Saturday, October 31, 2020

আবদুল মালিক চৌধুরীর নূতন ইমাম এবং প্রাসঙ্গিক কথা

 

।। বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল।।

সমসাময়িক সমাজ জীবনের সঙ্গে উপন্যাসের সম্পর্ক যতটা নিবিড়, অন্য কোনো শিল্প-আঙ্গিকের সম্পর্ক ততটা নয়। সময়ে সময়ে জীবনের সময়ের যে পটপরিবর্তন ঘটে, উপন্যাসে স্বাভাবিকভাবে তার ছাপ পড়ে। নূতন ইমামএকটি নির্দিষ্ট সময়ে রচিত হলেও এর কাহিনি, চরিত্র এবং সমাজ-বাস্তবতার চিত্র এখনও প্রত্যক্ষ। এর আবেদন অতীত থেকে বর্তমান, বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে ফুরিয়ে যাবার নয়।

ইমামদেরকে সমাজের নেতা বলা হয়। কিন্তু তাঁদের কারও কারও চরিত্রে Leader ship -এর গুণাগুণ নেই। যোগ্যনেতারা সম্মান-সমীহপ্রাপ্ত হলেও বেশির ভাগ ইমামদের এই সমাজে তেমন গুরুত্ব নেই। তাঁদের করুণার চোখে দেখা হয়। ঔপন্যাসিক আবদুল মালিক চৌধুরী (১৮৯১-১৯৬৭) এক নতুন ধারার ইমামকে নিয়ে সমাজ-সংস্কারের চমৎকার কাহিনি চিত্রিত করেছেন। ইমামদের জীবনযাপনকে একটি চিরকালীন বিন্দুতে লেখক প্রতিষ্ঠিত না-করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। এই ইমাম মসজিদের চার দেয়ালের মধ্য থেকে শুধু জিগির-আজগার, কোরান তেলাওয়াত আর খুতবা-ওয়াজই করেন না; তিনি প্রচলিত সমাজের কুসংস্কার দূর করে বৃহৎ জীবনের পুনর্গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি পল্লি উন্নয়ন সমিতি গঠন করেন; গ্রামে ডিসপেনসারি স্থাপন করেন, পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সবকিছুতেই তিনি শ্রমনিবেদন করেন। নিজেও মাদ্রাসা পাস আলীগড় থেকে থিয়লজিতে এমএ ডিগ্রি নিয়ে মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত হন। নতুন ইমাম এমনই একজন মননসমৃদ্ধ ডায়নামিক পুরুষ। উপন্যাসের নায়িকাও আদর্শ সৌন্দর্য-শীলা। ধর্মকর্ম করেও নারী জাগরণের জন্য মনপ্রাণ নিবেদন করেছেন। সম্পাদনা করেছেন জানানা নামক মাসিক পত্রিকা।

আবদুল মালিক চৌধুরী ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে নূতন ইমাম রচনা করেন। পন্ডিত লেখক আহমদ উজ-জামানের ভাষায় : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর দেশের মুসলমানদের পশ্চাৎগামী অবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে কীভাবে পুনর্গঠন পুনর্বিন্যাস করতে হবে তারই যেন এক অবকাঠামো লেখক তৈরি করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। এতে উপন্যাসের রস কিন্তু ব্যাহত হয়নি এই কারণে যে, জীবন কারোরই কখনও কঠোর রুক্ষ এক নৈতিক অবকাঠামোর মধ্যেই চাপা পড়ে থাকতে পারে না। এর অর্থ এই নয় যে নৈতিক অবকাঠামোর ভাঙা বা উপেক্ষা করা। এই আদর্শবান সুপুরুষ যৌবনদীপ্ত ইমাম জামাল আহমদের জীবনেও প্রেম এসেছিল। কিন্তু প্রেম বর্তমানের কলুষিত প্রেম নয়। প্রেম যে কত পুতঃপবিত্র তা জামাল আহমদ উপলব্ধি করেন যখন মোতাওয়াল্লি বাড়ির সুশিক্ষিতা বিনম্র বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে সুলতানার প্রেম তার দিল্কে এক বেহেশতি খুশবুতে পূর্ণ করে দিল। এটা উপন্যাসের একান্ত অতি প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবেই এসেছে, নতুবা নতুন ইমাম সাহেবের আদর্শ জীবনবোধ পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারতো না।...কিন্তু সে ঘটনা আমাদের আলোচ্য বিষয়ে মুখ্য নয়। ওই উপন্যাসটির মূল লক্ষ্য হলো সমাজ সংস্কার।

