Tuesday, November 10, 2020

নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি: ইলমুল হাদীসে তাঁর অবদান

 

।। প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান।।

সারসংক্ষেপ(Abstract )

-------------------------------------------------------

Siddiq Hasan Khan (14 October 1832 – 26 May 1890) was a both celebrated and controversial leader of India's Muslim community in the 19th century, often considered to be the most important Muslim scholar of the Bhopal State.[2] He is largely credited alongside Syed Nazeer Husain with founding the revivalist Ahl-i Hadith movement, which became the dominant strain of Sunni Islam throughout the immediate region.[ Nawab Siddiq Hasan Khan  Rahmatullah Alaihi(1832-90), in writing the cultural and intellectual history of imperialisms.

 It brings his biography, journeys and intellectual forays together to show how he used the temporal moment of the mid 19th century `age of revolts', and the spatial connectivity offered by British and Ottoman imperialisms and re-configured them to his own particular interests. Locating Siddiq Hasan in the connected histories of the British and Ottoman Empires, it views his in-house cosmopolitanism as a form of public conduct that was shaped by Islamic learning that cultivated urbane civility as Muslim universalist virtuous conduct. This was a form of cosmopolitanism enabled by imperial networks, informed by pre-colonial webs of interaction between India and West Asia, and deeply rooted in the scriptures.

ভূমিকা (introduction )

-------------------------------------------------------------------

আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ইলমী জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ।তিনি ইতিহাসের এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।   তাওহীদ-সুন্নাহর   প্রচারক এবং শিরক-বিদআতের মূলোৎপাটনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন।

  ১৩০০ হিজরির শেষ দিকে ভারত উপমহাদেশে যে ইলমের বিপ্লব সাধিত হয়েছিল সিদ্দিক হাসান খান এর অবদান অনস্বীকার্য । কেননা, তিনি ইলমের ময়দান থেকে ভূপালের রাজ সিংহাসনে আরোহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।

 নিজ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, উদ্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কুরআন-সুন্নাহ এবং বিশুদ্ধ আকীদা নির্ভর শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে শুধু ভারত উপামহাদেশ নয় বরং বিশ্বের মধ্যে বিরল। আলোচ্য প্রবন্ধে আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এবং ইলমুল হাদীসে তার অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

নাম ও  পরিচিতি

(Name and contact )

------------------------------------------------------------

নাম: সিদ্দীক খান, পিতার নাম: হাসান, দাদার নাম: আলী আসগর। তাঁকে কান্নুজী, ভুপালী, হুসাইনী এবং বুখারীও বলা হয়।

وهو الشيخ محمد صديق بن حسن بن علي بن لطف الله القِنَّوجِي البخاري الحسيني نزيل بهوبال (صديق حسن خان)

আবু আল-তাইয়ে্যব সিদ্দিক বিন হাসান বিন আলী, ইবন লুতফুল্লাহ আল-হুসেনি আল বুখারী আল-কানুজি, ভূপালী(লোককাহিনী অনুসারে ধারানগরের রাজা ভুজা কর্তৃক একাদশ শতকে এই নগরী প্রতিষ্ঠিত। রাজার নামানুসারে ভোপাল পরিচিত ছিল ভুজপাল হিসেবে। আরেকটি মতানুসারে ভোপাল রাজার নামে ভোপালের নামকরণ করা হয়েছে।[৬][৭][৮] ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে তা হয়ে যায় ভোপাল। কিন্তু এর কোন প্রত্নতাত্ত্বিক সত্যতা পাওয়া যায়নি।

আধুনিক ভোপালের প্রতিষ্ঠাতা দোস্ত মোহাম্মাদ খানের সমাধি আধুনিক ভোপালের প্রতিষ্ঠাতা মোঘল সেনাবাহিনীর আফগান যোদ্ধা দোস্ত মোহাম্মদ খান (১৭০৭ ১৭৪০)।তাকে বলা হয় ভোপালের প্রথম নবাব। ১৭০৮ সালে তিনি বেরাসিয়া এস্টেট লীজ নেন; সাথে আরো কতগুলো এলাকা যুক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানের তিলোত্তমা ভোপাল নগরীকে)

নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান এর জন্ম গ্রহণ

(Birth of Nawab Siddique Hasan Khan)

------------------------------------------------------

 নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ২৩ জুমাদাল উলা, রবিবার, ১২৪৮হিজরী মোতাবেক ১৭ অক্টোবর ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের বান্স ব্রেলী

(a city in Bareilly district in the Indian state of Uttar Pradesh. It is the capital of Bareilly division and the geographical region of Rohilkhand. The city is 252 kilometres (157 mi) north west of the state capital, Lucknow, and 250 kilometres)

 শহরে তার নানার গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নানা অত্র অঞ্চলের একজন স্বনামধন্য মুফতী ছিলেন। অত:পর তার পিতা সেখান থেকে তাঁকে নিজ এলাকা কান্নুজে নিয়ে আসেন। তাঁর জন্ম এবং তার লালন-পালন

ولد في بلدة ” بريلي ” موطن جده من جهة الأم عام ( 1248 هـ ) ونشأ في بلدة “قِنَّوْج” موطن آبائه بالهند في حجر أمه يتيمًا على العفاف والطهارة وتلقى الدروس في علوم شتى على صفوة من علماء قِنَّوْج ونواحيها وغيرهم.

شيوخه وتلاميذه

তিনি (১২৪৪ হিজরিতে) মায়ের পাশে তাঁর দাদার জন্মভূমি ব্রিলি শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভারতে তাঁর পিতাদের স্বদেশ কন্নুজ শহরে বেড়ে ওঠেন, তাঁর মায়ের পাথরে, পবিত্রতা ও পবিত্রতার এক অনাথ, এবং তিনি কানজ ও অন্যান্য উপাখ্যানের এক উচ্চবিত্তের কাছ থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞানের পাঠ গ্রহণ করেছিলেন।

সিদ্দিক হাসান খান এর  বেড়ে উঠা(Siddique Hasan Khan's Growing Up )

---------------------------------------------------------------

ছয় বছর বয়সে  সিদ্দীক হাসানে এর পিতা । হাসান. মৃত্যুবরণ করেন। (১২৫৪ হিজরী মোতাবেক ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দ)। যার কারণে তাঁর মা তাঁকে নিয়ে পুনরায় নানার বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি সেখানে মায়ের স্নেহ-মমতায় প্রতিপালিত হতে থাকেন। তার মাতা সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি  গভীর যত্ন নেন এবং তার জন্য নিয়োগ করেন একজন কুরআনের শিক্ষক।

তার বড় ভাই আহমদ বিন হাসান রাহমাতুল্লাহ আলতাকে ইসলাম ও বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা দেন।   তিনি কান্নুজের শাইখ মুহাম্মদ ইয়াকুবের নিকট    নিকটও জ্ঞানার্জন করেন। তাছাড়াও  ফজলুর রহমান মুরাদাবাদী এবং নিজ ভাই আহমদ হাসান প্রমুখের নিকট জ্ঞানার্জন করেছেন।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফজলুর রহমান মুরাদাবাদী প্রায় কান্নুজে যাতায়াত করতেন এবং তাদের বাড়িতে দেখা করতে যেতেন। কেননা তিনি তাঁকে এবং তার ভাই আহমদ হাসানকে অনেক স্নেহ করতেন।

সিদ্দীক হাসানের পিতা ও দাদার ধর্মীয় অবস্থা

(Religious status of Siddique Hasan's father and grandfather )

---------------------------------------------------------------------

আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান  রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর পিতার জন্মস্থান কান্নুজ নামক  এলাকায়।

কান্নুজ এলাকা শিয়াদের অধীনে চলে যায়। যার কারণে শিয়া প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তার দাদা আলী আসগর শিয়া মতাবলম্বন করেন! সেই সাথে তার দু ছেলে লুতফুল্লাহ এবং আযীযুল্লাহও একই পথের পথিক হয়! কিন্তু তার তৃতীয় ছেলে সিদ্দীক খান এর পিতা হাসান (যে ছিল আলী আসগারের প্রথম স্ত্রীর সন্তান) কে আল্লাহ তাআলা শিয়াদের প্রভাব থেকে হেফাজত করেন।

