জুহুদ("كتاب الزهد) 

৭) কিতাবুল আসমা ওয়াল কুনা (الأسامي والكنى".) 

(৮)  হাদীসে শু'বা '(حديث شعبة

৯)  কিতাবুল তারিখ (كتاب "التاريخ) 

১০) কিতাব আল অরা'"(كتاب الورع".) 

১১) "الرد على الزنادقة والجهمية

১২)কিতাব আল ঈমান"(الإيمان".) 

১৩) তাআতুর রাসূল (طاعة الرسول) 

১৪)   কিতাব আল ইমামাহ (كتاب الإمامة) 

১৫)-   নাফিউত তাশবীহ ("نفي التشبيه) 

.১৬)আল মুকাদ্দাম ওয়া আল মুআখখার ফিল কুরআন 

("المقدم والمؤخر في القرآن

১৭)জওয়াবাত  ফিল কুরআন (جوابات القرآن) 

১৮) মুসনাদ আহলে বাইত(مسند أهل البيت".) 

আল মানাসিক আল হাজ্জ ("المناسك الكبير) 

১৯)  " আল মানসিক আস সাগীর (المناسك الصغير")

২০)কিতাব আল মাসাইল(كتاب المسايل)

২০)উসুল আস সুন্নাহ(أصول الستة)

২১)রিসালাতুস সানিয়া( كتاب السنية)

২২) কিতাবুল আশরিবাহ( - "الأشربة.) 

২৩) কিতাবুল উকুফ ওয়াল ওসাইযা(الوقوف و الوصايا)

২৪) আহকামুন নিসা ("أحكام النساء) 

২৫)  আত তারাজ্জুল (الترجل) 

২৬) কিতাব আল ওজদাত (كتاب الوجدات) 

২৭)আল ইরজাআ

(كتاب"الإرجاء )

২৮)কিতাবুল ফিতান(كتاب الفتن ) 

২৯)ফাদাইলু আহল আল বাইত আল মুসতাদরাক

- "(فضائل أهل البيت "المستدرك")

ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল সম্পর্কে আলিমদর অভিমত (Alims opinion about Imam Ahmad Ibn Humble ) 

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন ফকীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি ইলমুল রিজাল ও ইলমুল জারহ ও তা'দীল এবং ইলমুল' ইলাল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুহাদ্দিস অনেক মতামত দিয়েছেন।যেমন - 

১) ইমাম আলী ইবন আল মাদীনী  আবু আল-হাসান আলী বিন আবদুল্লাহ ইবনে জাফর বিন নাজহ বিন বাকর বিন সাদ  বলেন,

(لقد أعزَّ الإسلام برجلين، بأبي بكر يوم الفتنة، وبأحمد بن حنبل يوم المِحْنة.) 

আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পর দুই জন ব্যাক্তির মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, একজন হলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অপরজন হলেন আহমাদ ইবন হাম্বলরাহমাতুললাহ আলাইহি ।

২)  ইমাম আবদুল -ওয়াহহাব বিন আব্দুল -হাকাম  বিন নাফি, আবু আল-হাসান  আব্দুল ওয়াহহাব আল ওয়াররাক রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন

আমি ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলের মত আর কাউকে দেখিনি, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল আপনি অন্যের চেয়ে ইমাম আহমাদের মাঝে জ্ঞান বা মর্যাদার বেশী পেয়েছেন কি? তিনি বললেনঃ ইমাম আহমাদ এমন একজন ব্যাক্তি যাকে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) প্রশ্ন করা হল, তিনি সকল প্রশ্নের জবাবে হাদ্দাসানা ওয়া আখবারানা অর্থাৎ শুধু হাদীস হতে জাবাব দিয়েছেন অন্য কিছু বলেন নি

৩) ইমাম আবু হাতীম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আর-রাযী  বলেন

সহীহ ও যইফ(দুর্বল) হাদীস সম্পর্কে আহমাদ ইবন হাম্বল খুব ভাল বুঝতেন” 

৪) . ইমামইমাম আবু হাতীম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আর-রাযী  বলেন

যদি তুমি কোন মানুষকে দেখ আহমাদ ইবন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কে ভালবাসতে তাহলে যেনে রেখ সে একজন সুন্নাহ এর অনুসারী 

 

৫.) ইমাম আবু রাজা কুতাইবা বিন সাইদ বলেন

আহমাদ ইবন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হলেন সমগ্র  পৃথিবীর ইমাম 

৬)  ইমাম আবু রাজা কুতাইবা রাহমাতুললাহ আলাইহি আরো বলেন

وقال قتيبة بن سعيد: “لو أدرك أحمد بن حنبل عصر الثَّورِيِّ، والأوزاعي، ومالك، والليث بن سعد، لكان هو الـمُقدَّم

অর্থ :যদি আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাওরী, আওযায়ী, মালিক, লাইস ইবন সাঈদ রাহমাতুললাহ আলাইহিমদের যুগ পেতেন তাহলে তো তিনি অগ্রগন্য হতেন।  তিনি আরো বলেন

আস-সাওরী এখানে নেই, ন্যায়পরায়নতা মরে গেছে; আহমাদ  এখানে নেই, মানুষেরা দ্বীনের  মধ্যে বিদআত প্রবেশ করিয়ে ফেলেছে  

৭) ইমাম আবু উবাইদ আল-কাসীম বিন সালাম বলেন

জ্ঞান চার জনের মধ্যে শেষ হয়েছে (আহমাদ, ইবন আল-মাদীনী, ইবন মঈন এবং আবু বকর ইবন আবী শায়বাহ), আহমাদ ইবন হাম্বল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন। 

৮)আবু সাওর ইবরাহীম বিন খালীদ আল-ফকীহ বলেন

ইমাম আহমদ সুফিয়ান আস সাওরী  রাহমাতুললাহ আলাইহি থেকেআহমাদ ইবন হাম্বল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বড়  একজন ফকীহ ছিলেন। 