ঔপন্যাসিক আবদুল মালিক চৌধুরীর নূতন ইমাম একটি অসাধারণ উপন্যাস। তাঁর আরও একটি উপন্যাস আছে। পরদেশী (১৯২২ খ্রিস্টাব্দে যা স্বপ্নের ঘোর নামে প্রকাশিত হয়) ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে এই নিবন্ধকার সম্পাদিত গ্রন্থটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এবং প্রসঙ্গ: পূর্বকথাশিরোনামে সম্পাদকীয় রচনা সংযুক্ত হয়। লেখকের জীবন তথ্যটি এখানে তা উদ্ধৃতযোগ্য বলে মনে করি :

বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বাংলাসাহিত্যে যে-জন হাতেগোনা মুসলিম সাহিত্যিক সুস্থ ধারার সাহিত্যচর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন তাদেরই অন্যতম আবদুল মালিক চৌধুরী। সাহিত্যচর্চায় আত্মনিবেদিত হলেও তাঁর কর্মপরিধি ছিল বহুধাব্যাপ্ত। তিনি ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক পরিচয়ের বাইরেও ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবক, সংগঠক জনপ্রতিনিধি।

দুই.

আবদুল মালিক চৌধুরীর জন্ম ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর পূর্বভাগে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতা আবদুল করিম চৌধুরী ব্রিটিশ আমলে পুলিশ বিভাগে সাব-ইনস্পেকটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হবিবুন্নেসা খাতুন চৌধুরী। দু-ভাই তিন বোনের বড় আবদুল মালিক চৌধুরীর অনুজ আবদুল মতিন চৌধুরী (১৮৯৫-১৯৪৮)- ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তিনি একাদিক্রমে শিক্ষা, সমাজসেবা, সাংবাদিকতা রাজনীতি অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত প্রশংসিত ছিলেন। জিন্নাহর ডানহাত হিসেবে পরিচিত আবদুল মতিন চৌধুরীর সঙ্গে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আসামে মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠায় জড়িত আবদুল মতিন চৌধুরী আসাম ক্যাবিনেটে কয়েকদফা মন্ত্রী (১৯৩৮-১৯৪৬) ছিলেন। তাঁর তিন বোনÑআশরাফুন্নেসা খাতুন চৌধুরী, আজিজুন্নেসা খাতুন চৌধুরী রকিবুন্নেসা খাতুন চৌধুরী।

আবদুল মালিক চৌধুরী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় জেলার কাটিগড়া মধ্য ইংরেজি স্কুল পাস করার পর হবিগঞ্জ হাইস্কুলে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। অতঃপর ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯১১ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা কলেজ সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্লিডারশিপ কোর্স অধ্যয়নের জন্য কলকাতা রিপন কলেজে ভর্তি হন। কোর্স সমাপনের পর ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিন মৌলভীবাজার হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। একই বছর তিনি শিলং গমন করেন এবং সেখানেই শিলং সেক্রেটারিয়েটে চাকুরি লাভ করেন।

প্রথম জীবনে আবদুল মালিক চৌধুরী শিলঙে এক খাসিয়া রমণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সে সম্পর্কের তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিলÑএমরিলদা, নসিলদা প্লিনিস। এখনও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম শিলঙে বসবাস করছে এবং শিক্ষা, চাকুরি রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অবশ্য আবদুল মালিক চৌধুরীর সঙ্গে খাসিয়া রমণীর সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল।

আবদুল মালিক চৌধুরী দ্বিতীয় বিয়ে করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কানিশাইলের ছাবিহা খাতুন চৌধুরীকে। ছাবিহা খাতুন চৌধুরী ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল মালিক চৌধুরী ছাবিহা খাতুন চৌধুরী দম্পতির ছয় সন্তানÑশওকতুল ইসলাম চৌধুরী, ফাহমিদা চৌধুরী (মরহুম), আনোয়ারা খাতুন চৌধুরী (মরহুম), উম্মে হালিমা চৌধুরী (মরহুম), উম্মে একলিমা চৌধুরী আফরোজা চৌধুরী। আবদুল মালিক চৌধুরী ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর ভাদেশ্বর পূর্বভাগের নালিউরি গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে সেখানেই সমাহিত করা হয়।

তিন.

