Wednesday, September 16, 2020

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-৯, বিষয়: আল-কুরআনের বৈজ্ঞানিক মু‘জিযা

।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।

 সত্যের সন্ধানে পর্ব-৮ পড়তে ক্লীক করুন এখানে

 পূর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর

আল-কুরআনের বৈজ্ঞানিক মুজিযা

১) বৈজ্ঞানিক তথ্যের নির্ভুল উপস্থাপনঃ

কুরআন বিজ্ঞানের উৎস কুরআনের মধ্যে বিজ্ঞানের সকল সূত্র বিদ্যমান। যুগে যুগে বিজ্ঞানের চর্চা ও উৎকর্ষতায় বিজ্ঞানময় কুরআনের বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত¡ উদঘাটিত ও বোধগম্য হচ্ছে। আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে আল-কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ, যাতে বিজ্ঞানের অনেক তত্ত¡ ও তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।

কাজী জাহান মিয়া তার আল-কুরআন দ্য চ্যালেঞ্জ এ বলেন, ‘কুরআনে মানুষের জ্ঞাত-অজ্ঞাত বহুবিধ বিষয় তালিকার একটি হলো বিজ্ঞান। প্রায় সাড়ে সাতশ আয়াতে রয়েছে বিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য প্রস্তাব।কাজী জাহান মিয়া, আল কোরআন দ্য চ্যালেঞ্জ, (মহাকাশ পর্ব ১) ঢাকা, পৃ. ১৮।

ডঃ মরিস বুকাইলি বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত¡ ও তথ্য সম্বলিত কুরআনের বাণী সংখ্যায় প্রচুর। আর এসব বাণী অবতীর্ণ ও সংকলিত বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে কিভাবে যে এত বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারল, সে বিষয়টিই আমাকে বিস্মিত করেছে সবচাইতে বেশি।

ডঃ মরিস বুকাইলি আরও বলেন, ‘কুরআনের যে কোন পাঠকের নিকট যে বিষয়টি বড় হয়ে ধরা পড়বে, তা হলো, কুরআনে প্রকৃতি তথা বিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনার প্রাচুর্য। বস্তুতঃ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিশ্বসৃষ্টি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূমন্ডল গঠনে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, পশুপ্রজাতি, উদ্ভিদজগৎ এবং মানব প্রজন্ম প্রভৃতি বিষয়ে এত অধিকভাবে আলোচনা হয়েছে যে, অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, এসব বিষয়ের আলোচনায় বাইবেলের ভুলের পরিমাণ যেখানে পর্বতপ্রমাণ, সেখানে কুরআনের কোন  আয়াতে একটি মাত্র ভুলও খুঁজে পাইনি।

২) উনিশ সংখ্যাটির মুজিযাঃ

কুরআনের অসংখ্য মুজিযার মাঝে ইতিমধ্যে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে গোটা মানব জাতি তাদের সব কম্পিউটার ও ক্যালকুলেটার সহ প্রচেষ্টা চালিয়ে ও কুরআনের সমান গ্রন্থ রচনা অসম্ভব। পরষ্পর ১৯ সংখ্যার বুননের মত কুরআনের মত গ্রন্থ রচনা আদৌ অসম্ভব নয়। কম্পিউটারে আসে ৬২৬ এর পর ২৪ টি শুণ্য বার প্রচেষ্টা চালালে ১ বার সফলতা আসতে পারে। সেপটি লিখন সংখ্যাটর মান মানব হিসাবের বাইরে। ৫০০ কোটি মানুষ জন্ম থেকে ৪৫০ কোটি বছর চেষ্টা করলে একশ কোটি ভাগের ৩৫ ভাগ করতে সক্ষম। দি পারপিচ্যুয়াল মির‌্যাকল অব মুহাম্মদ (সা.) গ্রন্থে গ্রন্থকার ব্যাপক গবেষনা চালিয়েছেন।ড. রাশেদ খলিফা, দি পারপিচ্যুয়াল মির‌্যাকল অব মোহাম্মদ (সা.), ইউএসএ, ইসলামিক প্রোডকশন ৫৩৩৭। কুরআনে অক্ষর যে ভাবে কম্পিউটারে তা বিন্যস্ত করেন। ১১৪ টি সূরার অবস্থান ও ২৯টি সূরার গুরুতে ববহৃত হরফে; মুকাত্তায়াত যে নিয়মে বিন্যস্ত সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন। এরপর কিছু অলৌকিক তত্ত¡ স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। এভাবে ১৯ সংখ্যার দৃঢ় বন্ধন পান। হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ, কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ, ১ম প্রকাশ (ঢাকা : আল কুরআন একাডেমী লন্ডন) পৃ. ১৬।

