Friday, December 4, 2020

সত্যের সন্ধানে পর্ব 20

সত্যের সন্ধানে, পর্ব-২০ রিজাল শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ ইমামগণের সংক্ষিপ্ত জীবনী

ইবন মাজাহ (রহ.)

সত্যের সন্ধানে পর্ব-১৯ পড়তে ক্লীক করুন এখানে

।। ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান।।

ইমাম ইবনে মাজা তার আসল নামের চেয়ে এই নামেই অধিক পরিচিত। কোনো কোনো লেখকের মতে, ‘মাজাতার মাতার নাম এবং তার পিতার নাম আবুল্লাহ হলেও মাতার নামেই তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন। ইবন মাজা বহু শায়েখের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন এবং হাদীসশাস্ত্রেও ইমাম রূপে খ্যাতি অর্জন করেন।ইবন মাজাহ এর হাদীসের উস্তাদগণের মধ্য ইমাম মালেক রাহমাতুললাহ 6 ও তার সমসাময়িক মুহাদ্দেসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন। তিনি প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনুল মোগাল্লাস, ইবরাহীম ইবনুল মোনজের প্রমুখ হতেও ইমাম ইবনে মাজা হাদীস শ্রবণ করেন। তার ছাত্রদের মধ্যে আবুল হাসান কাত্তান, ঈসা ইবনে আবহার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই ছিলেন হাদীসশাস্ত্র বিশারদ।

لم يكن معدودا في ( الكتب الستة ) حتى جاء ابن طاهر المقدسي رحمه الله فضمه لكثرة زوائده عليهم، فقد صنف وزاد، وأجاد ورتب، وسبق بمقدمة لطيفة جميلة عن السنة وفضلها... نعم هو الإمام أبو عبد الله محمد بن يزيد بن ماجه الربَعي القَزويني الحافظ رحمه الله (٢٧٣)هـ . ( وماجه) لقب لوالده وتُكتب بالهاء وصلا ووقفا مثل: سِيده ومَنده، وهذا اختيار العلامة ابن خَلّكان رحمه الله، وجوّز بعضهم التاء فيها.

  আলোচ্য প্রবন্ধে ইমাম ইবন মাজাহ এবং ইলমুল হাদীসে তার অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

 ইবন মাজাহ নাম ও পরিচিতি :

 ইমাম ইবনু মাজাহ -এর প্রকৃত নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম ইয়াযীদ, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি الحافظ الكبير (আল-হাফিযুল কাবীর), নিসবতী নামআর-রাবঈ, আল-কাযভীনী। তিনি ইবনু মাজাহ নামেই সমধিক পরিচিত। তার পুরো বংশপরিক্রমা হল-

 الحافظ الكبير المفسر أبو عبد الله محمد بن يزيد بن عبد الله بن ماجه الربعي القزويني

‘*আল-হাফিযুল কাবীর আল-মুফাসসির আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাজাহ আর-রাবঈ আল-কাযভীনী

*ইবনু মাজাহ-এর মাজাহনামটি কার উপাধি, এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাজাহ তার পিতার উপাধি, আবার কেউ বলেন, তার দাদার উপাধি। এ মতবিরোধ নিরসনকল্পে তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত ফিল কামূসগ্রন্থের প্রণেতা বলেন,لقب والده لا جده والصحيح هو الأولমাজাহ তাঁর পিতার উপাধি, দাদার নয়। আর বিশুদ্ধ অভিমত হল প্রথমটি। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রাহমাতুললাহ আলাইহি বুসতানুল মুহাদ্দিসীন গ্রন্থে লিখেছেন, মাজাহ ছিল তার মায়ের নাম। তিনি আরো বলেন, ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদের ছিফাত, আব্দুল্লাহর নয়। (কাযভীন) :

 ইবন মাজাহ এর জম্ম গ্রহন

তিনি ২০৯ হিজরী মোতাবেক ৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের প্রসিদ্ধ শহর কাযভীনে জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলীফা ওসমান বিন আফফান - রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফতকালে এ শহরটি বিজিত হয়।এ শহরের প্রথম গভর্নর ছিলেন  বারা ইবনু আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু ।

ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি এর শিক্ষাজীবন

ইমাম ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি নিজ দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। এরপর তিনি কুরআনুল কারীম হিফয সম্পন্ন করেন। অতঃপর উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং হাদীসসংগ্রহের জন্য তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ ও জনপদের যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইমাম্ ইবন মাজাহ  রাহমাতুললাহ আলাইহি ২৩০ হিজরী মোতাবেক ৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শহরের মুহাদ্দিসগণের নিকটে গমন করেন। ড. আবু যাহু হাদীস ওয়াল মুহাদ্দিসনগ্রন্থে বর্ননা করেন,

وارتحل لكتابة الحديث وتحصيله إلى الري، والبصرة، والكوفة وبغداد، والى الشام ومصر والحجاز، وأخذ الحديث عن كثير من شيوخ الأمصار-

ইমাম ইবনু মাজাহ হাদীসলিপিবদ্ধকরণ এবং শিক্ষার্জনের জন্য রায়, বসরা, কূফা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, হেজায প্রভৃতি দেশ ও জনপদে ভ্রমণ করেন এবং বহু মনীষীর নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন।তিনি অসংখ্য মুহাদ্দিসগনের নিকট থেকে মাসজিদৈর দারসে অংশ গ্রহণ করেন।

نشأ ابن ماجه في جو علمي، ومن ثَمَّ شبَّ محبًّا للعلم الشرعي عمومًا، وعلم الحديث خصوصًا؛ فحفظ القرآن الكريم، وتردد على حلقات المحدثين التي امتلأت بها مساجد قزوين، حتى حصَّل قدرًا كبيرًا من الحديث.

এভাবে তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।

শিক্ষার জন্য দেশ ভ্রমণ

তিনি হিজরি ২০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদীস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেন।তার হাদীস অন্বেষণ করার জন্য অনেক এলাকায় সফর করেন। যেমষ-

ইরাক,

সরকারিভাবে ইরাক প্রজাতন্ত্র, একটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র। বাগদাদ ইরাকের রাজধানী। ইরাকের দক্ষিণে কুয়েত এবং সৌদি আরব, পশ্চিমে জর্ডান, উত্তর-পশ্চিমে সিরিয়া, উত্তরে তুরস্ক এবং পূর্বে ইরান (কোর্দেস্তন প্রদেশ (ইরান)) অবস্থিত।

বসরা,

 ইরাকের একটি শহর। এই শহরটি কুয়েত এবং ইরানের মধ্যবর্তী শাত-ইল-আরবে অবস্থিত। ২০১২ সালের গণনা অনুযায়ী এখানকার লোকসংখ্যা ১৫ লক্ষ। যদিও এখানকার পানির গভীরতা তেমন নেই, তবুও বসরা ইরাকের প্রধান সমুদ্র বন্দর; এটি উম কসর বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।)

 কুফা

 ইরাকের একটি শহর। শহরটি বাগদাদ হতে ১৭০ কিলোমিটার (১১০ মা) দক্ষিণে এবং নাজাফ হতে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মা) উত্তরপূর্বে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত। ২০০৩ সালে শহরটির আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ১১০,০০০।)  এ নদীটি পশ্চিম এশিয়ার একটি নদী। এটি তুরস্কতে উৎপত্তি লাভ করে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দজলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে এবং শাত আল আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। ফোরাত ও দজলা নদীর পানি ব্যবহার করেই প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল। গ্রিক নাম মেসোপটেমিয়া এই স্বাক্ষরই বহন করছে; শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "দুই নদীর মাঝে"। এখানেই প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং আসিরিয় সভ্যতাগুলি বিকাশ লাভ করেছিল