আবদুল মালিক চৌধুরী ছাত্রজীবনেই সাহিত্যচর্চা জনসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষাআন্দোলন পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অবশ্যস্বীকার্য। তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে হবিগঞ্জে একটি মুসলিম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় হাইস্কুলের প্রধান -িত গঙ্গাগতি দাসকে সভাপতি করে একটি মুসলিম ছাত্র সমিতি গঠন করেনÑযেখানে প্রতি সপ্তাহে ছাত্রগণ বইপুস্তক পাঠ করত। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে তিনি নিজ গ্রামে ভাদেশ্বর উন্নতি বিধায়িনী সভানামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতির উদ্যোগে ভাদেশ্বরের প্রসিদ্ধ পীর মুহম্মদ আবদুল্লাহ- নামে আবদুল্লাহ লাইব্রেরিপ্রতিষ্ঠিত হয়। এবং সমিতির প্রচেষ্টায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন কলকাতা চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর নাছিরউদ্দীনের অনুদানে ভাদেশ্বরে একটি হাইস্কুল ঢাকাদক্ষিণ থেকে ভাদেশ্বর পর্যন্ত রাস্তা নির্মিত হয়।

আবদুল মালিক চৌধুরী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে শিলঙে মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন’-এর শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। স্যার সলিমুল্লাহ খান বাহাদুর চৌধুরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিলং মুসলিম ইউনিয়ন’-কে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ধ্বংসোন্মুখ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে পুনরুজ্জীবিত করেন; যার উদ্যোগে সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ অরপেনএজপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আবদুল মালিক চৌধুরী মুসলিম চাকুরিজীবী ব্যবসায়ীদের সহায়তায় খাসিয়া জাতির মধ্যে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শিলং ইসলাম মিশনপ্রতিষ্ঠা করেন; যার পরিবর্তিত নাম হয় আসাম ইসলাম মিশন সোসাইটি।১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিলঙে সমগ্র আসাম প্রদেশের মধ্যে প্রথম মুসলিম ব্যাংক ক্রিসেন্ট ব্যাংকপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দীর্ঘকাল এই ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিলঙে শিলং মুসলিম লাইব্রেরি লাবান লিটারারি ইনস্টিটিউটপ্রতিষ্ঠা করেন। আবদুল মালিক চৌধুরী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট-এর প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, উক্ত অধিবেশনে আসামের দুই মন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরী মৌলবি মনাওর আলী এবং সিলেটের বিখ্যাত ভ্রাতৃত্রয় সৈয়দ মোস্তফা আলী, সৈয়দ মুর্তাজা আলী সৈয়দ মুজতবা আলী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় ঔপন্যাসিক আবদুল মালিক চৌধুরীকে দিয়ে। অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। একই বছরে আবদুল মালিক চৌধুরী- উদ্যোগে শিলঙে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়; যার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিন বছরের জন্য তিনি শিলং মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকুরি থেকে অবসরগ্রহণ করে স্থায়ীভাবে তিনি পূর্ব-ভাদেশ্বরের নালিউরি গ্রামে নিজস্ব বাড়ি পাকভিলা বসবাস শুরু করেন।

আবদুল মালিক চৌধুরী তাঁর অনুজ আবদুল মতিন চৌধুরীর স্মৃতিরক্ষার্থে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভাদেশ্বর পূর্বভাগে আবদুল মতিন মেমোরিয়েল হল লাইব্রেরিপ্রতিষ্ঠা করেন। সিলেটের গ্রামাঞ্চলে বোধহয় এটিই প্রথম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৫৩Ñ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভাদেশ্বর নাছিরউদ্দীন হাইস্কুলের সেক্রেটারি ১৯৫৯Ñ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভাদেশ্বর ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।

চার.