৯) ইমাম আলী ইবন আব্দুল্লাহ আল-মাদীনী   বলেন

আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে বড় হাফীয অন্য কেউ নেই

১০) ইমাম  আলী ইবন আল-মাদীনী  রাহমাতুললাহ আলাইহি আরো বলেন

আহমাদ ইবন হাম্বল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহি  ইলম বিবেচনায় আমাদের নেতা। 

১১) আমর বিন মুহাম্মাদ বিন বুকায়র আল-নাকীব বলেন

, “যদি আহমাদ ইবন হাম্বল হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আমাকে সঙ্গতি দেয়, তাহলে আমিভ্রুক্ষেপ করি না কে আমার   বিরধিতা করছে   

১২) . কবীর ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিতি রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন

ইয়াযীদ বিন হারুন (মৃতঃ ২০৬ হিজরি) কে আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে অন্য কাউকে বেশী প্রশংসা করতে আমি দেখি নি।

যখন তিনি আমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তাকে (ইমাম আহমাদ) তার (ইয়াযীদ বিন হারুন) সাথে বসাতেন; এবং যখন আহমাদ অসুস্থ হলেন, তার (ইমাম আহমাদ) সুস্থ হওয়ার খবর নেওয়ার জন্য  ইয়াযীদ বিন হারুন তার (ইমাম আহমাদ) কাছে গমন করতেন” 

১৩) ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মঈন  রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন

মানুষেরা বলে যে আহমাদ ইবন হাম্বল এর মত আমার হওয়া উচিত, না আল্লাহর শপথ! আমি আহমাদ ইবন হাম্বল এর মত হতে পারব না”  

১৪) . আবু আল আব্বাস মুহাম্মাদ বিন আল হুসাইন বিন আব্দুর রাহমান আল-আনমাতি  বলেন

আমরা একটি জনসমাবেশে ছিলাম যেখানে ইয়াহইয়া ইবন মঈন, আবু খাইথামাহ জুহাইর বিন হারব, প্রধান আলেমদের একটি দল উপস্থিত ছিল।  তারা আহমাদ ইবন হাম্বল এর প্রশংসা করছিলেন এবং তার গুনাবলী ব্যক্ত করছিলেন, তাই একজন বললোঃ এসব কথা বলার ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করবেন না।ইয়াহইয়া ইবন মঈন বললেনঃ আহমাদ ইবন হাম্বল এর বেশী প্রশংসা করা কি নিন্দামূলক কাজ? এমনকি যদি আমরা তার প্রশংসা করা শুরু করি আমাদের সকল সমাবেশে তার পরও আমরা তার সম্পূর্ণ গুনাবলী বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না’” 

১৫) . আবু জাফর মুহাম্মাদ বিন হারুন আল-মাখরামি রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন

যদি তুমি কাউকে দেখ যে সে আহমাদ ইবন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কে  হেয় করছে তাহলে যেনে রাখ সেই ব্যক্তি একজন পথভ্রষ্ট বিদআতী 

১৬) ইমাম ইবরাহীম বিন ইসহাক বিন ইবরাহীম বিন বাশীর আল-হারবী বলেন

(“رأيت أحمد بن حنبل، كأن الله عز وجل جمع له علم الأولين من كل صنف، يقول ما شاء ويمسك ما شاء

ءসাঈদ ইবন আল-মুসাইয়াব তার জমানায় ইমাম ছিলেন, সুফইয়ান সাওরী তার জমানায় ইমাম ছিলেন, এবং আহমাদ ইবন 

হাম্বল তার জমানায় ইমাম  ছিলেন। 

১৭)  ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া আল-নিসাবুরী আল-ধাহলী  যখনশুনেছিলেন ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল এর মৃত্যুর খবর, তখন তিনি বলেছিলেনঃ

বাগদাদের সকল মানুষ তাদের গৃহে দুঃখিত আহমাদ ইবন হাম্বল এর জন্যে 

১৮ ), আবু আব্দুল্লাহ আল-হারিছ বিন আসাদ আল-মুহাসিবী আল-বাগদাদী বলেন

আহমাদ ইবন হাম্বল অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন যা সুফইয়ান আছ-সাওরী এবং আল-আওযায়ী এর সাথে ঘটেনি 

১৯.) আবু আল-হাসান আলী বিন ইসমাইল বিন ইশহাক বিন সালীম আল-আশআরী   বলেন

আমাদের অভিমত এবং যেই আকীদা আমরা অনুসরন করি তা হল দৃঢ় ভাবে ধরা আল্লাহর কিতাব এবং রাসুল মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ, যা সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে তা, তাবেয়ী এবং হাদীসের আইম্মা থেকে আমরা আশ্রয় গ্রহন করি। এবং আমরা তাও অনুসরন করি যা আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল বলেছেন। 

২০) ইমাম হাজ্জাজ বিন আবী ইয়াকুব ইউসুফ বিন হাজ্জাজ আশ-শাইর আছ-সাকাফী আল-বাগদাদী বলেন

আমি একবার আহমাদের (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল) কপালে চুমু দিলাম এবং বললাম, ‘হে আবু আব্দুল্লাহ! তুমি সুফইয়ান(ইমাম সুফইয়ান ছাওরী) এবং মালিকের(ইমাম মালিক) পর্যায়ে পৌঁছে গেছ 

২১)ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেন,:

আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পর দুজন ব্যক্তির মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন হলেন আবূ বকর  রাদিয়াল্লাহু আনহু যার মাধ্যমে মুরতাদ ও ভন্ড নাবীদের দমন করেছেন, আর অপরজন আহমাদ বিন হাম্বল, যার মাধ্যমে কুরআনের মানহানীর সময় কুরআনকে সমুন্নত করেছেন। 

২৪.  ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন : আমি বাগদাদ হতে বের হয়ে ইমাম আহমাদের চেয়ে অধিক আল্লাহভীরু, তাকওয়াশীল, ফাকীহ ও জ্ঞানী আর কাউকে পাইনি। 

وقال عبد الرزاق بن همَّام: “ما رأيت أحداً أفقه ولا أورع من أحمد بن حنبل”.

