Saturday, August 21, 2021

মাওলানা ওলিউর রহমান, আমার জানা একজন ভাল মানুষ

 


মাওলানা ওলিউর রহমান, আমার জানা একজন ভাল মানুষ

মো: ফরিদুল ইসলাম

আট বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছি মাওলানা ওলিউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায়। তখন তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। যে কোন একজন মানুষ সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষুদ্র নলেজ দ্বারা আমরাও কিছু বৈশিষ্ট্য বা আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তাকে ভাল বা মন্দ হিসাবে আখ্যায়িত করি। পরিবারসহ এ প্রতিষ্ঠানে আমি আসি ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিলে। তখন থেকেই তার ছোট ভাইয়ের বাসায় থাকছি। তিনি আমাদের আপনজনদের মতই দেখতেন এবং আমার সমস্যাগুলো নিজের সমস্যা মনে করে তা সমাধান করতেন। একসঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করেছি এবং অনেক সময় বাসাতে তাঁর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি তিনি আমাকে খুব ভালবাসতেন। 

আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নই। আমার কাছে মনে হয় রাজনীতিবিদরা সবসময় নিজের দলের দোষের ব্যাপারে কিছুটা অন্ধ। অন্য দলের দোষটা বড় করে দেখা এবং নিজ দলের দোষগুলো ছোট করে দেখা বা না দেখা প্রায় সব নেতাদের বৈশিষ্ট্য।

তিনি কোন দল করতেন তা আমাকে বলেননি আবার আমাকেও কোন দলের রাজনীতিতে যোগদানের উপদেশ বা দাওয়াত দেননি। তাই জামাতের রাজনীতির সাতে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা যা শুনেছি তা কতটা সত্য আমি জানি না তবে তিনি যে উদার ছিলেন তা আমি নিশ্চিত। কারন আমার নিয়োগের সময় আমার দলীয় পরিচয় তিনি জানতে চাননি এবং আমি দেখেছি এই প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শিক্ষক জামাত বিরোধী। এছাড়া মাদ্রাসার নতুন ভবনের জায়গা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের এক বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আশেপাশের বেশ কয়েকজন জামাত বিরোধী অধ্যক্ষদের তারঁ প্রশংসা করতে শুনেছি। আমি প্রথমে মাস্টার্স করি। এ কথা সত্য আমার এ ডিগ্রি দুটোর কোন সিলেবাসে কোরান বা হাদিসের কিছু নাই। তাই ইসলাম সম্পর্কে কোন হুজুরের দেওয়া ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে বললেই আমি ইসলামের কি জানি বলে প্রশ্ন তোলা হয়। আমি দুটি কারনে ইসলাম ধর্মের সঠিক তথ্য খুঁজি। 

১। প্রায় সকল বিষয়ে হুজুরদের মধ্যে মতপার্থক্য। 

২। কোন হুজুরের ভুল তথ্যের উপরে আমল করে পরকালে বিপদের আশংকা।

এখানে সার্টিফিকেট অর্জন বা অর্থ উপার্জন আমার উদ্দেশ্য নয় আমার এ চেষ্টার ফলস্বরূপ আমি যা যা বুঝতে পেরেছি তার মধ্যে একটা হল ‘পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ সবচেয়ে বড় পাপটাকে ইবাদত মনে করে আমল করে’ বিষটি বুঝিয়ে বলছি:- ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর বড় পাপ শিরক করা যা হিন্দুরা করে মুর্তিপুজার মাধ্যমে, খ্রিস্টানরা করে ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র বা আল্লাহ মনে করে। ইহুদিরা করেছিল বাছুর পুজা আর মুসলমানেরা করে কবর পুজা আর শয়তান এসব দেখে পায় মহা মজা। মনে রাখবেন আমি সবার কথা বলছি না বলছি বেশিরভাগ মানুষ। অদ্ভুত বিষয় হলো এই শিরকগুলো নিজেরা করে এবং কোটি কোটি টাকা খরচ করে তা প্রচার করে যাতে অন্যরা করতে উৎসাহিত হয় বা করে। আর প্রচারের খরচ বহন করে অনুসারিরা যারা কিনা পয়সা খরচ করছে কিন্তু পয়সা খরচ করেছে কিন্তু পরকাল বরবাদ হচ্ছে। আমরা জানি তওবা করলে আল্লাহ সব গুনাহ মাপ করে, কিন্তু যারা ইবাদত মনে করে শিরকের আমল করে তারা ত তওবার চিন্তা মনে আনবেই না কারন তাদের কাছে ত এটা পাপ নয়, ইবাদত। মিজান আহমদ নামে আমাদের কামিল পাশ এক কলিগ ছিলেন। তাঁর সাথে বেশ কিছুদিন সকালে হেটেছি। অফিসে ও মর্নিংওয়াকে তাঁর সাথে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেছি। মাওলানা ওলিউর রহমান সম্পর্কে তিনি এক মন্তব্যে বলেছিলেন যে তিনি (মাওলানা ওলিউর রহমান) শেরেক মুক্ত ইবাদত করতেন। আমার চাইতে বেশি সময় মিজান হুজুর তাঁর সাথে কাটিয়েছেন। আমার মনে হয় তাঁর মন্তব্যটি সঠিক। 

মাওলানা ওলিউর রহমান আজ আমাদের মাঝে দুনিয়াতে নাই। একদিন আমরাও থাকবনা। আমাদের পরে যারা আসবে তাঁরাও থাকবে না। কারন আল্লাহ বলেছেন-

“কুল্লুন নাফছি জা’ইকাতুল মাউত” অর্থ সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।

তাঁর গড়া দ্বীনি প্রতিষ্ঠান যে নামেই হোক কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাক, ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বমুখী বিদ্যা অর্জন করুক এবং আল্লাহ তা’লা তার সকল গুনাহ মাফ করে তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুক আমরা সেই দোয়াই করি।

অধ্যাপক মো: ফরিদুল ইসলাম 

প্রভাষক (ইংরেজি)

এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা।


শেয়ার করুন

Author:

0 coment rios:

You can comment here