বাগদাদ

বাগদাদ ইরাকের রাজধানী। দজলা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরটি ৮ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে এটি রাজধানীতে পরিনত হয়। প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই বাগদাদ মুসলিম বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। অন্যতম কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (যেমন, বাইতুল হিকমাহ) সহ বহুবিধ জাতিগোষ্ঠি ও বহুবধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের আতিথ্যের জন্য এই শহরটি "জ্ঞানের শহর" হিসাবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিল।)

সিরিয়া,

(উর্বর সমতলভূমি, উচ্চ পর্বত এবং মরুভূমির একটি দেশ। সিরিয়ায় বিভিন্ন জাতিগত এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী: সিরিয়ান আরব, গ্রীক, আর্মেনিয়ান, আসিরিয়ার, কুর্দি, কার্কাসিয়ান, মানডিয়ান্স এবং তুর্কি সহ। ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর অন্তর্ভুক্ত: সুন্নি, খ্রিস্টান, আলাউই, ডুরজ, ইসমাঈল, মান্দিয়া, শিয়া, সালাফি, ইয়াসীদ ও ইহুদীরা। সুন্নি বৃহত্তম ধর্মীয় গ্রুপ তৈরী করেন সিরিয়ায়।)

মিসর

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে ও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি আন্তঃমহাদেশীয় ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারী নাম মিশর আরব প্রজাতন্ত্র। প্রাচীন যুগে মিশর সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সভ্যতা ছিল।)

 রায়

এই শহরটি এখন ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণ অবস্থিত। আমিরুল মুমিনিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময় এ  এলাকা বিজিত হয়।

,الري (بالفارسية:شهر ری) هي مدينة تاريخية أضحت اليوم جزءً من الجنوب الشرقي لمدينة طهران في إيران.فتحت الري في عهد الخليفة الثاني عمر بن الخطاب وذلك بقيادة نعيم بن مقرن، ويقال أن زرادشت قد خرج منها. كما ينسب إليها عدد من علماء المسلمين ومنهم فخر الدين الرازي صاحب تفسير مفاتيح الغيب، والكيميائي محمد بن زكريا الرازي والفلكي

 হেজাজ

(হেজাজ হল বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে জর্ডান, পূর্বে নজদ ও দক্ষিণে আসির অবস্থিত। এর প্রধান শহর জেদ্দা। তবে ইসলামের পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার জন্য এই অঞ্চল অধিক পরিচিত। ইসলামের পবিত্র স্থানের অবস্থানের কারণে হেজাজ আরব ও ইসলামি বিশ্বে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমে তিহামাহ থেকে পূর্বের নজদকে পৃথক করেছে বলে এই অঞ্চলের এরূপ নাম হয়েছে। এটি "পশ্চিম প্রদেশ" বলেও পরিচিত ]

ويُشار إلى ارتحاله وسفره إلى بلدان عديدة مثل: العراق، والبصرة، والكوفة، وبغداد، ومكة المكرمة، والشام، ومصر، والري، وكان سفره إلى هذه البلدان من أجل كتابة الحديث النبويّ الشريف

আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ও নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী তাদের গ্রন্থে লিখেছেন,

        ارتحل إلى العراق والبصرة والكوفة وبغداد ومكة والشام ومصر والري لكتابة الحديث،

অর্থাৎ হাদীস সংগ্রহের জন্য ইমাম ইবন মাজাহ ইরাক, বসরা, কূফা, বাগদাদ, মক্কা, সিরিয়া, মিসর, রায় প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন

ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,

سمع بخراسان والعراق والحجاز ومصر والشام وغيرهما من البلاد

তিনি খোরাসান, ইরাক, হেজায, মিসর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশের মনীষীদের নিকট থেকে হাদীস শুনেছেন। হাদীস সংগ্রহের জন্য কষ্টকর দেশ ভ্রমণের পরে তিনি ১৫ বছরের অধিক সময় ইলম চর্চায় নিমগ্ন থাকেন। ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি দেশ-বিদেশের অনেক মনীষীর নিকট শিক্ষাগ্রহণ ও হাদীছ সংগ্রহ করেছেন।