 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মুতাযিলা মতবাদ প্রত্যাখ্যান (Rejection of Imam Ahmad Ibn Hamble's Mutazila Doctrine)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সমস্ত জীবনব্যাপী মুতাজিলা  মতবাদের( هل القرآن مخلوق ام لا ) বিরোধিতা করেছেন। 

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সময় খলিফা হারুনুর রশীদের পুত্র মামুন ও তৎপরবর্তী খলিফা মুতাসিম ও মুতাসিকের খিলাফতের সময়ে খলীফার অনুকুলে থাকা মুতাজিলাদের বিরোধিতা করায় তিনি একটি দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে কারাবাস ও কঠোর সাজাপ্রাপ্ত হন। 

 এ সময় তার উপর কঠোর নির্যাতন ও অত্যাচার চালানো হয়। মুতাজিলাগণ কুরআনকে আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির অনুরূপ ও সংশোধনযোগ্য মনে করতো, আহমদ বিন হাম্বল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মত হলো (কুরআন আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির মত কোন সৃষ্টি নয় বরং তা সরাসরি আল্লাহর বাণী ও আল্লাহরই নিজস্ব বিশুদ্ধ বক্তব্য, তাই তা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও তথা তা সংশোধনের সামান্যতম প্রয়োজন নেই, এবং তার মানবীয় যৌক্তিক পৃথক কোন ব্যাখ্যারও দরকার নেই)।কেননা কুরআন আল্লাহ তাআলা কালাম 

( القرآن كلام الله المنزل على رسول الله المنقول عنه نقلا بلا شبهة

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

অর্থ : আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। ( সূরা আল হিজর - ৯) 

পরিশেষে খলিফা মুতাওয়াক্কিলের আমলে তিনি মুক্তি পান ও বাগদাদে ফিরে আসেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে, সমসাময়িককালের ধর্মীয় অনেক নেতা খলিফার রোষানল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একে একে খলিফার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিই সমর্থন দিতে শুরু করেনকিন্তু ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মুতাজিলা মতবাদকে ভ্রান্ত বলে তা মানতে  নিযেধকরেন।  এ জন্য নির্মম নির্যাতন কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন।।  

পবিত্র কুরআন 'সৃষ্টি' এ সম্পর্কে মুতাজিলা মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা আব্বাসীয় খলিফা- তাঁর বিরোধিতাকারী ইমাম আহমদ জিজ্ঞেস করলেন তিনি মুতাজিলা মতবাদ মতবাদ করেছেন কি না।  আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, 'না, কুরআন হচ্ছে মহান বাণীকুরআনকে আল্লাহ তাআলার হিসেবে' মানতেই হবে। মামুন-অর-রশীদ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠান।  খলিফা মামুন-অর-রশীদ  মৃত্যুবরন করলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন খলিফা আল মুতাসিম।  তিনিও ইমাম সাহেবকে কারাগার থেকে বের করে এনে পবিত্র কুরআনের সৃষ্টি সম্পর্কে মুতাজিলা মতবাদকে স্বীকার করেন কি না তা জানতে চান।  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তখনো এ ভ্রান্ত মতবাদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন।  

খলিফা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির - এর সঙ্গে যুক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করলেন।  কিছু ধর্মীয় নেতাও খলিফার যুক্তি সমর্থন করে বিভিন্ন দলিল পেশ করলেন।  কিন্তু ইমাম সাহেব প্রতিটি কথার দাঁতভাঙা জবাব দিলেন।  তাঁর যুক্তি এবং অকাট্য সব দলিল দরবারি আলেমদের মুখে পেরেক ঠুকে দিচ্ছিল।  অসহায়ের মতো এ ওর দিকে তাকাচ্ছিলেন।  ইমামের এই আক্রমণাত্দক চেহারা দেখে মুতাজিলাদের সবচেয়ে কুটিল পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী আবু দাউদ মুতাসিমকে করার জন্য বললেন_'আমিরুল মুমিনিন, এই পথভ্রষ্ট অন্যকেও সে সে করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।  আপনার সামনেই বসে আছেন আপনার রাষ্ট্রীয় ফকিহ্ ও বিচারকরা।  '  তাঁরা যা বলবেন তা তো পরিষ্কার! 

 তাঁরা সবাই একবাক্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকেই গুমরাহ্ ও পথভ্রষ্ট বলে ফতোয়া দিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে অস্বীকৃতি জানালেন

  .