লেবাননের অধিবাসী রশীদ খলিফা মিসরী সর্বপ্রথম পরীক্ষাটি করেন। কুরআনকে সম্পূর্ন নির্ভূলভাবে সেট করেন কম্পিউটারে। তারপর শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। যারা জনাব ফরিদ উদ্দীন মাসউদ কর্তৃক অনুদিক আশ্চর্য এই কুরআন পাঠ করেছেন, তারা বিষয়টির একটি সহজ বিবরণ ইতোমধ্যে অবগত রয়েছেন। ৭৪ নং সূরার ৩০ নং আয়াতের দিকে দৃষ্টি। আয়াতটি

  عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ

(তার উপরে উনিশ)। على শব্দটির মূল ধাতু علو সর্বোচ্চ, এটির সাথে ها অর্থ  জেনে রাখ, ধর সেখানে ইত্যাদি নির্দেশ সূচক সর্বনাম এবং ৩য় পুরুষে এক বচন বাচক শব্দের শেষ অংশে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হয়।

ক) প্রথম অবতীর্ণ মুজিযাঃ

সূরা আলাকে প্রথমে অবতীর্ণ আয়াত সহ আয়াত ১৯টি। ৫ আয়াতে অপর ৭৬টি। গোটা সূরাতে ২৮৫ আয়াত সূরাটির ক্রমিক নং ৯৬ ১১৪ থেকে ৯৬ পর্যন্ত গুনে আসতে ১৯ অবস্থানে সূরাটি প্রতিটি পরিসংখ্যানকেই ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। ১৯ এর প্রথমে ১ এবং শেষে ৯, ১৯ মৌলিক বিভাজ্য ও বিভাজকের মাঝে সীমারেখা যেমন সীমা রেখা সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে।

খ) বিসমিল্লাহর মুজিযাঃ

৭৪ নং সূরা একসাথে ৩০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। আয়াতে ১৯ সংখ্যার প্রস্তাবের পর নাযিল হয় বিসমিল­াহির রাহমানির রাহিম। এ আয়াত নিয়ে ১ম অবতীর্ণ সূরা ফাতিহা, আয়াতটিতে অক্ষর সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে চারটি ইসম, ১৯ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য।

১) ইসম- সর্ব সাকুল্যে ব্যবহৃত ১৯ বার। ১৯ × ১=১৯

২) আল্লাহ- ২৬৯৮ বার= ১৯ × ১৪২

৩) রহমত- ৫৭ বার = ১৯ × ৩

৪) রাহীম- ১১৪বার = ১৯ × ৬

ড. রাশীদ বলেছেন ঘটনাটি পরিকল্পনা বিহীন ভাবে দৈবাৎ ঘটে যেতে পারে। তবে ২য় বার নয়, ৩য় বার অসম্ভব, ৪র্থ বার প্রশ্নাতীত।

গ) সূরার শুরুতে আগমন মুজিযাঃ

১১৩ টি সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এসেছে। কিন্তু সূরা তাওবাতে আসেনি। আবার সূরা নামলে ২বার এসেছে ফলে তা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ঘ) হরফে মুকাত্তায়াত মুজিযাঃ

১৪০০ বর্ণমালা ২৯টি সূরার শুরুতে

১. এগুলোর অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।

২. এগুলো ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে এসেছে। যা ২৯+১৪+১৪=৫৭।

৩. সূরাগুলো শুরুতে যেমন আলিফ লাম মীম এর আলিফ- ৪৫০২, লাম- ৩২০২, মীম- ২১৯৫ বার। যার যোগফল ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৪. আল ইমরানে প্রথমে আলিফ লাম মীম, সূরাটিতে আলিফ- ২৫২১বার, লাম- ১৮৯২ বার, মীম- ১২৪৯ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

ঙ) শাব্দিক বিভাজ্য মুজিযাঃ

কুরআনে কাওমে লুত শব্দটি ১২ বার এসেছে, সূরা কাফে এসেছে ইখওয়ানে লুত। এদের অর্থ একই। কিন্তু যদি কাওমে লুত আসতো তাহলে ১৩বার হতো যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হতো না।