ইবন মাজাহ এর শিক্ষকবৃন্দ

.ইমাম ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি এর অসংখ্য উস্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-

* হাফেয আলী ইবনু মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী

*, জুরারাহ ইবনুল মুগাল্লিস,

* মুসয়াব ইবনু আব্দুল্লাহ আয-যুবাইরী

,*সুয়াইদ ইবনে সাঈদ

*, আব্দুল্লাহ ইবনু মুআবিয়া আল-জুমাহী,

* মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ

*, ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আল-হিফমী,

* মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে নুমাইর,

* আবু বকর ইবনু আবু শায়বা

*, হিশাম ইবনু আম্মার,

* ইয়াযীদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইয়ামামী,

*আবু মুছআব আয-যুহরী

*, বিশর ইবনু মুআয আল-আকাদী,

* হুমাইদ ইবনু মাসয়াদা,

*আবু হুযাফা আস-সাহমী,

* দাঊদ ইবনু রুশাইদ,

*আবু খায়ছামা,

আব্দুল্লাহ ইবনু যাকওয়ান

*আল-মুকবেরী

*, আব্দুল্লাহ ইবনু আমের ইবনে বাররাদ

*, আবু সাঈদ, আল-আমাযা,

*আব্দুর রহমান ইবনু ইবরাহীম দুহাইম

*, আব্দুস সালাম ইবনু আছেম আল-হিসিনজানী, *ওছমান ইবনু আবু শায়বা প্রমুখ।

এ ছাড়া তিনি বহু মুহাদ্দিসগনের নিকট থেকে হাদীস শিক্ষাগ্রহণ ও সংগ্রহ করেন।

ইমাম ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি তার সবচেয়ে প্রিয়তম উস্তাদ আবু বকর ইবনু আবু শায়বা রাহমাতুললাহ আলাইহি এর নিকট থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন।

ইবন মাজাহ ছাত্রবৃন্দ

ইমাম ইবনে মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি জীবন অনেক স্থানে হাদীসের দারুস প্রদান করেছেন। তার অসংখ্য ছাত্র বিভিন্ন এলাকায় আছেন। ইমাম ইবনু মাজাহ -এর অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন

* ইবরাহীম ইবনু দীনার আল-হাওশাবী,

* আহমাদ ইবনু ইবরাহীম আল-কাযভীনী

 (তিনি হাফেয আবু ইয়ালা আল-খলীলীর দাদা), *আবুত তাইয়্যেব আহমাদ ইবনু রাওহিন আল-বাগদাদী

*আশ-শারানী, আবু আমর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ *ইবনে হাকীম আল-মাদীনী

*আল-ইস্পাহানী,

 *ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ আল-কাযভীনী

*, জাফর ইবনু ইদরীস,

*হোসাইন ইবনু আলী ইবনে ইয়াযদানিয়ার, *সোলায়মান ইবনু ইয়াযীদ আল-কাযভীনী

*, আবুল হাসান আলী ইবনু ইবরাহীম ইবনে সালামা আল-কাযভীনী,

*আলী ইবনু সাঈদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-আসকারী,

* মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা আছ-ছাফফার প্রমুখ।

মৃত্যুবরণ

সুনানু ইবন মাজাহ এর সঙ্কলক ইমাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাজা আল কাজভীনী রাহমাতুললাহ আলাইহি হিজরি ২৭৩ সালের ২২ রমজান মতান্তরে ২৭ রমজান ইন্তেকাল করেন।

*: ইবনু মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি -এর মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।

* ইবনু কাছীর ও জামালুদ্দীন ইউসুফ আল-মিযযী তাঁর মৃত্যু তারিখ, জানাযা ও দাফনকার্য সম্পাদন সম্পর্কে বলেন,

 كانت وفاة ابن ماجة يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَدُفِنَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ لِثَمَانٍ بَقِيْنَ مِنْ رَمَضَانَ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسَبْعِيْنَ وَمِائَتَيْنِ عَنْ أَرْبَعٍ وَسِتِّيْنَ سَنَةً،