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ আলাইহি এর মৃত্যুবরণ 

(Death of Imam Ahmad Ibn Hamble)

ইমাম, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ৭৫ বছর বয়সে ২৪১ হিজরি সনের রবিউল আউয়াল মাসে দ্বাদশ তারিখ শুক্রবার  জোহরের সময় মৃত্যু বরন করেন।

 তাঁকে  ইরাকের বাগদাদে শহীদদের কবরস্থানে ঐ দিন তাকে বিকেলের পরে দাফন করা হয়।   অসংখ্য মানুষ তাঁর জানাজায় অংশ নেন। তাঁর কবর বাগদাদের আল-হায়দারখানাহ এলাকায় অবস্থিত।  হাসান পাশা মসজিদের নিকটে অবস্থিত আরিফ আগা ' মসজিদের নিকট।  এখানে লেখা আছে যেইমাম আহমদ বিন হাম্বলে রাহমাতুললাহ আলাইহি এর সমাধি স্থান বাব হার্ব্ব কবরস্থান

মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল এর পরিচিতি 

  (musnad of Ahmad ibn hanbal)

মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থে বিষয়ভিত্তিক হাদীস বর্ণনা করার পরিবর্তে প্রত্যেক সাহাবী দ্বারা বর্ণিত হাদীস দ্বারা তা বিন্যস্ত করা হয়েছে।

الكتاب المسند في علم مصطلح الحديث هو الكتاب الذي يروي مؤلفه أحاديث كل صحابي على حدة

The book based on the science of the term hadith is the book whose author narrates the hadiths of each companion separately

আর 'আশারাহ মুবাশারাহ(العشرة المبشرة بالجنة) ("দশ জন যাদের জান্নাত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল") এর হাদীস দিয়ে এটি শুরু হয়েছে।

(ففي (مسند أحمد)، و(سنن الترمذي) عن عبدالرحمن بن عوف عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال: ((أبو بكر في الجنة، وعمر في الجنة، وعثمان في الجنة، وعلي في الجنة، وطلحة في الجنة، والزبير في الجنة، وعبد الرحمن بن عوف في الجنة، وسعد بن أبي وقاص في الجنة، وسعيد بن زيد في الجنة، وأبو عبيدة بن الجراح في الجنة)).وإسناده صحيح

এটি তাদের মর্যাদা এবং আল্লাহর রাসূলের থেকে হাদীস পাওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর স্বীকৃত দেয়ার জন্য করা হয়।

*কেউ কেউ বলেন যে,আহমদ ইবন ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তাঁর গ্রন্থের বিষয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন যা নিম্নরূপে:

 "আমি এই কিতাবটিতে কেবল সেইসব হাদীস অন্তর্ভুক্ত করেছি যেগুলো অন্য আলেমরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে।

(قيل ليحيى بن معين كما في العلل ومعرفة الرجال  «لو أمسكت لسانك عن الناس فإن أحمد يتوقى ذلك؟ فقال: هو والله كان أشد في الكلام في الرجال، ولكنه هو ذا اليوم يمسك نفسه

আবুল-ফারাজ ইবনুল জাওজি   বলেন,

 

মুসনাদে এমন কিছু হাদীস রয়েছে যেখানে কোন বর্ণনাকারী কিছু অতিরিক্ত সংযোজন করেছে। কেউ কেউ বলেন এরকম নয়টি হাদীস আছে, বা অন্য কেউ বলেন পনেরটি হাদিস আছে এমন। তবে সবাই এটিতে একমত যে, যেইসব হাদীস বানোয়াট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেগুলি নতুন কোন হাদীস নয়। 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির শরিআতের বিধিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে হাদীসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

 তাঁর জীবনের  শ্রেষ্ঠ কর্ম হচ্ছে (مسند) 'মুসনাদ', যাতে অন্তর্ভুক্ত আছে প্রায় ২৯ হাজার হাদীস ।  তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে_কিতাবুস সালাত, কিতাবুস সুন্নাহ ও মুতাজিলা মতবাদের ভ্রান্ত যুক্তির বিরুদ্ধে থাকাকালে লিখিত 'আর রা'দ আলাল জিন্দিকা' 

যদিও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল  রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এর মৌলিক শিক্ষার উদ্দেশ্যকে ফিকহশাস্ত্রে করার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা তবু তাঁর অনুসারীদের প্রশ্ন ও উত্তর সংগ্রহ করে ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।  এতে আইনের 'হাম্বলি' বিশ্লেষণের জন্ম হয় এবং ইসলামী আইনের চতুর্থ মাজহাব প্রতিষ্ঠা লাভ করে।  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির চিন্তাধারার বিরুদ্ধে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে শক্তিশালী বাধা আসে এসব বাধা ডিঙিয়েও মতো প্রভাবশালী জ্ঞানী ব্যক্তিদের আবির্ভাব ঘটে, যিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এর দর্শন ও চিন্তাকে কেন্দ্র করেই দরবেশদের ধর্মাচার পদ্ধতি ও কবর পূজার পূজার  নিন্দায় সোচ্চার হয়েছিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার মুসনাদে গুরুত্বের সাথে হাদীসের ইলাল বর্ননা করেন। 

মুসনাদ আহমদ এর হাদিসগুলোর প্রকারভেদ

 (Types of Hadiths of Musnad Ahmad ) 

এগুলাে ছয়ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন - 

মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক হাদীস বিভিন্ন ভাবে বর্ননা করেন। তার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। 

:কেউ কেউ বলেন যে আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি তাঁর গ্রন্থের বিষয়ে একটি মন্তব্য  করেন

"আমি এই গ্রন্থে কেবল সেইসব হাদীস অন্তর্ভুক্ত করেছি যেগুলো অন্য আলেমরা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে।।"

* আবুল-ফারাজ ইবনুল জাওজি বলেন, , মুসনাদে এমন কিছু হাদীস রয়েছে যেখানে কোন বর্ণনাকারী কিছু অতিরিক্ত সংযোজন করেছে। 

*কেউ কেউ বলেন এরকম নয়টি হাদীস আছে, বা অন্য কেউ বলেন পনেরটি হাদিস আছে এমন। তবে সবাই এটিতে একমত যে, যেইসব হাদীস বানোয়াট বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেগুলি নতুন কোন হাদীস নয়। 

*১) . যে হাদীস গুলাে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এর পুত্র আবু আবদুর রহমান আবদুল্লাহ তাঁর পিতা ইমাম আহমদ  রাহমাতুললাহ আলাইহি হতে বর্ণনা করেছেন তাঁর নিকট হতে সরাসরি শ্রবণের পর। 