আবদুল মালিক চৌধুরী একটি সাহিত্যসমৃদ্ধ পরিম-লে জন্মেছিলেনÑমুসলমান কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস প্রেম-দর্পণ-এর রচয়িতা আর্জুমন্দ আলী আবদুল মালিক চৌধুরীর জন্মস্থান একই। সাহিত্যসাধনার দিক থেকে তিনি ছিলেন মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, সৈয়দ এমদাদ আলী, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মুন্সি রেয়াজুদ্দীন, ফজলুল করিম সাহিত্যবিশারদ, ইয়াকুব আলী চৌধুরী প্রমুখের অনুসারী। তৎকালীন সাময়িকী বাসনা, কোহিনূর, নব-নূর, আল-ইসলাহ, আল-ইসলাম- তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ম্যাগাজিনে তাঁর হজরত শাহজালাল (.)-এর জীবনভিত্তিক প্রবন্ধ শ্রীহট্টকাহিনিপ্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধ প্রকাশের পর ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ ভদ্র তাঁর লেখার প্রশংসা করেন এবং তাঁকে উৎসাহ প্রদান করেন। শিলঙে অবস্থানকালে মুসলমান চাকুরিজীবীদের সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করার জন্য তিনি শনি-বাসরিক সভানামে সাহিত্যমজলিশ চালু করেন। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আসরেই পরদেশী’ (পূর্বনামÑস্বপ্নের ঘোর) উপন্যাসের একটি করে পরিচ্ছেদ পাঠ করতেন; যা শ্রোতা কর্তৃক প্রশংসিত হতো। আসাম ইসলাম মিশন সোসাইটি’- মুখপত্র দি মেসেঞ্জারপত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর সর্বমোট চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলÑ

. পরদেশী (পূর্বনামÑস্বপ্নের ঘোর, উপন্যাস-১৯২২ খ্রি.),

. হজরত শাহজালাল (প্রবন্ধÑ১৯২৪ খ্রি.),

. কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (যুগ্মসম্পাদনা)

. নূতন ইমাম (উপন্যাস-১৯৫৪ খ্রি.) তাঁর অপ্রকাশিত তিনটি গ্রন্থের নামÑ

. বীরকেশরী নাদির শাহ,

. উম্মাহাতুল মুসলিমিন

. ভাদেশ্বরকাহিনি।

নূতন ইমাম (১৯৫৪) উপন্যাসের ভাব-ভাষা-শব্দ এবং বাক্য-বিন্যাস অক্ষত রাখা হয়েছে। আমরা আধুনিক পাঠকের কথা চিন্তা করে কেবল বানানরীতির সমতা রক্ষা করতে সচেষ্ট থেকেছি। প্রসঙ্গত আবারও প্রাবন্ধিক আহমদ উজ-জামানের বক্তব্য উপস্থাপন করে নিবন্ধটির সমাপ্তি টানতে চাই: নূতন ইমাম এখন আর নবসংস্করণে বেরুবার উপায় নেই। তাই বলে এই বইগুলো বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসের ইতিহাস থেকে কি বাদ পড়ে যাবে? তা না হলে বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস যারা লিখছেন তাতে সিলেটের এই বিশিষ্ট লেখকের নাম নেই কেন? লেখকের স্বপ্নের ঘোর (পরিবর্তিত নাম পরদেশী’) নূতন ইমাম-এর পূর্ণতথ্যসহ তাঁর জীবনী এই দেশের সাহিত্য ইতিহাসে নেই কেন? আর্জুমন্দ আলীর নাম তাঁর লেখা সম্পর্কে যে একটু তথ্য কোনো কোনো সাহিত্যের ইতিহাসে আছে তা কি পর্যাপ্ত? না এঁরা তৎসময়ের আসাম বেঙ্গলের মুসলমান লেখক বলে বর্তমান বাংলাদেশের লেখক নন? কিংবা সিলেটের গবেষকরাই এঁদের প্রতি উদাসীন কেন? এটা অবজ্ঞা, উপেক্ষা না অজ্ঞতা?’ 

লেখক : প্রাবন্ধিক, প্রকাশক সংগঠক


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here