 ইবনু মাজাহ ২৭৩ হিজরী ২২ রামাযান মোতাবেক ২০ নভেম্বর ৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। পরের দিন মঙ্গলবার তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

*কেউ কেউ বলেন, তিনি ২৭৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

*ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি ২৭৩ হিজরী রামাযান মাসে মৃত্যুবরণ করেন। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক বিশুদ্ধ।অধিকাংশ জীবনী আলোকগন এই মত ব্যক্ত করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনে আলী কেহেরমান  রাহমাতুললাহ আলাইহি তাঁকে গোসল করান। এবং ইবরাহীম ইবনে দীনার রাহমাতুললাহ আলাইহি তার জানাযায় ইমামতি করেন। তার ভাই  আবু বকর ও আবু আব্দুল্লাহ এবং স্বীয় পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ কবরে লাশ নামান।

সুনান ইবন মাজাহ  রাহমাতুললাহ আলাইহি এর মর্যাদা

সুনান ইবন মাজাহ গ্রন্থের মর্যাদা কুতুবুস সিত্তার মধ্যে ষষ্টতম। সর্ব প্রথম এ কাজটি করেন আবুল ফাদল মুহাম্মদ ইবন তাহির আল মাকদিসী রাহমাতুললাহ আলাইহি ।এর পূর্ব পর্যন্ত الكتب الخمسة হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল ।তিনি এ ব্যাপারে কিতাব রচনা করেন, " أطراف الكتب الستةএ ছাড়া شروط الأئمة الستة

এর পর হাফেয আব্দুল গনি মাকদেসী রাহমাতুললাহ আলাইহি الكمال في أسماء الرجال গ্রন্থ রচনা করেন।

 منزلته بين سائر الكتب الستة

*: أول من أضافه إلى الخمسة مكملاً به الستة أبو الفضل محمد بن طاهر المقدسي ( ت 507هـ ) في كتابه " أطراف الكتب الستة

" ، وكذا في "شروط الأئمة الستة" له ،

* ثم الحافظ عبد الغني بن عبد الواحد المقدسي في كتابه" الكمال في أسماء الرجال" .

*قال ابن طاهر : ولعمري من نظر فيه علم منزلة الرجل : من حسن الترتيب ، وغزارة العلم ، وقلة الأحاديث ، وترك التكرار

* . وقال أيضاً : وسنن ابن ماجه وإن لم يشتهر عند أكثر الفقهاء فإن له بالري وما والاها من " ديار الجبل" و " قوهستان" .. شأن عظيم عليه اعتمادهم وله عندهم طرق كثيرة . اهـ

*وقال الحافظ ابن كثير : ابن ماجه القزويني صاحب السنن .. وهي دالة على عمله وعلمه وتبحره واطلاعه واتباعه للسنة في الأصول

والفروع

وقد اعتُبِر هذا الكتاب رابع السنن ، ومتمم الكتب الستة التي هي المراجع الأصول للسنة النبوية ، وكان المتقدمون يعدونها خمسة ، ليس فيها كتاب ابن ماجه ، ثم جعل بعضهم الموطأ سادسها ، ولما رأى بعض الحفاظ كتابه كتابًا مفيدًا قوي النفع في الفقه ورأى من كثرة زوائده أدرجه في الأصول وجعلوه آخرها منزلة ؛ وذلك لأنه تفرد بأحاديث عن رجال متهمين بالكذب .