(এগুলাে ইমাম আহমদের মুসনাদ নামে পরিচিত। এই পর্যায়ের হাদীসের সংখ্যা বহু। মুসনাদ গ্রন্থের তিন-চতুর্থাংশ জুড়ে প্রায় এই পর্যায়ের হাদীসের অবস্থান।) 

*২.) এমন হাদীস, যেগুলাে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা ইমাম আহমদ  রাহমাতুললাহ আলাইহি থেকেও শুনেছেন এবং অন্য কারাে নিকট থেকেও শুনেছেন। এই প্রকারের হাদীসের সংখ্যা খুবই কম।

*৩) . এমন হাদীস, যেগুলাে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা থেকে নয় বরং অন্য কারাে সূত্রে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় এগুলাে (زرايد عبد الله) যাওয়াইদ-ই আবদুল্লাহ (আবদুল্লাহ -এর বর্ণিত অতিরিক্ত হাদীস) নামে পরিচিত। এই প্রকারের হাদীসের সংখ্যা প্রথম প্রকারের হাদীসের সংখ্যা হতে কম কিন্তু অন্য সকল প্রকারের হাদীসের সংখ্যা হতে বেশি।

 

*৪.) এমন হাদীস যেগুলাে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা ইমাম আহমদের সামনে পাঠ করে শুনিয়েছেন, ইমাম আহমদ রাহমাতুললাহ আলাইহি -এর মুখ হতে শুনেন নি। এই প্রকারের হাদীস কম।

*৫.) এমন হাদীস, যেগুলাে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা ইমাম আহমদ রাহমাতুললাহ আলাইহি -এর মুখ হতে শোনেননি এবং তাঁর সামনে পাঠ ও করেননি, বরং ইমাম আহমদের স্বহস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপিতে পেয়েছেন, এ পর্যায়ের হাদীসের সংখ্যা ও খুব বেশী নয়।

*৬.) এমন হাদীস, যেগুলাে হাকিম আবু বকর কাতীঈ বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ ও তাঁর পিতার সনদ বাদ দিয়ে অন্য সনদে, এই প্রকারের হাদীসের সংখ্যা অন্য সকল প্রকারের হাদীস থেকে কম।

মুসনাদ আহমদ গ্রন্থের অবস্থান

 (Status of Musnad )

হাদীসের অন্যান্য কিতাব যেমন জামি, সুনান এর মধ্যে মুসনাদের অবস্থান সম্পর্কে মুহাদ্দিসগন যে দৃষ্টিকোণ ব্যক্ত করেছেন তা নিম্নোক্ত :

-ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি বলেন

,(فانتقى ابن حنبل أحاديث المسند مما سمعه من شيوخه، ليكون للناس حجة ليرجعوا إليه، حيث قال عن مسنده في المقدمة: «عملت هذا الكتاب إماما، إذا  اختلفت)

ইবনে হাম্বল তাঁর শায়খদের কাছ থেকে যা শুনেছিলেন তা থেকে মুসনাদের হাদীসগুলি বেছে নিয়েছিল, যাতে লোকেরা তার উল্লেখ করার পক্ষে যুক্তি অর্জন করতে পারে, যেমন তিনি তাঁর মুসনাদ সম্পর্কে প্রবর্তনে বলেছেন: এই কিতাবটি কোন বিষয়ে মতানৈক্য হলে নেতৃত্ব দিয়েছে।

আবু মুসা আল-মাদিনী  আবু মুসা মুহাম্মাদ ইবনে আবি বকর ওমর ইবনে আবী Iঈসা আল-মাদিনী আল-ইসফাহানী আল-শাফিয়াই, বলেন, তিনি তার মুসনাদ গ্রন্থে যে সকল রাবীদের সত্যবাদী ও আমানতদার মনে করেছেন তাদের দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। এখানে অভিযুক্ত রাবীদের হাদীস সংকলন করা হয়নি। 

ইবন কাসীর রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, আবু মূসা কথা সঠিক তথ্য নয় কারন তিনি যঈফ ও মাউযু হাদীস বর্ননা করেন। তিনি দলীল হিসেবে এই হাদীস পেশ করেন 

فضائل مرو، وعسقلان،  والبرث الأحمر عند حمص

ইবন কাইউম আবু আবদুল্লাহ শামস আল-দীন মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর ইবন আইয়ুব ইবনে সাদ ইবনে হারিজ আল জারাআই রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, আহমদ ইবন হান্বল তার গ্রন্থে সহীহ শর্ত করেননি বরং যঈফ ও মুনকার হাদীস গ্রহন করেছেন। তিনি বলেন, الموضوعات" تسعة وعشرين حديثًا منه،জয উদ্দিন ইরাকী বলেন, এ মুসনাদে ১৯টি মাউযু হাদীস আছে। জালাল উদ্দিন সুয়ুতী ইবন কাইউম মতামতের সাথে আরো  আরো১৪টি হাদীস সংযোজন করেন। (سماه: الذيل الممهد) 

وزاد زين الدين العراقي عليها تسعة أحاديث

তিনি  সে হাদীসগুলি উল্লেখ করেছেন যে হাদীস গুলির উপর ইরাকি হুকুম দিয়েছেন। 

তিনি এতে পনেরটি হাদীস যুক্ত করেছেন, যা  ইমাম ইবনে আল-জাওযির উল্লেখ করেছেন। , অতঃপর তিনি সকলের জবাব দিয়েছেন।  তিনি দাবী করেছেন যে তাদের বেশিরভাগ  ভালো , এবং মুনকাতে করা হয়নি।  শক্তিশালী বর্ননা আছে। ولا الحكم بكون واحد منها موضوعاً إلا الفرد 

النادر مع الاحتمال القوي في دفع ذلك

Nor is the ruling that one of them is subject, except for the rare individual, with a strong possibility of pushing this