পরববর্তীতে আলী আসগর এবং তার অন্যান্য ছেলেরা কান্নুজ থেকে হায়দ্রাবাদে চলে আসেন এবং শিয়াদের আনকুল্যে ইমারতের বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন হয় আমীর খেতাবে ভূষিত হন। ফলে তারা ক্ষমতা, অর্থ-প্রতিপত্তি, রাজ প্রাসাদ সবই অর্জন করেন। অবশেষে সিদ্দীক হাসানের দাদা আলী আসগর অঢেল সম্পদ রেখে ১২১৮ হিজরী মোতাবেক ১৮০৩ খৃষ্টাব্দে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি শিয়া মতের অনুসারী হওয়ার কারণে হাসান তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

, সিদ্দীক এর পিতা হাসান কান্নুজে ১২০০ হিজরী মোতাবেক ১৭৮৫ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তার নিজ শহর কান্নুজ এবং লক্ষ্ণৌতে জ্ঞানার্জন করেন। অত:পর দিল্লী চলে যান। সেখানে শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহ. এর ছেলে শাহ আব্দুল আযীয, শাহ আব্দুল কাদির ও শাহ রফীউদ্দীন এর নিকট ইলম অর্জন করেন।

 তিনি দুই মুজাহিদ ইমাম আহমদ ইরফান ও ইসমাঈল শহীদ এর সাহচর্য লাভ করে তাদের সাথে জিহাদ করেন। তিনি তাওহীদের প্রচার-প্রসার, বিদআতের মূলোৎপাটন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে উক্ত ইমামদ্বয়ের সহযোদ্ধা ছিলেন।

ইলম অর্জন করতে দেশ ভ্রমণ

(Traveling the country to acquire knowledge)

---------------------------------------------------

আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে বহির্জগত ভ্রমণ করেন। । প্রথমে ফারখাবাদ অত:পর কানপুর গমন করে সেখানকার কতিপয় আলেমদের নিকট দ্বীন শিক্ষা করেন।

তিনি অত্র এলাকায় বিখ্যাত আলিম আহমদ ইরফান শহীদ এর বড় বড় শাগরেরদের নিকট ইলম অর্জন করেন।

তারা সিদ্দীক হাসান খানকে তার পিতার মর্যাদার কারণে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। তার জ্ঞান ও যোগ্যতা তাদের বিমোহিত করে।

অত:পর তিনি কানপুর থেকে ১২৬৩হি:/১৮৪৬ খৃষ্টাব্দে দিল্লী গমন করেন। অত:পর সেখানকার বিচারপতি কাজী বশীর কান্নুজীর নিকটে গিয়ে আরবী ভাষার জ্ঞান অর্জন করেন ।সেখানে মানতিক, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বহু বিষয়ে পারদর্শী শাইখ সদরুদ্দীন খান দেহলবীর নিকটে বিভিন্ন বিষয়ে ইলম অর্জন করেন। তিনি সদর উদ্দিন দেহলবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর নিকটে  চার খণ্ড সহীহ বুখারীও পড়েন।

তিনি  নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানকে ইজাযা (লিসান্স) প্রদান করেন। প্রায় দু বছর তিনি তার সাহচর্যে থাকেন। নাযির হুসাইন দেহলবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি নিকট থেকেও সামান্য কিছু জ্ঞানার্জন করেছেন।

তারপর দিল্লীতে বেশ কতিপয় জ্ঞানী-গুণী, শিল্প-সাহিত্যিক ও আলেম-উলামার সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোগল সম্রাট মুহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বাহাদুর জাহ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

দিল্লীতে থাকা অবস্থায় তিনি কিছু বইয়ের অনুলিপি তৈরি করেন। আরবী ভাষায় মীযান কিতাবের ব্যাখ্যা লেখেন এবং সেখানকার কিছু ছাত্রকে  পাঠ দান করেন। তিনি মক্কা, মদীনা ও ইয়ামেন সফর করেন।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ (Married)

--------------------------------------------------------

সিদ্দীক হাসান খান এর পিতা দিল্লী থেকে ফিরে এসে নিজ শহর কান্নুজের মুফতী শায়খ মুহাম্মদ আউয আল উসমানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে  আবদ্ধ হন।