অনেকে অভিযোগ করেন ইবন মাজাহ গ্রন্থে হাদীস মুনকার আছে সেজন্য মুতাকাদ্দিমীনরা মুযাত্তা মালিক ষষ্ঠ গ্রন্থ গন্য করেন।

ومما تقدم نعلم أن إطلاق الصحيح على أحد كتب السنن الأربعة أو عليها مجتمعة مع الصحيحين فيه تساهل ، لأن أحاديث الأربعة ليست كلها صحيحة ، نعم أكثرها صحيح أو حسن ، وربما كان ذلك سبب إطلاق الصحاح عليها من باب التغليب

মুল কথা হলো এই গ্রন্থটি একটি স্বতন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে كتاب الزوابد যা অন্য কোন গ্রন্থে নেই। এ ছাড়া এর সুন্দর বিন্যাস পদ্ধতির জন্য তাকে ষষ্ঠ গ্রন্থের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।

ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি এর ব্যাপারে আলিমদর অভিমত

ইমাম ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি এর ব্যাপারে আলিমগন ভুযূসী  প্রশংসা করেন। অনেকে তাকে সিকাহ হাফেয ও হাদীস নাকিদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যেমন -

أقوال العلماء

* قال أبو يعلى الخليل بن عبد الله الخليلي القزويني:

 «ابن ماجه ثقة كبير متفق عليه محتج به له معرفة وحفظ... كان عالماً بهذا الشأن صاحب تصانيف منها التاريخ والسنن، وارتحل إلى الشام والعراق ومصر وغيرها من البلاد»

* قال الحافظ شمس الدين الذهبي : « قد كان ابن ماجه حافظا ناقدًا صادقًا، واسع العلم، وإنما غض من رتبة سننه ما في الكتاب من المناكير

* قال شمس الدين ابن خلكان :  « كان إمامًا في الحديث عارفًا بعلومه وجميع ما يتعلق به

* قال ابن ناصر الدين : « محمد بن يزيد بن ماجَهْ: أحد الأئمة الأعلام، وصاحب السنن، أحد كتب الإسلام، حافظ ثقة كبير ]

* قال الحافظ ابن كثير :

 « محمد بن يزيد بن ماجَهْ، صاحب كتاب السنن المشهورة، وهي دالةٌ على عمله وعلمه، وتبحره واطلاعه، واتباعه للسنة النبوية في الأصول والفروع، ويشتمل على اثنين وثلاثين كتابًا،

 وألفٍ وخمسمائة بابٍ، ويحتوي على أربعة آلاف حديثٍ، كلها جِيادٌ، سوى اليسير»

*قال الذهبي: "سنن أبى عبد الله كتاب حسن لولا ما كَدَّرَهُ بأحاديث واهية ليست بالكثيرة".

*وقال الحافظ ابن حجر: "كتابه في السنن جامع جيد، كثير الأبواب والغرائب، وفيه أحاديث ضعيفة جدًّا حتى بلغني أن السَّرِيَّ كان يقول: مهما انفرد بخبر فيه هو ضعيف غالبًا. وليس الأمر في ذلك على إطلاقه باستقرائي

*، وفي الجملة ففيه أحاديث منكرة، والله تعالى المستعان". 

সুনানে ব্যাখ্যা গ্রন্থ

সুনানে ইবনে মাজা’-তে চার হাজার ৩৩৮টি হাদীস সঙ্কলিত হয়েছে। এতে এক হাজার পাঁচশ বাববা অধ্যায় সংযোজিত। এই গ্রন্থে সঙ্কলিত হাদীস সমূহের রাবীবা বর্ণণাকারীদের মধ্যে আবুল হাসান আল-কাত্তান প্রসিদ্ধ এবং তার বর্ণনাই প্রচলিত। সুনান ছাড়াও তার আরো রচনাবলি রয়েছে। ইমাম ইবনে মাজা রাহমাতুললাহ আলাইহি -এর চার লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। সুনানে ইবনে মাজা’-এর শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেন

আলাউদ্দীন মোগলতায়ী,

(شرح سنن ابن ماجة)

মুহাম্মদ আলী আল ইতিবি,

*(مشارق الأنوار الوهاجة)

*মুহাম্মাদ ইবনে আবদ আল-হাদী আল সানাদি,

*(كفاية الحاجة)

শিহাব আল-দিন আহমেদ বিন জয়ন আল-দিন আল-বুসায়েরী,

 *(زوائد السن

 সাফা আদাউই আদাবী ( .(إهداء الديباجة)

*আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী,

( مصباح الزجاجة)

*আল্লামা মিল্কি এবং শাহ

 আবদুল গণী

*আবু আল-হাসান আলী বিন আবদুল্লাহ ইবনে নিমা

*(شرح سنن ابن ماجه)

আল-আনসারী আল-আন্দালুসি

আবদ আল লতিফ আল বাগদাদী

(شرح سنن ابن ماجه)  মুলাক্কা,

.ওমর বিন আলী বিন আহমদ ইবনে আল-মুলাক্কান,

(ما تمس إليه الحاجة من شرح ابن ماجه)

শামস আল-দীন আবি আল-রিদা মুহাম্মাদ বিন হাসান আল-জুবাইদী

 (ما تدعو إليه الحاجة على سنن ابن ماجه)

হাসান মুহাম্মদ বিন আবদুল হাদি সানাদী,

.(كفاية الحاجة في شرح ابن ماجه)

 এছাড়া সুনানের হাশিয়া বা টীকা রচনা করেন। ইমাম আবু আবদুল্লাহ ইবনে মাজাহ

 ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি এর রচনাবলী

ইমাম শামসুদ্দিন আল-যাহাবীর  রাহমাতুললাহ আলাইহি এর মতানুসারে ইবনে মাজাহ-এর প্রধান রচনাগুলো হলো:

*সুনান-এ-ইবনে মাজাহ: প্রধান ছয়টি হাদীস গ্রন্থের একটি

*কিতাব আত-তাফসীর: আল-কুরআন-এর তাফসীর

*কিতাব আত-তারিক: ইতিহাস গ্রন্থ, মূলতঃ হাদীসের বর্ণনাকারীদের তালিকা

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, ইমাম ইবন মাজাহ রাহমাতুললাহ আলাইহি  ইলমুল হাদীস জগতে একজন কূতিবিদ্য মুহাদ্দিস ও মুফাসসির এবং ইতিহাসবিদ। তিনি যখন সুনান সংকলন করেন তখন আবু জুরআ  রাহমাতুললাহ আলাইহি তা দেখার পর এই গ্রন্থের ভয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই গ্রন্থ কারো কাছে পৌঁছলে হাদীস শাস্ত্রের অধিকাংশ পুস্তক অচল হয়ে যাবে। মুহাদ্দিসগন বলেন, বাস্তবিকই এই সংক্ষিপ্ত ও পুনরাবৃত্তি মুক্ত দিক থেকে এটি একটি অতুলনীয় গ্রন্থ। আবু জুরআ রাহমাতুললাহ আলাইহি বলেন, এতে কোনো হাদীস মওজু বা জাল আছে বলে তিনি মনে করেন না।

 সুনানে ইবনে মাজা’-তে চার হাজার ৩৩৮টি হাদীস সঙ্কলিত হয়েছে। এতে এক হাজার পাঁচশ বাববা অধ্যায় সংযোজিত। এই গ্রন্থে সঙ্কলিত হাদীস সমূহের রাবীবা বর্ণণাকারীদের মধ্যে আবুল হাসান আল-কাত্তান প্রসিদ্ধ এবং তার বর্ণনাই প্রচলিত।

চলবে

লেখক: বহুগ্রন্থ প্রণেতা

ইমাম মাওলানা এম. নুরুর রহমান

সেক্রেটারি:

শারীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোরড ও মিডল্যনড ইউ কে- 

ইমাম ও খাতিব:

মাসজিদুল উম্মাহ লুটন ইউ কে

সত্যয়ান কারী চেয়ারম্যন:

নিকাহ নামা সার্টিফিকেট ইউ কে

 প্রিন্সিপাল:

আর রাহমান একাডেমি ইউ কে

পরিচালক:

আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউ কে

📞07476136772 📞 07476 961067

nrahmansky@googlemail.com

Arrahmaneducationtust@gmail.com

https://www.facebook.com/Imam.Nurur

https://www.facebook.com/ARET.OR.UK/

https://www.youtube.com/user/nurur9

 


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here