 ইবন হাজার আসকালানী ও শামসুদ্দীন যাহাবী এবং ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল এর মধ্যে সহীহ ও দুর্বল  হাদীস রয়েছে যা হাসান ও হাসানের কাছাকাছি এবং এতে কোন মাউযু হাদীস নেই। 

(أن فيه الصحيح والضعيف الذي يقرب من الحسن، وليس فيه موضوع)   «وشرطه في المسند أنه لا يروي عن المعروفين بالكذب عندهم، وإن كان في ذلك ما هو ضعيف»، إلى أن قال: «زاد ابن الإمام زيادات على المسند ضمت إليه، وكذلك زاد القطيعي وفي تلك الزيادات كثير من الأحاديث الموضوعات، فظن من لا علم عنده أن ذلك من رواية الإمام أحمد في مسنده» * وقال السيوطي في خطبة الجامع الكبير

মুসনাদে আহমদে যা কিছু ছিল তা গ্রহণযোগ্য, কারণ এতে দুর্বল হাদীস ও হাসানের নিকটবর্তী।

.(«وكل ما كان في مسند أحمد هو مقبول فإن الضعيف الذي فيه يقرب من الحسن،  

*وقال ابن حجر في كتابه تعجيل المنفعة في رجال الأربعة:

মুসনাদে কোন হাদীস নেই যার তিনটি হাদীস বাদে কোন ভিত্তি নেই, বা তার মধ্যে চারটি হযরত আবদুল-রহমান ইবনে আউফের হাদীস

 منها حديث عبد الرحمن بن عوف «أنه يدخل الجنة زحفًا»، والاعتذار عنه أنه مما أمر أحمد بالضرب عليه، فتُرك سهوًا أو ضُرب وكُتب من تحت الضرب.

*

وقد قام أحمد محمد شاكر بإحصاء لعدد الأحاديث الصحيحة والضعيفة، بلغت في نهاية تحقيقه للمجلد الخامس عشر 7246 حديثًا صحيحًا وحسنًا، و853 حديثًا ضعيفًا.

মুসনাদ আহমদ সম্পর্কে আলিমদর অভিযোগ 

(Opinions of scholars in the document) 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত মুসনাদ আহমদ সম্পর্কে মুহাদ্দিসগনের বিভিন্ন ধরনের মতামত পাওয়া যায়। অনেকে যেমন প্রশংসা করেন আবার অনেক আলিম এর সমালোচনা করেন। নিম্নোক্ত  এবিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। 

ক) ইমাদ আল-দীন আবু আল-ফিদা ইসমাইল বিন ওমর ইবনে কাছীর বিন দেও বিন দারা  আল-কুরাসী আল-হাসালি, আল-বাসরি, আল-শাফিই ইবন কাসীর আল দামেশ্কী বলেন, মুসনাদে আহমাদে এমন কিছু সনদ ও মতন আছে যার অনেক ইমাম বুখারী ও সহীহ মুসলিমে পাওয়া গেছে। যার কোনটাই সুনানে আরবাআ পাওয়া যাবে না। 

«وكذلك يوجد في مسند الإمام أحمد من الأسانيد والمتون شيء كثير مما يوازي كثيرًا من أحاديث مسلم، بل والبخاري أيضًا، وليست عندهما ولا عند أحدهما، بل ولم يخرجه أحد من أصحاب الكتب الأربعة وهم أبو داود والترمذي والنسائي وابن ماجه»،

Musnad Ahmad is not equivalent to the Book of Musnad in its multitude and good contexts »

.قال: «لا يوازي مسند أحمد كتاب مسند في كثرته وحسن سياقاته»

খ) .আবু মুসা মুহাম্মাদ বিন আবী বকর উমর ইবনে ইসা আল-মাদানী আল-ইসফাহানী আল-শাফিই, আবু মুসা আল মাদিনীশলেন

আমি এখনও আবু মনসুর ইবনে রুজাইকের উপর পড়ার আগ পর্যন্ত লোকদের কাছ থেকে শুনেছিলাম।” 

তিনি বলেছিলেন: এই গ্রন্থটি হাদীসের লেখকদের এক বিরাট উৎস এবং শক্তিশালী রেফারেন্স।

*قال أبو موسى المديني «لم أزل أسمع ذلك من الناس حتى قرأته على أبي منصور بن رزيق»، وقال: «هذا الكتاب أصل كبير ومرجع وثيق لأصحاب الحديث، انتقي من حديث كثير ومسموعات وافرة، فجعله إمامًا ومعتمدًا، وعند التنازع ملجأ ومستندًا»

গ) তাজ উদ্দিন আবু আল-হাসান আলী ইবনে আবদ-কাফি বিন আলী বিন তামাম বিন ইউসুফ বিন মুসা বিন তামাম বিন হামিদ বিন ইয়াহইয়া বিন উমর ইবনে ওসমান বিন আলী বিন মাসওয়ার ইবনে সালিম আল-সুবকি, খাজরাজী, আনসারী বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মুসনাদে সংকলন করেন যা ইসলামের অন্যতম উৎস।"

.(«وألف مسنده وهو أصل من أصول الإسلام.») 