 শায়খ মুহাম্মদ আউয আল উসমানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ছিলেন অত্যন্ত পরহেযগার ও দুনিয়া বিমুখ বিখ্যাত আলিম। তার রচিত বেশ কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে।

আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি তার পিতার জীবনী তার আবজাদুল উলূম সহ বেশ কতিপয় গ্রন্থে  উল্লেখ করেছেন। এ সকল আলোচনা থেকে তার পিতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

তিনি তিন মেয়ে ও দুই ছলে মৃত্যুবরণ  করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন, সিদ্দীক হাসান   অপরজন আহমদ হাসান। তিনিও সু সাহিত্যিক ও  সালাফী আদর্শের বড় আলেম ছিলেন। সিদ্দীক হাসান খান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এখানে ভুপালের মন্ত্রীর মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ১২৭৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে মন্ত্রী জামালুদ্দীন তার ছোট মেয়ে যাকিয়া বেগমের সাথে সিদ্দীক হাসানের বিয়ে দেন। তিনি ছিলেন বিধবা। সিদ্দীক হাসান খান তাঁর সহধর্মীনীর প্রশংসা করতেন। এ বিয়ের মাধ্যমে তিনি ভুপালের আমীর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করেন।

তার এই সহধর্মীনী থেকে তিনি দু সন্তানের জনক হন। একজনের নাম আবুল খায়ের মীর নুরুল হাসান খান তৈয়ব। অপরজনের নাম সৈয়দ শরীফ মীর নূরুল হাসান খান তাহির।

সিদ্দিক হাসান খান এর শিক্ষকবৃন্দ (TEACHER'S OF NOWAB  Siddiqe Hasan Khan )

--------------------------------------------------------

*১) তার বড় ভাই আল্লামা, আহমেদ বিন হাসান বিন আলী।

*২) - পুণ্যবান শেখ মুফতি মুহাম্মদ সদর আল-দীন খান আল-দহলভী।

*৩) - শাইখ আল-কাদী হুসেন বিন মুহসিন আল-সাবি আল-আনসারী, আলেম মুহাম্মদ বিন নাসের আল-হজমি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

* ৪) শাইখ মুয়াম্মার আল-সালিহ আব্দ আল-হক বিন ফাদ্লাল্লাহ আল হিন্দি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ।

*৫) শাইখ মুহাম্মদ ইয়াকুব, মাক্কী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

৬)আল-কাদী মুহাম্মদ বিন আলী আল-শওকানি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ।

৭)বশীর কান্নুজী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

৮) আল্লামা ইরফান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

 সিদ্দিক হাসান খান এর ছাতবৃন্দ(Students of Nawab Siddiqe Hasan Khan )

-------------------------------------------------

* ১-) ইয়াহইয়া বিন মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন হাসান আল-হাজ্মী,

* ২) শেখ নুমান খায়ের আল-দীন আল-আলোসী, বাগদাদের মুফতি।

৩) মুলায়ম নূর রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

৪) মির্জা হুসাইন আহমদ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

গ্রন্থ রচনা

ইমাম সিদ্দিক হাসান খান ভুপালী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে আল কুরআন, হাদীস, আকীদাহ দর্শনসহ অনেক ব্যাপারে। তার মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকটি গ্রন্থ আলোচনা করা হয়েছে -

*الحطة في ذكر الصحاح الستة

**الإدراك لتخريج أحاديث رد الأشراك

*عون الباري بحل أدلة البخاري.

*غنية القاري في ترجمة ثلاثيات البخاري.

فتح المغيث بفقه الحديث

*أربعون حديثاً في فضائل الحج والعمرة

*إتحاف النبلاء المتقين بإحياء مآثر الفقهاء المحدثين

أبجد العلوم،

**إفادة الشيوخ بمقدار الناسخ والمنسوخ.

*الجنة في الأسوة الحسنة بالسنة

تميمة الصبي في ترجمة الأربعين من أحاديث النبي

ترجمان الوهابية.

الاحتواء على مسألة الأستواء.

الإذاعة لما كان وما يكون بين يدي الساعة.

الإكسير في أصول التفسير.