চ) গানিতিক ফর্মূলা মিলের মুজিযাঃ

بسطة শব্দটি তিন স্থানে ছোয়াদ এর পরিবর্তে সীন লেখা হয়। কিন্তু সূরা আরাফের ৬৯ আয়াতে ছাক্বাত শব্দের মধ্যে ছোয়াদ এর উপর ছোট সীন দেয়ার ফলে তিনটিতে ছোয়াদ এর সংখ্যা এখন ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ড. রাশীদ খলিফা মিসরী, অনুবাদ ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, আল কুরআন দ্যা আলটিম্যাট মির‌্যাকল। মোঃ ছফিউল্লাহ মাহমুদী, আল কোরআন শ্রেষ্ঠ মোজেজা, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৬-৬৮। ইফাবা : অগ্রপথিক, ফেব্র২০০০, পৃ. ১০৯-১১৫।

৩) বিশ্ব সৃষ্টি তত্তঃ

বিশ্বসৃষ্টি আল্লাহ তাআলার একটি বড় কুদরত। তাঁর শক্তি ও ক্ষমতার নিদর্শন। আল­াহ তাআলা কুরআন মাজীদে বিশ্বসৃষ্টির মৌল প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন ঃ

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ  

যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরস্পর সংযুক্ত ছিল, পরে আমরা উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি। এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’ আল-কুরআন, সূরা আম্বিয়া : ৩০।

আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে আরও বলেন ঃ

  ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ

এরপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন। আর তখন তা ছিল ধুম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।আল-কুরআন, সূরা হা মীম সেজদাহ : ১১।

আধুনিক বিজ্ঞান বহু বিচার-বিশ্লেষণের পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আদিতে মহাবিশ্ব ছিল গ্যাসীয় পিন্ড মাত্র। আর সেই গ্যাসীয় মহাপিন্ডটি ছিল হাইড্রোজেন ও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ হিলিয়ামের সমাহার। এইসব মৌল উপাদানসহ সেই গ্যাসীয় পিন্ডটি ধীরে ধীরে আবর্তিত হত। মহাশূণ্যের এই গ্যাসীয় পিন্ডকে বলা হয় নেবুলা বা নীহারিকা। আবর্তনের পরিণতিতে সে সুবিশাল নীহারিকা বেশ কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে চতুর্দিকে বিরাট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। নীহারিকার সে টুকরোগুলোও ছিল এক একটি সুবৃহৎ। টুকরোগুলো আবারও টুকরা টুকরা হয়ে সূর্যের মত এক একটি নক্ষত্র, বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ বিশেষতঃ পৃথিবীর সৃষ্টি ঘটিয়েছে। এখন বিজ্ঞানীগণের নিকট এটি স্বীকৃত সত্য যে, সূর্য এবং তার গ্রহ সমূহ একই নীহারিকা থেকে উৎপন্ন। সূর্য সে নীহারিকার মধ্যেই ঘনীভূত হয়েছে। আর তার গ্রহসমূহ ঘনীভূত হয়েছে সে নীহারিকার পরিমন্ডলের আওতায়। বিষয়টি সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়, সংকোচন ও ঘনীভূত প্রক্রিয়ায় আবর্তিত গ্যাসীয় পিন্ড টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে। আর এতে সূর্য ও পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ তাদের অবস্থানে চলে আসে। ডঃ মরিস বুকাইলি, বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৭।

এ আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায় যে, কুরআন মাজীদ বিশ্বসৃষ্টির মূল উপাদান হিসাবে যে ধুম্রপুঞ্জের সন্ধান প্রদান করেছে, আধুনিক বিজ্ঞানের অনুসন্ধানে তাই গ্যাসীয় পিন্ড। বহুদিন পর আধুনিক বিজ্ঞান এ তত্ত¡টি লাভে সক্ষম হয়েছে।

৪) ওয়াটার সাইকেলঃ

কুরআন অবতীর্ণের যুগে পানির গতিপথ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী নানান ভ্রান্ত মতবাদ চালু ছিল। মধ্যযুগে এরিস্টটলের মত মনীষীর মতবাদ অনুসারে, ঝর্ণাধারাসমূহ পরিপুষ্ট হয়ে থাকে ভূগর্ভস্থ হৃদের পানির দ্বারা।

কুরআন মাজীদ পানির গতিপথ সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করে আজ থেকে বহু পূর্বে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

 أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيًا

তিনি বর্ষণ করেন পানি আসমান থেকে ফলে উপত্যকাসমূহ প্রবাহিত হয় তাদের পরিমাণ অনুসারে। আর প্লাবন তার ওপরস্থিত আবর্জনা ভাসিয়ে নিয়ে যায়।আল-কুরআন, সূরা রাদ : ১৭।

আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ

   أَلْوَانُهُ  أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَلَكَهُ يَنَابِيعَ فِي الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا مُخْتَلِفًا

তুমি কি দেখ না, আল­াহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তাকে বিভিন্ন সূত্রে যমীনের ভেতরে নেন। এবং তার দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন।আল-কুরআন, সূরা জুমার : ২১।

আধুনিক বিজ্ঞান বহুদিন পর পানির চক্রাকার গতিপথের জ্ঞান লাভ করে। বার্নার্ড পেলিশি তাঁর নেচার অব ওয়াটার্স এ্যান্ড ফাউন্টেন্স্ বোথ ন্যাচারাল এ্যান্ড আর্টিফিসিয়ালপুস্তকে (প্যারিস, ১৫৭০) পানির চক্রাকার গতিপথ সম্পর্কে বিশেষত বৃষ্টির পানির দ্বারা ঝর্ণাসমূহ পরিপুষ্ট সাধনের বিষয়ে প্রথম নির্ভুল ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।

৫) উদ্ভিদের প্রাণ সম্পর্কে তথ্যদান

আধুনিক জড়বাদী বিজ্ঞানের অন্যতম একটি তত্ত¡ হলো উদ্ভিদের প্রাণ আছে। এ তত্ত¡ আজ সর্বজন স্বীকৃত সত্য। অথচ আধুনিক বিজ্ঞানের চৌদ্দশ বছর আগে উদ্ভিদ ও অন্যান্য বস্তুর যে প্রাণ আছে এ সত্য আল কুরআন ঘোষণা দিয়েছে। আল কুরআনের অমোঘ ঘোষণাঃ

 وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ

তারকারাজি ও বৃক্ষলতা আল­াহকে সেজদা করছে।  আল-কুরআন, সূরা আর রাহমান : ৩।                                    

يَسْأَلُهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অন্তর্গত সমস্তই তার নিকট প্রার্থনা করছে।আল-কুরআন, সূরা আর রাহমান : ২৯।                

আল-কুরআনে এ ধরণের অনেক আয়াত আছে। এসব আয়াত থেকে এসত্যই প্রমাণিত হয় যে, মহাবিশ্বলোকে নিষ্প্রাণ বস্তু বলতে কোন কিছু নেই। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু তার ভাষা অনুযায়ী মহান আল্লাহ জিকির করছে। আধুনিক জড়বাদী বিজ্ঞান কুরআনের বাণীকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।


৬) পানি থেকে সকল সৃষ্টির তথ্যদানঃ

আধুনিক জড়বাদী বিজ্ঞানের আর একটি অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে পানি, তাহলো প্রাণী জগতের সৃষ্টির মূল। পানি থেকে সকল প্রাণী জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এ সত্য আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে আল-কুরআন পানি থেকে প্রাণী জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, এ সত্যের ঘোষণা দিয়েছে।

মহান আল­াহর ঘোষণা ঃ

  وَاللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَابَّةٍ مِنْ مَاءٍ

“আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে পানি থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন।আল-কুরআন, সূরা নূর : ৪৫।                         

           خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ

যিনি মানুষকে ঘনীভূত রক্ত হতে সৃষ্টি করেছেন।আল-কুরআন, সূরা আলাক : ২।

আল্লাহ বলেন ঃ

وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُون

আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করে থাকেন। এমনি করে তার সাহায্যে মৃত্যুর পর (শুকিয়ে যাবার পর) মাটিকে জীবন্ত করে তোলেন। নিশ্চয় এর মাঝে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে।আল-কুরআন, সূরা আর রুম : ২৪।

৭) মানব সৃষ্টি তত্তে¡র তথ্যদান

মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে আল কুরআনের ঘোষণা ঃ

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ أَزْوَاجًا

আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, পুনরায় বীর্য থেকে, তারপর তোমাদেরকে করেছেন জোড়া জোড়া।আল-কুরআন, সূরা ফাতির : ১১।              

أَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِنْ مَنِيٍّ يُمْنَى  ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّى فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى

তবে কি সে জরায়ুতে নিক্ষিপ্ত এক বিন্দু শুক্রবিন্দু নয়। পরে সে শোণিত পিন্ড হয়েছিল। অতঃপর তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অনন্তর তিনি তা হতে যুগলরূপে পুরুষ নারী সৃষ্টি করেছিলেন।আল-কুরআন, সূরা কিয়ামাহ : ৩৯।                                                    

৮) মহাকাশ ও এর গঠন সম্পর্কে তথ্যদানঃ

অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহাকাশের স্তর আবিষ্কৃত হলেও চৌদ্দশত বছর পূর্বে মহাকাশ ও এর গঠন সম্পর্কে আল­াহ তাআলা আল-কুরআনে বর্ণনা করেন-

وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادً

আমি তোমাদের ওপরে সুদৃঢ় সপ্ত আকাশ নির্মাণ করেছি।আল-কুরআন, সূরা নাবা : ১২। 

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَوَاتٍ طِبَاقًا

তোমরা কি লক্ষ্য করছ না যে, আল­াহ কি রূপে স্তরে স্তরে সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন।আল-কুরআন, সূরা নূহ : ১৫।

إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ

নিশ্চয় আমি দুনিয়ার আকাশকে নক্ষত্র শোভায় সুশোভিত করেছি।আল-কুরআন, সূরা-সাফফাত : ৬।               

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا

আকাশকে আল­াহই কায়েম রেখেছেন অদৃশ্য বস্তুর সাহায্যে যেমন তোমরা দেখছ।আল-কুরআন, সূরা রাদ : ২।

৯) সমুদ্র সম্পর্কে তথ্যদান

সমুদ্রের পানির মধ্যে ভাগ রয়েছে বিজ্ঞানীরা বহুপরে এসে জেনেছেন, কিন্তু আল কুরআনে সমুদ্র সম্পর্কে চৌদ্দশ বছর পূর্বে সমুদ্রের অবস্থান সম্পর্কে উলে­খ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ فَبِأَيِّ آَلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ

তিনি ছেড়ে দিয়েছেন দুই দরিয়াকে। তারা পরস্পর মিলিত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। অতএব, তোমরা উভয়ই তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মুক্তা ও প্রবাল।আল-কুরআন, সূরা আর রাহমান : ১৯-২২।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন ঃ

وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَحْجُورًا  

আল্লাহ তিনিই, যিনি দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন। একটি মিষ্ট সুপেয় এবং অপরটি নোনা খর। তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন একটি আড়াল। এটি এমন একটি প্রাচীর, যা লংঘন নিষিদ্ধ।আল-কুরআন, সূরা আল ফুরকান : ৫৩।

এ আয়াতগুলোতে আমরা সাগরের অবস্থা জানতে পারি। বিশেষত মিঠা পানি থেকে কি কি জিনিস পাওয়া যায়। যেমন- মাছ, ব্যক্তিগত অলংকারাদি যথা- প্রবাল ও মুক্তা। মোহনায় দুই নদীর কিংবা দুই সাগরের পানির একত্রে মিশে না যাওয়া আল্লাহ তাআলার কুদরতের একটি বড় নিদর্শন। মিসিসিপি ও ইয়াংসির মত বৃহদায়তন নদ-নদীর বেলাতেও এ অদ্ভূত বিষয় লক্ষণীয়। এদের মিঠাপানি যেখানে সমুদ্রে পড়েছে সেখানে সমুদ্রের লোনা পানির সাথে তা মিশে যায় নি।

বাংলাদেশের রাজবাড়ী বহরনামে একটি জায়গা আছে, যেখানে পদ্মা ও মেঘনা মিশেছে কিন্তু পানি একত্রে মিশে যায়নি। হাজারো বছর তাআলাাপাশি প্রবাহিত হওয়া সত্তে¡ও না। মেঘনার পানি কুচকুচে কালো, পদ্মার পানি সাদা ঘোলাটে। ডঃ মুহাম্মদ শফিকুল­াহ, উলূমুল কুরআন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪৫।

চলবে

লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা

ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান

সেক্রেটারি:

শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে- 

ইমাম ও খাতিব:

মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে

সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:

নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে

 প্রিন্সিপাল:

আর রাহমান একাডেমি ইউ কে

পরিচালক:

আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে

📞07476136772 📞 07476 961067

nrahmansky@googlemail.com

Arrahmaneducationtust@gmail.com

https://www.facebook.com/Imam.Nurur

https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/

https://www.youtube.com/user/nurur9


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here