ঘ) নুর উদ্দীন হাইসুমী আবু আল-হাসান নূর আল-দ্বীন আলী ইবনে আবী বকর বিন সুলায়মান রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, মুসনাদ আহমদ অন্যের চেয়ে অধিক সহীহ গ্রন্থ 

(:«مسند أحمد أصح صحيحا من غيره») 

চ) জালবী বলেন

এটি ইসলামের মূল বিষয়গুলির মধ্যে একটি দুর্দান্ত কিতাব।  এটিতে তিনশত হাদীস সুলাসিযাত সনদে বর্ননা করা হয়েছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল শর্ত হচ্ছে এখানে সহীহ ব্যতীত কোন হাদীস নেই। 

.: «وهو كتاب جليل من جملة أصول الإسلام وقد وقع له فيه نيف عن ثلاثمائة حديث ثلاثية الإسناد، ذكر أن أحمد بن حنبل شرط فيه ألا يخرج إلا حديثا صحيحًا عنده،

ছ)  আবু মুসা মুহাম্মাদ বিন আবী বকর ওমর ইবনে ইসা আল-মাদানী আল-ইসফাহানী আল-শাফিইবলেন, এখানে মাউযু হাদীস আছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নিজেই ইহাকে যঈফ বলেছেন। 

(، وأجيب بأن فيه أحاديث موضوعة، وقد ضعف الإمام نفسه».) 

জ) তাকী-দীন আবু আল-আব্বাস আহমদ বিন আব্দুল-হালিম বিন আবদ-সালাম আল-নুমায়রী আল-হারানী বলেন

এখানে এমন কোনো কোন হাদীস পাওয়া যায় না যে হাদীসের উপর  সংগ্রহে কোন মুসলিম  নির্ভরশীল  । এখানে এমন হাদীস আছে, যা সহীহাইনের ও সুনান আরবাআর মধ্যে নেই। 

*قال ابن تيمية: «وليس في الأحاديث المرفوعة في ذلك حديث في شيء من دواوين المسلمين التي يعتمد عليها في الأحاديث، لا في الصحيحين ولا كتب السنن ولا المسانيد المعتمدة كمسند الإمام أحمد وغيره».

ঝ) ইবন আসাকিরে আবু আল-কাসিম আলী বিন আল-হাসান বিন হেবা আল্লাহ বিন আসকার আল-ডিমাস্কি  বলেন, এটি হাদীসের  সর্ববৃহৎ  কিতাব যা সংগ্রহ করা হয়েছে।  ইমাম আবু আবদুল্লাহ আহমদ বিন হাম্বালের মুসনাদএটি একটি মূল্যবান কিতাব যা তিনি শ্রবণ এবং সংগ্রহ করতে  তিনি সেখানে ভ্রমণ করেন।  এই কিতাবটি বড় মর্যাদা ও  বৃহৎ কলেবর। বিদ্বানদের  নিকট প্রসিদ্ধ কিতাব ।

 «فكان أكبر الكتب التي جمعت فيه - أي كتب الحديث - مسند الإمام أبي عبد الله أحمد بن حنبل، وهو كتاب نفيس يرغب في سماعه وتحصيله، ويرحل إليه، إذ كان مصنفه الإمام المقدم في معرفة هذا الشأن، والكتاب كبير القدر والحجم، مشهورا عند أرباب العلم».

ট) ইবন আল জাওযী রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, ইমাম আহমদের মতে ইমাম আহমদ কর্তৃক সত্যায়িত সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার হাদীস রয়েছে। এ সংখ্যা সনদ হিসেবে ধরতব্য মতন হিসেবে নয়। তিনি এ থেকে তাঁর বিখ্যাত মুসনাদকে  সংকলন করেন। , যা জাতি  সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছে। তারা মতবিরোধের সময় দলীল হিসেবে গ্রহণ করে। উল্লেখ করার এবং গণ্য করার পক্ষে যুক্তিযুক্ত করে তোলে।

: «صح عند الإمام أحمد من الأحاديث سبعمائة ألف وخمسين ألفًا، والمراد بهذه الأعداد الطرق لا المتون، أخرج منها مسنده المشهور الذي تلقته الأمة بالقبول والتكريم، وجعلوه حجة يرجع إليه ويعول عند الاختلاف عليه».

ঠ) আবূ বকর আহমদ জাফর ইবন হামদান রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, আবু আব্দুর রহমান আমাকে বলেছেন, আমার পিতা এই মুসনাদ সাত লক্ষ হাদীস থেকে বর্ননা করেন। 

:

«قال لي أبو عبد الرحمن: هذا المسند أخرجه أبي رحمه الله من سبعمائة ألف حديث».

*ড) শামসুদ্দীন আল জাযারী রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, সহীহ বুখারী মত আর কোন গ্রন্থ নেই আর মুসনাদে আহমাদ এর মত কোন মুসনাদ নেই। 

فما من صحيح كالبخاري جامعًاولا مسند يلغى كمسند أحمد

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির হাদীস সংকলনের পদ্ধতি 

(Method of Compiling Hadith of Imam Ahmad Ibn Hamble Rahmatullahi Alaihi ) 

১)মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থে অধিকাংশ জায়গায় মারফু' হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়া খব অল্প জায়গায় মুরসাল ও মাওকুব হাদীস বর্ণনা করেছেন। 

*اشتمل المسند على الأحاديث المرفوعة وهو الغالب في الكتاب، وعلى خلاف شرط المسانيد احتوى على قليل من المرسل، وقليل من الموقوف على الصحابي

২)খুব অল্প জায়গায় মাকতু হাদীস বর্ননা করা হয়েছে। যেমন আতা ও ইকরামাহ এর বক্তব্য এ ছাড়া ইমাম মালিক ও আহমেদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম এর বক্তব্য ও নেই। হাফেয হাদীসের মৃত্যু ও তাদের শিক্ষা ভ্রমণ এবং জারহ ও তাদীল সংক্রান্ত কিছু রাবীদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। 

*، وقليل من المقطوع مثل أقوال عطاء وعكرمة، كما اشتمل على بعض الآثار المروية في التفسير مثل أقوال مالك بن أنس وأقوال أحمد بن حنبل نفسه، وتواريخ موت بعض الحُفاظ، وبعض رحلاته العلمية، وجرحه وتعديله في بعض الرواة.