إكليل الكرامة في تبيان مقاصد الإمامة.

الانتقاد الرجيح في شرح الأعتقاد الصحيح.

بغية الرائد في شرح العقائد.

 البلغة في أصول اللغة.

العَلَم الخفّاق في عِلْم الاشتقاق.

غِصن البان المورق بمحسنات البيان.

بلوغ السول في أقضية الرسول.

ثمار التنكيت في شرح أبيات التثبيت.

حسن الأسوة بما ثبت من الله ورسوله في النسوة.

حجج الكرامة في آثار القيامة.

الحرز المكنون من لفظ المعصوم المأمون.

حصول المأمول من علم الأصول.

خبيئة الأكوان في افتراق الأمم على المذاهب والأديان.

*دليل الطالب على أرجح المطالب.

*ذخر المحتي من آداب المفتي.

*رحلة الصديق إلى البيت العتيق.

*الروضة الندية في شرح الدرر البهية.

*رياض الجنة في تراجم أهل السنة.

*السحاب المركوم في بيان أنواع الفنون وأسماء العلوم. (وهو *القسم الثاني من كتاب أبجد العلوم).

سلسلة العسجد في ذكر مشايخ السند.

شمع أنجمن في ذكر شعراء الفرس وأشعارهم. باللغة الفارسية.

ضالة الناشد الكئيب في شرح المنظوم المسمى بتأنيس الغريب

ظفر اللاظي بما يحب في القضاء على القاضي.

العبرة مما جاء في الغزو والشهادة والهجرة.

فتح البيان في مقاصد القرآن. (أربعة مجلدات).

الفرع النامي من الأصل السامي.

قصد السبيل إلى ذم الكلام والتأويل.

قضاء الأرب من مسألة النسب.

قطف الثمر من عقائد أهل الأثر.

الدين الخالص.

كشف الألتباس عما وسوس به الخناس. (باللغة الهندية).

لف القماط على تصحيح بعض ما أستعملهُ العامة من المولد والمعرب والأغلاط.

لقطة العجلان مما تمس إلى معرفته حاجة الإنسان.

مثير ساكن الغرام إلى روضات دار السلام.

مسك الختام شرح بلوغ المرام. (مجلدين).

منهج الوصول إلى اصطلاح أحاديث الرسول.

الموعظة الحسنة بما يخطب بهِ في شهور السنة.

نشوة السكران من صهباء تذكار الغزلان.

نيل المرام من تفسير آيات الأحكام.

هدية السائل إلى أدلة المسائل.

الوشي المرقوم في بيان أحوال العلوم، المنثور منها والمنظوم. (وهو القسم الأول من كتاب أبجد العلوم).

يقظة أولي الأعتبار مما ورد في ذكر النار وأصحاب النار.

الإقليد لأدلة الأجتهاد والتقليد.

التاج المكلل من جواهر مآثر الطراز الآخر والأول، (وهو كتاب سير وترجمة 543 عالِم من علماء الإسلام).

الأربعون حديثاً متواترة، مطبوع في بهوبال.

ربيع الأدب، (مخطوط).

الروض البسام، (مجهول).

الغنة ببشارة أهل الجنة، وهو كتاب في التصوف.

الكلمة العنبرية في مدح خير البرية، (وهو قصيدة في مدح النبي محمد أوردها أبنه النواب السيد محمد علي خان في (مآثر صديقي) صفحة 28 - 32).

اللواء المعقود لتوحيد الرب المعبود.

تخريج الوصايا من خبايا الزوايا، طبع في مصر.

تكحيل العيون بتصاريف العلوم والفنون، (مخطوط).

التذهيب شرح التهذيب.

إحياء الميت بذكر مناقب أهل البيت، (مخطوط).

