।। গিয়াস উদ্দিন খান (পংকি)।।
শিক্ষাকে মানুষের মনের মধ্যে যিনি প্রোথিত করার দায়িত্ব পালন করেন তিনি
শিক্ষক। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। আজ যাকে নিয়ে লিখতে বসেছি তিনি হচ্ছেন একজন
গুণী শিক্ষক মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান। মাওলানা ওলিউর রহমানের পিতার নাম মরহুম
পীর মোঃ মোশাররফ আলী, মাতার নাম: মরহুমা তেরাবান বিবি।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাঁর জন্ম ১লা জুলাই ১৯৪৩ ইংরেজি। গ্রামের নাম
তেলিকোনা (বর্তমান নামঃ এলাহাবাদ) ডাকঃ ইসলামাবাদ-৩০৮৮, উপজেলাঃ বিশ্বনাথ, জিলাঃ
সিলেট।
মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান ১৯৬৮ ইংরেজি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর
সহধর্মিনীর নাম তাছমিয়া রাবেয়া আখতার। তিনি তিন ছেলে এবং দুই মেয়ের জনক। বড় মেয়ের
নাম ফাতেমা আখতার নার্গিস, দ্বিতীয় সন্তান হিসাবে প্রথম
ছেলে মাওলানা নুরুর রহমান, তৃতীয় সন্তান হিসাবে দ্বিতীয়
ছেলে মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, চতূর্থ সন্তান হিসাবে দ্বিতীয়
মেয়ে নাজমা আখতার রায়হানা, পঞ্চম এবং সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান
পীর ক্বারী মোঃ আমিনুর রহমান। মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান ১ম থেকে কামিল (হাদীস)
১৯৬৭ ইংরেজি পরিক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ১৯৬৮ ইংরেজি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা
থেকে ফিকাহ্ বিভাগে মুফতি হিসাবে সনদ অর্জন করেন।
১৯৭০ সালে মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান তেলিকোনা ফুরকানিয়া হাফিজিয়া
মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করেন। মাদ্রাসায় এবতেদায়ি ও হিফজ বিভাগ চালু করেন। ১৯৭৪
সালে মাদ্রাসাকে দাখিল পর্যন্ত বর্ধিত করেন এবং
নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন জামেয়া-ই-ইসলামিয়া তেলিকোনা দাখিল মাদ্রাসা।
১৯৮৪ সালে মাদ্রাসাটি দাখিল পর্যন্ত এমপিও ভূক্ত করেন। ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসাটি
আলিম পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় এবং মাদ্রাসাটির নাম করণ করা হয় এলাহাবাদ ইসলামিয়া
আলিম মাদ্রাসা। ২০০৪ ইংরেজিতে তিনি মাদ্রাসাটি আলিম পর্যন্ত এমপিও ভূক্ত করেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৯০ সালে ছহিশুদ্ধভাবে পবিত্র
কোরআন শিক্ষার জন্য এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় দারুল কেরাত ইত্তেহাদুল
কুররা বাংলাদেশ শাখা প্রতিষ্টা করেন। কর্ম জীবনের শুরুতে মাওলানা এ টি এম ওলিউর
রহমান বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার প্রথম
প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ছিলেন।
তিনি যে সময় স্কুল এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখনকার সময় এলাকায়
শিক্ষিতের হার কম ছিল। তাঁর স্কুল এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করার উদ্দেশ্য ছিল
এলাকায় শিক্ষিতের হার বাড়নো ও এলাকাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা।
মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমানের মতো আমার আব্বাও একজন শিক্ষক ছিলেন। আমার
আব্বা মোঃ নছির উদ্দিন খাঁন যখন ফুলচন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক
ছিলেন তখন একদিন বদলী হয়ে তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যান প্রধান
শিক্ষক হিসাবে। আমার আব্বার সাথে আমিও চলে যাই তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে। ভর্তি হই দ্বিতীয় শ্রেণিতে। আমি যখন তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
যাই তখন মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান স্যার ও তাঁর সহধর্মিনী রাবেয়া আখতার
তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তারা ছিলেন আমার আব্বার
সহকর্মী। আব্বার সহকর্মী হওয়াতে মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমান স্যারকে আমি চাচা বলে
সম্বোধন করতাম এবং তাঁর সহধর্মিনীকে চাচী বলে সম্বোধন করতাম। তারা দুজনই আমাকে খুব
আদর করতেন। যা আমি জীবনে ভূলার মতো নয়।
আব্বা তেলিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক বছর শিক্ষকতা করার সুবাদে
দু-পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। একে অন্যের বাড়িতে প্রায় সময়
যাওয়া আসা হতো এবং বর্তমানেও হয়। স্কুলের পাশেই ছিল তাদের বাড়ি। চাচীর হাতের
রান্না ছিল খুবই মজাদার। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিলাম তখনতো ছোট ছিলাম। চাচা
আমাকে হাতে ধরে প্রায়ই আদর করে নিয়ে যেতেন তাদের বাড়িতে এবং চাচী তাঁর হাতের
রান্না করা মাজাদার খাবার আমাকে খেতে দিতেন। আজ তাঁরা দুজনই পৃথিবী থেকে চির বিদায়
নিয়েছেন। তাদের স্মৃতি আজ বার বার মনে পরে। আল্লাহ তা’আলা চাচা ও চাচীকে জান্নাতের
উচ্চ মকাম দান করুণ। মহান পাক রাব্বুল আল-আমিনের কাছে এই কামনা করি।
পরিশেষে এটাই বলবো মাওলানা এ টি এম ওলিউর রহমানের মতো ব্যাক্তির সমাজ ও দেশকে শিক্ষিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজও খুবই প্রয়োজন।
লেখক পরিচিতি:
গিয়াস উদ্দিন খান (পংকি), গ্রাম-খাজাঞ্চি গাঁও, ডাক-পরগণা
বাজার, ইউনিয়ন-১নং লামাকাজি ইউনিয়ন, উপজেলা-বিশ্বনাথ, জেলা-সিলেট।
বর্তমান ঠিকানাঃ
১৩/২ নূরানী, সুবিদবাজার,
সিলেট-৩১০০, এয়ারপোর্ট, সিলেট
0 coment rios:
You can comment here