৩)মাওয়াকুফ ও  মুরসাল হাদীসসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। যা কিছু মুহাদ্দিস এর নিকট মুসনাদের উপকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন - সনদের মতানৈক্য মুরসাল, মুত্তাসিল, মারফুও মাওকুফ ইত্যাদি ।এ ছাড়া মুল হাদীস বর্ণনা করার জন্য যে কোন সনদ এর বিরুদ্ধে হবে না। 

৪)আহমেদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মুসনাদের অধিকাংশ জায়গায় জারহ এবং তাদীলের ব্যাপারে কোন কথাই বলেননি। তিনি তার  আলোচনার জায়গা হিসেবে ইলালের ক্ষেত্রে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। 

*ولم يتكلم ابن حنبل في الجرح والتعديل في أغلب مسنده، لأن موضع التفصيل هو كتب العلل،

৫)ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তার মুসনাদে

)(فلم يكن يذكر الخلاف أو بعضه، بل اكتفى بإيراد الأحاديث

উভয়ের পার্থক্য অথবা এর অংশে বিশেষ উল্লেখ করেননি, বরং তিনি কেবল হাদীসই উদ্ধৃত করেছেন। 

وهناك بعض التعليقات الحديثية الموجودة في المُسند والتي يُرجح العلماء أنها من إيراد ابنه عبد الله.

এই মুসনাদে কিছু মুযাল্লাক (যে হাদীসে সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পরেছে, তাকে মুআল্লাক হাদীস বলে ) হাদীস আছে অধিকাংশ আলিমদর মত এটা তার পুত্রে আব্দুল্লাহ বর্ননা করেন। (যে হাদীসের সনদে বিশ্বস্ততার বিপরীত কার্যাবলী গোপনভাবে নিহিত থাকে ,তাকে মুআল্লাল হাদীস বলে ) 

*৬)ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তার মুসনাদ কিতাবে সহীহ হাদীসের শর্ত করেননি তিনি বলেন, আমি  মুসনাদে প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনা করা উদ্দেশ্য করেছিলাম এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা  জিম্মায লোকদের রেখে এসেছি। আর যদি আমি বলতে চাইতাম আমার কাছে সহীহ হাদীস এইটা তাহলে আমি এই মুসনাদ থেকে কিছু অংশ বাদ দিয়ে বর্ণনা করতাম না

(: «قصدت في المسند الحديث المشهور، وتركت الناس تحت ستر الله تعالى، ولو أردت أن أقصد ما صح عندي لم أرو من هذا المسند إلا الشيء بعد الشيء، ولكنك يا بني تعرف طريقتي في الحديث لست أخالف ما ضعف إذا لم يكن في الباب ما يدفعه»،

 

৭)ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তার মুসনাদে আমলের হাদীসের সনদ সহজ করেন। অপরদিকে আহকামের, কাফ্ফারা ও মিরাসের হাদীসের  সনদের ব্যাপারে কঠোর হয়েছেন। তিনি বলেন

* (وقال أيضا: «إذا جاء الحديث في فضائل الأعمال وثوابها تساهلنا في إسناده، وإذا جاء الحديث في الحدود والكفارات والفرائض تشددنا فيه».) 

৮)ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির চিন্তাধারার মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হলো আমলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহনযোগ্য কিন্তু আহকামের ক্ষেত্রে অথবা সহীহ হাদীসের বিপরীত গ্রহন করা হবে না। 

৯)হাদীস বর্ণনাকারী যদি মিথ্যাবাদী অথবা  অগ্হনযোগ্য না হয় তবে তাদের আদালত বা সিকাহ শর্ত করেননি।

 (*يشترط ابن حنبل أن يكون يتحقق في الراوي التوثيق والعدالة، وألا يكون من الكذابين المتروكين) 

حتى يكون ممن يصلح للاحتجاج به، كما كان لا يروي عن من اتُهم في عقيدته، ولا عن من أجاب في محنة خلق القرآن، فلم يرو عن علي بن المديني بعدما أجاب في المحنة، وروى عنه 68 حديثًا سمعها منه قبل المحنة، فلمَّا كانت المحنة امتنع عن الرواية عنه،

১০) আবু জুরআ রাযীউবাইদ আল্লাহ বিন আবদুল করিম বিন ইয়াজিদ বিন ফারৌহ বিন দাwood, আবু জারাহ আল-রাজি ডাকনাম, এবং তিনি আয়শ বিন মুতরিফ ইবনে উবাইদ আল্লাহ বিন আয়েশ বিন আবি রাবিয়া আল-কুরাসী আল-মাখজুমি বলেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি علي بن الجعد، ولا سعيد بن سليمان থেকে হাদীস বর্ণনা করেননি। অনুরূপ ভাবে عن أبي نصر التمار، ولا عن أبي معمر، ولا يحيى بن معين،  থেকে ও হাদীস বর্ণনা করেননি। 

* وقال:ولا يرى الكتابة ولا أحد ممن أجاب في المحنةويقول أحمد بن حنبل: «لو حدثت عمن أجاب في المحنة، لحدثت عن اثنين: أبو معمر، وأبو كريب

؛If it had happened to those who answered the ordeal, it would have spoken of two: Abu Muammar and Abu Qurayb;

 তিনি শিআ রাবীদের থেকে কোনো হাদীস গ্রহন করেননি। অন্যদিকে কাদরীযা ফেরকার কোন হাদীস সংকলন করেননি। 

كما لا يروي عن من اتُهم بالتشيّع أو من يقع في الصحابة، ويترك الرواية عن الداعي إلى مذهب الإرجاء والقدرية، أما إن كان حاله مستترًا ولم يكن داعيًا لهذه المذاهب روى عنه، قال إبراهيم الحربي:

 «قيل لأحمد بن حنبل: يا أبا عبد الله، سمعت من أبي القطن القدري، قال لم أره داعية، ولو كان داعية لم أسمع عنه