সিদ্দিক হাসান খান এর মৃত্যুবরণ

 (Death of Siddique Hasan Khan)

--------------------------------

তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।  গুরুতর অসুস্থ হয়ে  অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অসুস্থতার জন্য তাঁর আঙ্গুলগুলি এমনভাবে সরে গিয়েছিল যেন তিনি লেখায় ব্যস্ত ছিলেন, । যখন, মধ্যরাত  তখন একটি শব্দ তার জিহ্বায় উচ্চারিত হয় আমি আমার প্রিয় রবের সাক্ষাৎকরতে পছন্দ করি।  তিনি একবার বা দু'বার বলেছিলেন।এবং এটি ছিল ১৩০৭ হিজরিতে জুমদা আল-আখিরার  ২৯তম রাতে। তখন তাঁর বয়স ৫৯ বছর, তিন মাস ছয় দিন।, তাঁর  জানাজার নামাজে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি ছিল না। তার জানাজার নামাজ তিনবার আদায় করা হয়।   তিনি তাকে সুন্নতের পথে দাফন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তা কার্যকর করা হয়েছিল। বহু গ্রন্থ সংকলক আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান রাহমাতুল্লাহ আলাইহি ১৩০৭ হিজরি সালে মৃত্যুবরণ করেন।  মৃত্যু সময় তার দুই পুত্র যথা

সাইয়িদ আবু আল খায়ের মীর নূর আল-হাসান খান আল-তৈয়িব শরীফ আবু আল-নসর মীর আলী হাসান খান। 

সিদ্দিক হাসান খান এর উপর গবেষণা (Research on Siddique Hasan Khan)

----------------------------------------------------------------

আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বহু থিসিস রচিত হয়েছে। অনেক গবেষক তার জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছেন ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি হল,

*ড. সৈয়দ ইজতেবা নদবী

 (سيد محمد اجتبا  الندوي  ( الأمير صديق حسن خان القنوجي موسس في الحديث الحديث في الهند )

) ১) বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আব্দুর রাযযাক দায়লামী ১৯৯৩ সনে রচনা করেছেন সিদ্দীক হাসান খান কান্নুজী এবং তার রচিত ফাতহুল বায়ান ফী মাকাসিদিল কুরআন শীর্ষক তাফসীর গ্রন্থের উপর একটি সন্দর্ভ।

২) কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আহমদ বিন মুহাম্মদ আল হামাদী ১৯৮৭ সালে থিসিস রচনা করেছেন তাফসীরের ক্ষেত্রে সিদ্দীক হাসান খান এর মূলনীতির উপরে।

৩) ডক্টর আহমদ মুহাম্মদ  আখতার খান সিদ্দীক হাসান খান এর আকীদা-বিশ্বাসের উপর থিসিস রচনা করেছেন।

৪) ডক্টর আলী আল আহমদ থিসিস রচনা করেছেন দাওয়াত ও ইহতিসাব তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ক্ষেত্রে সিদ্দীক হাসান খান এর অবদান বিষয়ে।

৫) ডক্টর রাজিয়া হামিদ তার জীবনীর উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।

৬) সিদ্দীক হাসান খান এর জীবনীর  উপর শাইখ আব্দুল হামীদ রহমানীর এর লেখা প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে  ভারতের জামিয়া সালাফিয়ার ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত হয়েছে।

 ৭) এ ছাড়াও তার জীবনীর উপরে ডক্টর শাইখ মহিউদ্দীন আলওয়ায়ীর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে (৪৭ ও ৪৮তম সংখ্যায়)।

৮) আল্লামা মুহাম্মদ ইজতিবা নদভী তার জীবনীর ব্যাপারে মূল্যবান বই লিখেছেন। এটি তার জীবনীর ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো রচনা।

উপসংহার (concussion )

-----------------------------------

উপরের আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি ৫৯ বছর জীবন অতিবাহিত করেছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির সংখ্যা চারশতের কাছাকাছি। তিনি তাফসির, হাদীস, ফিকহ, উসূলে ফিকহ ও আকীদার উপর অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন । রাজ পরিবারের সদস্য হয়ে জ্ঞান অর্জন ও গবেষনার কাজের যে অবদান রাখতে সক্ষম হন তা সত্যিই বিরল।  তিনি হাদীস ও ফিকহ চর্চা করে অনেক বিষয়ে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। সিহাহ সিত্তার উপর তথ্য নির্ভর গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিদআত থেকে মানুষকে সুন্নাহর পথে আসার আহ্বান জানান। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বিশুদ্ধভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন ।


লেখক:

প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

 বাংলাদেশ


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here